
নিকো, লুইসকে না পেয়ে র্যাশফোর্ডকে দলে টানছে বার্সেলোনা
স্পোর্টস ডেস্ক
নিকো উইলিয়ামসকে নিয়ে কম নাটক হয়নি। কিন্তু শেষমেষ তাকে না পেয়ে লুইস দিয়াসকে দলে টানতে মরিয়া হয়েছিলেন বার্সেলোনার স্পোর্টিং ডিরেক্টর দেকো। তার মধ্যেই সবাইকে অবাক করে দিয়ে মার্কাস র্যাশফোর্ডকে দলে ভেড়ানোর খবর চাউর হয়েছে।
ইংলিশ ফুটবলের দলবদল-সংক্রান্ত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সাংবাদিক ডেভিড অর্নস্টাইন জানিয়েছেন, এক মৌসুমের জন্য র্যাশফোর্ডকে ধারে পেতে মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে প্রস্তাব দিয়েছিল বার্সেলোনা। রুবেন আমোরিমের দলে ব্রাত্য এই উইঙ্গারের জন্য প্রস্তাবটি প্রাথমিকভাবে গ্রহণ করেছে ইউনাইটেড। আলোচনা একেবারে শেষ পর্যায়ে, এখন কয়েকটি বিষয় সমাধানে শেষ মুহূর্তের আলোচনা চলছে।
বার্সেলোনায় এলে র্যাশফোর্ডের বেতনের পুরোটাই বহন করবে বার্সেলোনা। সেইসঙ্গে আগামী মৌসুমে যদি তাকে স্থায়ীভাবে কিনে রেখে দিতে চায়, তবে ৩৫ মিলিয়ন ইউরোর মতো গুনতে হতে পারে ক্লাবটিকে। অন্তত বার্সেলোনার সংবাদ কভার করা ইতালিয়ান সাংবাদিক মাত্তেও মোরেত্তো তেমনই বলেছেন।
এদিকে, ট্রান্সফার গুরু ফাব্রিৎসিও রোমানোও ‘হেয়ার উই গো’ বলে র্যাশফোর্ড-বার্সা দলবদলের বিষয়টি নিশ্চিত করে দিয়েছেন।
রোমানো জানিয়েছেন, আজ রবিবার অথবা আগামীকালই ইংল্যান্ড থেকে কাতালুনিয়ায় পৌঁছাবেন ২৭ বছর বয়সী এই ফুটবলার। এরপর শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আগামী সপ্তাহ, অর্থাৎ সোমবার থেকে যেকোনো দিন তার দলবদলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বার্সেলোনা।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে কাতালান ক্লাবটির প্রাক-মৌসুম সফরেও সঙ্গী হবেন র্যাশফোর্ড।
এদিকে, আর্থিক জটিলতার কারণে এখনও ১:১ নিয়মে ফিরতে পারেনি বার্সেলোনা। কয়েকদিন আগে এস্পানিওল থেকে দলে ভেড়ানো তরুণ গোলরক্ষক জোয়ান গার্সিয়ারই এখনও লা লিগায় নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারেনি ক্লাবটি। ফলে র্যাশফোর্ডের নিবন্ধনেও সময় লাগবে। তবে বার্সেলোনায় খেলতে সমস্ত অনিশ্চয়তা দূরে ঠেলে প্রস্তাব আসার সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে যান তিনি।
এর আগে গত মৌসুমের জানুয়ারির দলবদলের সময়ও বার্সেলোনায় আসার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন র্যাশফোর্ড। সে সময় নিজের প্রতিনিধিকে দিয়ে ক্লাবটির কাছে প্রস্তাবও পাঠিয়েছিলেন তিনি। তবে তখন শেষ পর্যন্ত তাকে দলে টানেনি কাতালানরা।
এরপর মৌসুমের বাকি সময়ের জন্য ধারে উনাই এমেরির অ্যাস্টন ভিলায় যান তিনি। সেখানে ঘরোয়া ও ইউরোপা লিগে নিজের প্রতিভার সাক্ষর রাখেন র্যাশফোর্ড। সেইসঙ্গে ১৭ ম্যাচে ১০ গোলে অবদান রাখেন (৪ গোল ও ৬ অ্যাসিস্ট)।
তবে এপ্রিল মাসে হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পাওয়ায় আগেভাগেই তার মৌসুম শেষ হয়ে যায়। শেষ চার ম্যাচে ভিলানদের হয়ে খেলতে পারেননি তিনি। এমনকি ইংল্যান্ড জাতীয় দলের জন্য অ্যান্ডোরা ও সেনেগালের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য থমাস টুখেলের ঘোষিত স্কোয়াডেও জায়গা হয়নি তার।
ইউনাইটেডের সর্বোচ্চ আয়ের খেলোয়াড়দের একজন র্যাশফোর্ড। তার সাপ্তাহিক বেতন ৩ লাখ ৮০ হাজার ইউরোরও বেশি। এই বেতনের তিন-চতুর্থাংশ পরিশোধ করে ভিলা। এর পাশাপাশি পারফরম্যান্সভিত্তিক বোনাসও দিয়েছে ক্লাবটি।
