ডার্ক মোড
Saturday, 27 April 2024
ePaper   
Logo
নৌকাকে ডুবিয়ে দিতে কোমড় বেধে মাঠে নেমেছে নেছার আহমদ এমপি বলয়

নৌকাকে ডুবিয়ে দিতে কোমড় বেধে মাঠে নেমেছে নেছার আহমদ এমপি বলয়

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বর্তমান এমপি নেছার আহমদকে মৌলভীবাজার-৩ (সদর-রাজনগর) আসনে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ায় এবার ফুঁসে উঠেছে জেলা আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গ সংঘটনরে নেতাকর্মীরা। নৌকাকে ডুবিয়ে দিতে কোমড় বেধে মাঠে নেমেছে নেছার আহমদ এমপি বলয়ের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামীলীগের বিভক্তি প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে।

এ আসনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের বাসিন্দা অলিলা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালন তরুণ শিল্পপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান। তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা উপ-কমিটির সদস্য।

জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বর্তমান এমপি নেছার আহমদ দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় তার সমর্থক ও অনুসারীরা দলীয় মনোননয়ন নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী করেন এম এ রহিম সিআইপিকে। তারা প্রকাশ্যে এম এ রহিম শহীদ সিআইপি’র পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দিলেও শেষমেষ ২১ ডিসেম্বর রহিমের মনোনয়নপত্র উচ্চ আদালতে চুড়ান্ত ভাবে বাতিল হয়। যদিও এর আগে ৪ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাচাইয়ের দিন এমএ রহিমের প্রার্থিতা বাছাইয়ে বাতিল করেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা উর্মি বিনতে সালাম। নির্বাচন কমিশনে আপিল করেও তিনি প্রার্থিতা ফিরে পাননি রহিম। কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীসহ মোট ছয়জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

রহিমের প্রার্থীতা বাতিল হওয়ার আগে ও পরে কয়েক দফা সভা করেন নেছার আহমদের অনুসারী জেলা আওয়ামী লীগ।

দু’টি সভায়ই দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলেছেন নেতারা। গত ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার পৌরসভার হলরুমে ওই সভা থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এমএ রহিম শহীদ সিআইপিকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানান অনেকে। জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের এসব বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়।

অন্যদিকে নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানকে বিজয়ী করতে তার সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ, প্রয়াত সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলী এমপির স্ত্রী সাবেক এমপি সৈয়দা সায়রা মহসীন, মহসীন আলীর ছোটভাই জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নওশের আলী খোকন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুহিবুর রহমান তরফদার, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মসুদ আহমেদ, জেলা তাঁতীলীগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ লিয়াকত আলী, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালিক তরফদার ভিপি সুয়েব, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান বাবুলসহ অনেকেই মাঠে নেমেছেন।

গত ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার পৌরসভার হলরুমে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার আহমদ এমপির সভাপতিত্বে বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাউর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী এম রহিম শহীদ, পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল হোসেন, রাজনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মিলন বখত প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আকবর আলী, আকিল মিয়া, জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি আজমল হোসেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জজ কোর্টের পিপি এডভোকেট রাধাপদ দেব সজল, সাংগঠনিক সম্পাদক অজয় সেন, মৌলভীবাজার পৌর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এমদাদুল হক মিন্টু, রাজনগরের পাঁচগাও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ছানা, ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নকুল দাশ।

উক্ত সভায় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন বলেন, আমরা যদি সচেষ্ট থাকতাম তাহলে ওই লুটেরার দল কোনোভাবে নৌকা ছিনিয়ে নিতে পারতো না। আমরা নেছার আহমদকে সম্মান দিতে পারি নাই। কোনো জায়গায় যাই নাই। আমরা ভাবছিলাম উনি মুরুব্বি হিসেবে চাইছিলেন আরেকবার এমপি হতে। আমরা ভাবছিলাম ঠিক আছে যদি জননেত্রী শেখ হাসিনা উনাকে দিয়ে দেন অসুবিধা নাই। কিন্তু সেইভাবে হারিয়ে যাবে আমাদের নৌকা সেই স্বপ্নও আমরা কখনো দেখি নাই। রাস্তা আমরাও চিনি। তিনি বলেন, আগামী ৭ তারিখের নির্বাচনে জেলা সভাপতিসহ সকলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন আমাদের প্রার্থী এমএ রহিম শহীদ সিআইপি। তিনি বলেন, নৌকা কীভাবে আমাদের হস্তগত না হয়ে অন্যের হাতে গেল- সেটা সকলের কাছে প্রশ্ন। জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান বলেন, আজকে যিনি নৌকা নিয়ে এসেছেন তাকে আমরা কখনো মৌলভীবাজারের রাজনগরে দেখি নাই। জয়বাংলার স্লোগান দিতে দেখি নাই। বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করতে দেখি নাই। আওয়ামী লীগ করতে দেখি নাই। সে কখনো আওয়ামী লীগ করে নাই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ছিল না।

