ডার্ক মোড
Friday, 18 October 2024
ePaper   
Logo
নিউইয়র্কে মির্জা আজম : বাঙালির মুক্তির জন্য শেখ মুজিব আল্লাহর দান

নিউইয়র্কে মির্জা আজম : বাঙালির মুক্তির জন্য শেখ মুজিব আল্লাহর দান

যুুক্তরাষ্ট্র ব্যুরো

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম জন্ম জয়ন্তিতে আমাদের শপথ নিতে হবে আওয়ামী লীগের জন্ম এবং বাঙালির মুক্তির জন্যে দীর্ঘ পথ-পরিক্রমা নতুন প্রজন্মকে অবহিত করার জন্যে।

আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মকে অবহিত করার মধ্যদিয়েই জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বহুজাতিক সমাজে আরো দৃঢ়ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত করা সহজ হবে। কারণ, প্রবাসের প্রজন্মের সমন্বয়েই আমেরিকার মত একটি দেশ আজ বিশ্বে সবচেয়ে ক্ষমতাবান হিসেবে স্বীকৃত। মির্জা আজম বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে যদি চিনতে হয় তাহলে সবার আগে বঙ্গবন্ধুকে চিনতে হবে, জানতে হবে। আর বঙ্গবন্ধুকে জানতে গেলেই আওয়ামী লীগকে চেনা হবে। এরমধ্যদিয়েই ১৯৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধকেও জানা যাবে। মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করলেই ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন জন্ম হওয়া আওয়ামী লীগের সুদীর্ঘ সংগ্রাম-লড়াই-আন্দোলন সম্পর্কে সকলে অবহিত হতে পারবেন।

মির্জা আজম বলেন, সে কারণেই আমাদেরকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আরো বেশী করে জানতে হবে। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমানের স্ত্রী বেগম সায়েরা খাতুনের গর্ভে তার জন্ম হয়। তার আগে শতশত বছর এই উপমহাদেশের মুসলমান মা-বোনেরা প্রতিদিন সকালে ফজরের নামাজের সময় জায়নামাজে বসে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন, খোদা আমাদের এমন একজন সন্তানের জন্ম দাও, এই ব্রিটিশ বেনিয়াদের নির্যাতন থেকে যেন আমরা মুক্তি পাই। মারাঠা বর্গিরা এদেশের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করতো, আমাদের দেশ দখল করতো। মানুষ হত্যা করতো। আমাদের সম্পদ লুণ্ঠন করে নিয়ে যেত। এই অত্যাচার-নির্যাতন থেকে আমরা মুক্তি চাই। বাংলার হিন্দু রমণীরা সকলে তুলসি তলায় গিয়ে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করতেন এই অত্যাচার-নির্যাতন থেকে মুক্তির জন্যে এমন এক সন্তানের জন্ম দাও, যে সন্তান আমাদের মুক্তি দেবে।

হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সকল সম্প্রদায়ের মানুষ ঈশ্বরের কাছে, ভগবানের কাছে, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন শতশত বছর। এমন প্রার্থনার ফসল হিসেবে সেই ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে খোকা নামে এক শিশুর জন্ম হলো, যে শিশুটি আল্লাহর ঔশ্বরিক দান হিসেবেই আমরা মনে করি। কারণ ৬ বছর বয়সী একটি শিশু কেবল স্কুলে যায়, সে সময়েই কখনো বই ছাড়া আবার কখনো শার্টহীন খালি গায়ে বাড়িতে ফেরেন। মা জিজ্ঞেস সরলে খোকা জানান যে, আমার এক সহপাঠি বন্ধু টাকার অভাবে বই কিনতে পারেনি, সেজন্যে আমার বই-খাতা তাকে দিয়েছি। আরেক বন্ধু অর্থাভাবে শার্ট কিনতে পারছে না। সেজন্যে আমার শার্ট তাকে দিয়ে এসেছি। মির্জা আজম বলেন, একটি শিশুর সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে তার পোশাক, তার বই। এমনি একজন শিশু এমন মহান হবে, এমন মানবিকতাপূর্ণ হবে- সেটি গতানুগতিক কোন ঘটনা হতে পারে না। সেই শিশুটি ঔশ্বরিক দান বলেই এমনটি ঘটেছে এবং সেই শিশুটি ছিলেন আমাদের বঙ্গবন্ধু, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমান।