এ বছরের শুরুতে বার্সেলোনা কোচ হান্সি ফ্লিক বলেছিলেন, তিনি লামিন ইয়ামাল ও রাফিনিয়ার পাশাপাশি উইংয়ে আরও খেলোয়াড় চান। বিকল্প না থাকায় মৌসুমের শেষভাগে এসে খানিকটা ভুগতেও হয়েছে দলটিকে।
এরপর মৌসুম শেষ হলে আথলেতিক বিলবাউয়ের তরুণ প্রতিভা নিকো উইলিয়ামসের প্রসঙ্গটি আরও একবার সামনে আসে। কিন্তু শুরুতে বার্সেলোনা সাফ জানিয়ে দেয়, নিকোর জন্য অপেক্ষা করে গত বছরই ছেড়ে গেছে বার্সেলোনার ট্রেন।
তবে নিজেই এবার প্রতিনিধিকে দিয়ে বার্সায় খেলার আগ্রহ প্রকাশ করেন নিকো। সেইসঙ্গে ব্লাউগ্রানা জার্সি পরতে প্রয়োজনে গতবার বার্সেলোনার প্রস্তাবিত বেতনের চেয়েও কম নিতে রাজি বলে জানান তিনি। এমনকি বায়ার্ন মিউনিখ তাকে অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি বেতনের প্রস্তাব দিলেও বার্সেলোনায় খেলার আগ্রহ থেকে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
বাঁ উইংয়ে তার শক্তি ও তীব্র আগ্রহ বিবেচনায় আর্থিক বিষয়গুলো নিয়ে নড়েচড়ে বসে বার্সা কর্তৃপক্ষ। নিকোর রিলিজ ক্লসের ৬০ মিলিয়ন ইউরো জোগাড়ও শুরু করে তারা। শেষ পর্যন্ত যখন বিলবাউয়ের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হবে, তখনই সবাইকে অবাক করে দিয়ে ক্লাবটির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে নেন তিনি।
পরে অবশ্য জানা যায়, বিলবাউকে ট্রান্সফারের অর্থ পরিশোধ করলেও নিজের নিবন্ধনের বিষয়টি নিয়ে লিখিত নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন নিকো। কিন্তু বার্সেলোনা তা দিতে অস্বীকৃতি জানালেও তিনি মৌসুমের শুরু থেকেই দলের সঙ্গে খেলবেন বলে মৌখিক নিশ্চয়তা দিয়েছিল। তবে তাতে আশ্বস্ত হতে পারেননি তিনি। অন্যদিকে, নিজের বড় ভাই ইনিয়াকি উইলিয়ামস এবং ক্লাবের পক্ষ থেকে তাকে বারবার নতুন চুক্তিতে সই করতে চাপ দেওয়া হচ্ছিল।
নিকোর সঙ্গে হওয়া তিক্ত অভিজ্ঞতার পর নিজের প্রথম পছন্দ লিভারপুলের কলম্বিয়ান তারকা লুইস দিয়াসের দিকে দৃষ্টি দেন দেকো। তার জন্য উঠেপড়ে লাগে বায়ার্নও। কিন্তু দুই ক্লাবের প্রাথমিক প্রস্তাবই প্রত্যাখ্যান করে লিভারপুল। এরপর কয়েক দফায় বায়ার্ন অর্থের পরিমাণ বাড়ালেও তাতে এখনও রাজি হয়নি ইংলিশ লিগ চ্যাম্পিয়নরা। এই অবস্থা এবং নিজেদের আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দিয়াসের দিক থেকে মুখ ফেরায় বার্সেলোনা।
শেষ পর্যন্ত গত সপ্তাহে নাকি ৬০ মিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত দিতে রাজি হয়েছিল কাতালান ক্লাবটি। তবে স্বাভাবিকভাবেই ৯০ মিলিয়ন ইউরো চাওয়া লিভারপুলের কাছে সেটি পাত্তা পায়নি। তাই দীর্ঘদিন ধরে নিজের স্বপ্নের ক্লাবে খেলতে চাওয়া ইংলিশ প্রতিভাকেই দলে ভেড়াচ্ছে বার্সেলোনা।
এই চুক্তি কার্যকর করায় বার্সা কোচ হান্সি ফ্লিকের ভূমিকা ছিল বলে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। জার্মান এই কোচের অধীনে একেকটি দানবে পরিণত হয়েছে দলটির তরুণ ফুটবলাররা। আনসু ফাতি ছাড়া বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই ফর্মের তুঙ্গে রয়েছেন।
ফলে ফ্লিকের তত্ত্বাবধায়নে আসন্ন বিশ্বকাপের আগে নিজের হারানো ফর্ম ফিরে পাবেন, সঙ্গে স্বপ্নের ক্লাবে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে থেকে যাবেন বহু বছর—র্যাশফোর্ডের পাশাপাশি এই প্রত্যাশায় বুক বেঁধেছেন বার্সেলোনার কোটি সমর্থক।