
রাসেলের বিদায়ী ম্যাচে নায়ক ইংলিস
স্পোর্টস ডেস্ক
সিড়ি বেয়ে নিচে নামলেন আন্দ্রে রাসেল। তাকে ‘গার্ড অব অনার’ দিতে মাঠে তখন দুই পাশে সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে দুই দল। দর্শকদের তুমুল করতালির ভেতর হাসিমুখে হাত তুলে এগিয়ে গেলেন রাসেল। অপেক্ষায় ছিলেন জ্যামাইকার ক্রীড়া, বিনোদন ও সংস্কৃতি মন্ত্রী অলিভিয়া গ্রেঞ্জ। সেখানে রাখা ছিল জ্যামাইকার পতাকায় মোড়ানো স্মারক। রাসেলকে নিয়ে সেই স্মারকের পর্দা তুললেন মন্ত্রী। ফ্রেম বাঁধাই করা ক্রিকেট ব্যাট ও বল, যেটি মূলত একটি গিটার! ধারাভাষ্যকার বললেন, “রেগে সঙ্গীতের ছন্দ আর ক্রিকেটের হৃৎস্পন্দন মিশে আছে একাকার হয়ে।”
ঘরের মাঠ থেকে বিদায় নিতে চেয়েছিলেন তিনি। জ্যামাইকা তাকে সেই সম্মান ও ভালোবাসা উপহার দিল। ক্যারিবিয়ান নায়কের বিদায়ী অর্ঘ্য ছিল ওই স্মারক আর নানা আয়োজন। পরে ব্যাট হাতে ২২ গজে নেমে তিনি ঝংকার তুললেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সিতে শেষবারের মতো। কিন্তু দুটি বিশ্বকাপজয়ী তারকার শেষটা রাঙানো হলো না জয়ে।
স্পিনারদের দারুণ বোলিংয়ের পর জশ ইংলিসের বিধ্বংসী ইনিংস ও ক্যামেরন গ্রিনের সঙ্গে রেকর্ড জুটিতে অনায়াসে জিতে গেল অস্ট্রেলিয়া।
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৮ উইকেটে উড়িয়ে পাঁচ ম্যাচ সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া।
জ্যামাইকায় বাংলাদেশ সময় বুধবার সকালের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০ ওভারে তোলে ১৭৩ রান। শুরুতে ব্র্যান্ডন কিং ফিফটি করলেও সুবিধা করতে পারেননি আর কেউ। শেষ দিকে চার ছক্কায় ১৫ বলে ৩৬ রান করেন রাসেল।
সেই পুঁজি নিয়ে পাত্তা পায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২৮ বল বাকি রেখেই জিতে যায় অস্ট্রেলিয়া।
৭ চার ও ৫ ছক্কায় ৩৩ বলে অপরাজিত ৭৮ রান করেন ইংলিস, আগের ম্যাচে ফিফটি করা ক্যামেরন গ্রিন অপরাজিত থাকেন ৩২ বলে ৫৬ রান করে।
দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে আসে ১৩১ রান, তৃতীয় উইকেটে যা অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড। আগের রেকর্ড ছিল ২০১৪ সালে অ্যারন ফিঞ্চ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল জুটির ১১৮।
সেই ম্যাক্সওয়েল এখন ঠিক প্রত্যাশিত ছন্দে নেই। এই ম্যাচে তাকে পাঠানো হয় ইনিংস শুরু করতে। প্রথম ওভারে আকিল হোসেনকে টানা দুই বলে চার ও ছক্কা মারলেও আউট হয়ে যান তিনি পরের ওভারেই। পাওয়ার প্লের মধ্যে বিদায় নেন অধিনায়ক মিচেল মার্শও (১৭ বলে ২১)।
তবে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আশা পিষ্ট করেন ইংলিস ও গ্রিন। দুজনের চার-ছক্কার স্রোতে ভেসে যায় ক্যারিবিয়ান বোলিং।
ছয়-ছয়টি ক্যাচ ছেড়ে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনেন ক্যারিবিয়ানরা। স্বয়ং রাসেল নিতে পারেননি দুটি ক্যাচ।
স্যাবাইনা পার্কে ম্যাচের প্রথম ভাগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজ উদ্বোধনী জুটিতে তোলে ৬৩ রান। তবে সেই জুটি ছিল অদ্ভুত। চার ছক্কায় ৩৬ বলে ৫১ রান করে ব্র্যান্ডন কিং আউট হলে ভাঙে এই জুটি। তার সঙ্গী অধিনায়ক শেই হোপের রান কেবল ১৩ বলে ৯!
অ্যাডাম জ্যাম্পা ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের স্পিনে ভেঙে পড়ে ক্যারিবিয়ান মিডল অর্ডার। ছয় ওভারে ৩৫ রানের মধ্যে পতন হয় পাঁচ উইকেটের।
এরপর রাসেলের ওই ক্যামিওতে কিছুটা প্রাণ ফেরে ইনিংসে। শেষ দিকে গুডাকেশ মোটির ৯ বলে ১৮ রানে ১৭০ ছাড়ায় দল। কিন্তু লড়াই করাও যায়নি ওই স্কোরে।
ম্যাচের সেরা ইংলিস হলেও অবশ্য উপলক্ষের নায়ক ছিলেন রাসেল। ম্যাচ শেষে সমর্থকদের উন্মাদনা ছিল তাকে ঘিরে। ছবি তুলে, অটোগ্রাফ দিয়ে ভক্তদের মন ভরিয়ে দেন ৩৭ বছর বয়সী অলরাউন্ডার। এরপর আলিঙ্গনে জড়ান সতীর্থদের, শেষবারের মতো!
সিরিজের পরের ম্যাচ সেন্ট কিটসে, শনিবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৭২/৮ (কিং ৫১, হোপ ৯, হেটমায়ার ১৪, চেইস ১৬, পাওয়েল ১২, রাদারফোর্ড ০, রাসেল ৩৬, হোল্ডার ১, মোটি ১৮*, জোসেফ ২*; কুনেমান ৪-০-৩৩-০, ডোয়ার্শিস ৪-০-৩৭-১, এলিস ৪-০-৩৪-২, কনোলি ১-০-১০-০, জ্যাম্পা ৪-০-২৯-৩, ম্যাক্সওয়েল ২-০-১৫-২, ওয়েন ১-০-৯-০)।
অস্ট্রেলিয়া: ১৫.২ ওভারে ১৭৩/২ (ম্যাক্সওয়েল ১২, মার্শ ২১, ইংলিস ৭৮*, গ্রিন ৫৬*; আকিল ৪-০-৩১-০, হোল্ডার ৩-০-২৮-১, জোসেফ ৩-০-৫০-১, মোটি ৩-০-৩৩-১, চেইস ১.২-০-১৪-০, রাসেল ১-০-১৬-০)।
ফল: অস্ট্রেলিয়া উইকেটে ৮ জয়ী।
সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: জশ ইংলিস।