মির্জা আজম উল্লেখ করেন, সেই শিশুটি যখন অস্টম শ্রেণীর ছাত্র, সে সময়ে বাংলার মুখমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি গিয়েছিলেন স্কুলটি ভিজিট করতে। সঙ্গে ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রী শের-এ বাংলা এ কে ফজলুল হক। স্কুল ভিজিটের পর যখোন মুখ্যমন্ত্রী গাড়িতে উঠবেন দেখা গেল লিকলিকে এক তরুণ মুখ্যমন্ত্রীর গতিরোধ করে প্রশ্ন করছেন, স্কুল ভিজিট করে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু আমার স্কুল বিল্ডিংয়ের ছাদ দিয়ে যে পানি পড়ে সে ব্যাপারে তো কিচ্ছু বলে গেলেন না।

ঘটনার আকস্মিকতায় স্কুলের সকল শিক্ষক আৎকে উঠেছিলেন যে, সকলেই হয়তো বরখাস্ত হবেন। এমনকি এলাকার ডিসি, এসপিসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ভীত হয়েছিলেন। সে সময় সেই খোকাকে বুকে জাপটে ধরে হোসেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি স্কুলটি সংস্কারের যাবতীয় নির্দেশ দিয়ে যান। এই শিশু ম্যাট্রিক পাসের পর উচ্চশিক্ষার জন্যে ভর্তি হন কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে। সেখানকার বেকাল হোস্টেলে অবস্থানকালেই ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচিত হন।

এবং কলেজ ছাত্রসংসদের জিএস নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমন তার এমন ঔশ্বরিক শক্তি ছিল, সে সময় কোন দাঙ্গা লাগলেই সরকারি কর্মকর্তারা শেখ মুজিবকে ডেকে নিয়ে হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গা থামানোর সহায়তা নিতেন। সে আহবানে সাড়া দিয়ে শেখ মুজিব উভয় পক্ষকে এনে যুক্তির মাধ্যমে দাঙ্গা থেকে সকলকে বিরত করতেন। সম্প্রীতির বন্ধনে বসবাসের পরিবেশ তৈরীতে তার ছিল অসাধারণ একটি গুণ। এটি ছিল যুবক বয়সের সকল ক্যাপাসিটি। এরপর ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ২ হাজার কিলোমিটারের ব্যবধানে দুটি ভূখন্ড নিয়ে পাকিস্তান নামক একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর পশ্চিমাদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ করার অভিপ্রায়ে আওয়ামী লীগ গঠনের বিস্তারিত প্রেক্ষাপট উপস্থাপন করেন মির্জা আজম।

শেখ মুজিবের বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠার পর তারই আহবানে নিরস্ত্র বাঙালি কীভাবে সুসজ্জিত একটি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিশ্বের মানচিত্রে একটি স্বাধীন দেশের অভ্যুদয় ঘটে তারও আলোকপাত করেন ইতিহাসের নিরিখে।

পারিবারিক সফরে নিউইয়র্কে অবস্থানকালে ৮ জুলাই সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সাথে মতবিনিময়কালে মির্জা আজম সংগঠনের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আলোকে মূলত বক্তব্য দেন। তিনি প্রবাসের সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার উদাত্ত আহবানের পাশাপাশি দেশ বিরোধী যে কোনো অপতৎপরতাকে যুক্তির আলোকে রুখে দেয়ার পরামর্শও প্রদান করেন।

কুইন্স প্যালেসে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ। নিউইয়র্ক স্টেট এবং মহানগর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও এ সময় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানস্থলে মির্জা আজমকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন