
ডিম সংগ্রহকারী প্রস্তুত চলতি মাসের পূর্ণিমার জোঁ'তে বজ্রপাতসহ বৃষ্টির অপেক্ষায় হালদার কার্পজাতীয় মা মাছ"
শাহাদাত হোসেন সাজ্জাদ, রাউজান (চট্টগ্রাম)
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মিঠাপানির প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী। মেজরকার্প জাতীয় মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) প্রাকৃতিক প্রজননের জন্য এটি বিখ্যাত। চলছে ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুম। প্রতি বছর প্রজনন ভরা মৌসুমে এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে বজ্রপাতসহ মুষলধারে বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল নামলেই এই নদীতে কার্প জাতীয়( রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) মা মাছ ডিম ছাড়ে। এপ্রিল মাসের মধ্যে ডিম ছাড়ার দুইটি‘জো’ চলে যায়।তবে সামনের পূর্ণিমার জোঁ'গুলোতে মা মাছের ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশা করছে ডিম সংগ্রহকারীরা। নদীর সংযুক্ত খালে অবস্থানকারী মা মাছ গুলো এখন হালদা নদীতে ডিম ছাড়তে অবস্থান করছেন। বেড়েছে মা মা মাছের আনাগোনা। বজ্রপাতসহ পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল সৃষ্টি হলে নদীতে মা মাছ প্রথমে নমুনা ডিম, পরে পূর্ণাঙ্গ ডিম ছাড়বে বলে মনে করছেন তারা।সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, ডিম সংগ্রহকারীরা জাল আর নৌকা নিয়ে প্রস্তুত। কেউ নদীর পাড়ে মেরামত করছেন নৌকা, আর কেউ কেউ জাল ও নৌকা নিয়ে নদীর পাড়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। স্থানীয় শত শত ডিম সংগ্রহকারী এসব ডিম সংগ্রহ করে মাটির তৈরি কুয়া বা হ্যাচারীতে ফুটিয়ে উন্নত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পোনা উৎপাদন করে। ডিম সংগ্রহকারীরা জনান, ডিম থেকে রেণু ফোটানোর জন্য নদীর দুই পাড়ে সরকারিভাবে ৬টি হ্যাচারি রয়েছে। তবে কোনোটিতেই নেই জনবল। রাউজানের অংশে তিনটি হ্যাচারি মধ্যে দুইটি হ্যাচারি অকেজো হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। কাগতিয়া হ্যাচারি ও পশ্চিম গহিরা হ্যাচারি পরিত্যক্ত হলেও সচল রয়েছে একমাত্র মোবারকখীল হ্যাচারি। দু'টি হ্যাচারি পরিত্যক্ত হওয়ায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হ্যাচারিগুলোর কোনো সুফল পাচ্ছেননা ডিম সংগ্রহকারীরা। যার ফলে ডিম নষ্ট হওয়ার আশংকার পরও মান্ধাতা আমলের মাটির কুয়ার উপর নির্ভর থাকতে হচ্ছে বেশীরভাগ ডিম সংগ্রহকারীদের। ইতিমধ্যে মাটির কুয়া ও পাকা কুয়াগুলো সংস্কার করে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।মো. নরুল আলম নামের এক ডিম সংগ্রহকরী জানান, ৫০ বছর ধরে আমরা ডিম সংগ্রহ করছি। নৌকাসহ সবকিছু আমরা প্রস্তুিত করছি। এখন আশায় আছি। নদীতে কবে ডিম ছাড়বে। জানা গেছে, প্রতি বৎসর চৈত্র মাস থেকে শ্রাবণ মাসের মধ্যে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। প্রবল বর্ষণ ও বজ্রপাত হলে নদীতে পানির গভীরতা বৃদ্ধি পাবে৷ ফলে নদীতে পাহাড়ি ঢলের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়ে নদীর পানি ঘোলাটে হলে পানির গভীরতা তৈরি হয়ে সেখানে ডিম দেয় মা মাছরা। এদিকে হালদা নদীতে মাছের আগমন অবাদ ও নিরাপদ করতে রাউজান ও হাটহাজারী এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন মৎস্য বিভাগ ও হালদার নৌ পুলিশ সার্বক্ষণিক নদী পাহাড়া নদীতে অভিযান জোরদার করছে। নদীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি মাধ্যমে মা মাছের নিরাপত্তায় জোরদার করা হয়েছে। এবিষয়ে রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, হালদায় ডিম সংগ্রকারীরা প্রস্তুতি রয়েছে। হ্যাচারি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে আগামি পুর্ণিমার প্রথম জোতে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে। হালদা নদীর স্পনিং গ্রাউন্ডের পানির নমুনা পরীক্ষা করে হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, পানির বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক গুনাবলী আদর্শ মানের মধ্যে রয়েছে। তবে কার্পজাতীয় মাছের প্রজননের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার পানির তাপমাত্রা আদর্শ মানের একটু বেশি রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারী হ্যাচারী ও ডিম সংগ্রহকারীদের নানাবিধ প্রস্তুতি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ডিম সংগ্রহের প্রস্তুতি একেবারে শেষের দিকে। পরিবেশ অনুকুলে থাকলে অর্থাৎ বজ্রপাতসহ পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢল নেমে আসলে চলতি মাসের পূর্ণিমার জোঁ'তে (১০ মে- ১৪ মে) না হয় অমাবস্যার জোঁ'তে (২৫ মে- ২৯ মে) হালদা নদীতে মেজর কার্পজাতীয় মা মাছের ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের নেতিবাচক প্রভাবে বিগত কয়েক বছর হালদা থেকে সংগৃহীত ডিমের পরিমাণ ব্যাপকহারে কমেছে।তবে আশা করছি এই বছর প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকলেই হালদা নদী থেকে ডিমের পরিমাণ বাড়বে।