তিনি বলেন, আমরা আওয়ামীলীগকে বাঁচানোর জন্য। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বাঁচানোর জন্য। শেখ হাসিনার দলকে বাঁচানোর জন্য এমএ রহিম শহীদকে প্রার্থী দিয়েছি। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাউর রহমান বলেন, কারও উপকারে এলো না। কোনোদিন বললোও না। আজকে সে আমাদের মাথার উপর বসেছে জগদ্দল পাথরের মতো। আমরা এটা মেনে নিতে পারি না। আমরা মেনে নেইনি। মানবো না। আমরা মানতে পারি না। তাই আপনাদেরকে ডাকা। আমাদের কাজ করতে হবে। আজকে আমাদের দুঃখ হয়। তার সঙ্গে আপনারা দেখবেন হাতেগোনা চারজন জেলা আওয়ামী লীগের নেতা আছেন। আরও বলতে চাই না। কিন্তু না বলেও পারি না।

মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান এমপি নেছার আহমদ বলেন, আমরা ভালো কাজে অগ্রসর হচ্ছি। আমাদেরকে সাহায্য করেন এবং মৌলভীবাজার সদর এবং রাজনগরকে একটি বিপদ থেকে আওয়ামী লীগ পরিবারকে রক্ষা করেন। এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার। আরেকটি কথা বলতে চাই- আপনারা সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। রহিম শহীদ এমপি হলে বারবার বলছি মৌলভীবাজার এবং রাজনগর আওয়ামী পরিবার বাঁচবে, না হলে ভদ্রলোক আর রাজনীতি করতে পারবেন না। এতদিনের ত্যাগ, এতদিনের কষ্ট সব বিফলে যাবে। রাজনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনসুর নগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিলন বখ্ত বলেন, আমি শুধু একটি কথা বলতে চাই, আমরা মৌলভীবাজার এবং রাজনগরের মাটির যে বন্ধন সে বন্ধন অটুট থাকবে ইনশাআল্লাহ্। আগামী ৭ তারিখে প্রমাণ করবো।

মৌলভীবাজার-৩ (মৌলভীবাজার সদর-রাজনগর) আসনে আওয়ামীলীগ মনোনিত নৌকার প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনা সভা জনসংযোগে জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি মুহিবুর রহমান তরফদার, সহসভাপতি মসুদ আহমদ, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সৈয়দ নওশের আলী খোকন, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান বাবুল, মৌলভীবাজার সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল মালিক তরফদার ভিপি সুয়েব, স্বেচ্চাসেবক লীগের সভাপতি মো: নজমুল হক, প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীর স্ত্রী সাবেক এমপি সৈয়দা সায়রা মহসীন ও তাদের বলয়ের নেতাকর্মীদের নৌকার প্রার্থী জিল্লুর রহমানের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় দিন-রাত সক্রিয় ভাবে নির্বাচনী মাঠে অংশ গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নেছার আহমদ এবং সাধারন সম্পাদক মিছবাউর রহমান, ১ম যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা জজকোর্টের পিপি রাধাপদ দেব সজল, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অজয় সেন, মৌলভীবাজার সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আকবর আলীসহ জেলা আওয়ামীলীগ, যুবলীগ,ছাত্রলীগ, স্বেচ্চাসেবকলীগসহ পদধারী বেশিরভাগ নেতাকর্মীদের নৌকার প্রতীকের প্রার্থী জিল্লুর রহমানের পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে না।

উল্লেখ্য, গত ২০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা সিলেটে আগমন উপলক্ষে ১৩ ডিসেম্বর সিলেটে আমান উল্লাহ কনভেনশন সেন্টারে প্রস্তুতিমূলক সভায় মৌলভীবাজার-৩ আসনের নৌকার প্রার্থী জিল্লুর রহমান ও মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মিছবাউর রহমানের একটি অন্তরঙ্গ যুগল ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন