ডার্ক মোড
Friday, 18 October 2024
ePaper   
Logo
যুক্তরাষ্ট্রে দুর্বৃত্তের গুলিতে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত রিটনের মৃত্যু

যুক্তরাষ্ট্রে দুর্বৃত্তের গুলিতে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত রিটনের মৃত্যু

যুক্তরাষ্ট্র ব্যুরো

প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে বাংলাদেশী বংশোদ্ভ’ত রওনক হাসান রিটন (২০)কে হত্যার তথ্য নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে ফোন করে জানায় দুর্র্বৃত্তটি। এর ৪১ ঘন্টার মধ্যেও (বাংলাদেশ সময় সোমবার অপরাহ্ন ৫টায় এ সংবাদ লেখার সময় পর্যন্ত)সেই ঘাতক গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রবাসী বাংলাদেশীরা।

নিহত তরুণের বাবা আতাউর রহমান লিটন-সহ স্বজনেরা মনে করছেন যে, এটি ধর্ম ও জাতিগত বিদ্বেষমূলক হামলা। অপরদিকে, বাফেলো সিটি সংলগ্ন চীকটোয়াগা পুলিশের প্রধান ক্যাপ্টেন জেফরী স্মীডট জানান, তদন্তের পরই নিশ্চিত করা যাবে হত্যার সোটিভ। ক্যাপ্টেন জেফরী সকলকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানিয়ে তদন্তে এবং দুর্বৃত্তকে গ্রেফতারের ব্যাপারে সহযোগিতার আহবান রেখেছেন। তিনি চীকটোয়াগা পুলিশের ডিটেকটিভ ব্যুরোর ৭১৬-৬৮৬-৩৫১০ নম্বরে ফোন করে দুর্বৃত্তের খোঁজ দেয়ার অনুরোধও জানিয়েছেন সর্বসাধারণের প্রতি। ক্যাপ্টেন জেফরী স্মীডট গণমাধ্যমে বলেছেন যে, দুর্বৃত্তের ব্যবহৃত বন্দুকটি অকুস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

নিউইয়র্ক সিটি থেকে ৩৭৭ মাইল দূর নিউইয়র্ক স্টেটের বাফেলো-তে বাংলাদেশীদের নতুন বসতি স্থল বাফেলোর সিডার রোডে শনিবার অপরাহ্ন ৫টায় কলেজগামী উদ্যমী তরুণ রিটনকে হত্যার ঘটনাটি ঘটেছে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় এবং গুলিবিদ্ধ করার পরই দুর্বৃত্তটি তার গাড়ি চালিয়ে ঐ স্থান ত্যাগ করেছে বলে জানায় রিটনের সাথে থাকা সহপাঠি হামেদ লতিফ।

লতিফ বলেন, আমরা প্রায় দিনই সেখানে আড্ডা দেই। রিটনের বাসার সম্মুখস্ত জায়গাটি হচ্ছে সিটির পার্কিং লট। এবং আমাদের আড্ডায় প্রতিবন্ধকতা তৈরীর অভিপ্রায়ে দুর্র্বত্তটি তার গাড়ি পার্ক করতে চেয়েছিল। রিটন তাকে অনুরোধ জানান অন্যত্র পার্ক করার জন্যে। এনিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে গাড়ি থেকে বন্দুক বের করেই রিটনকে লক্ষ্য করে সে গুলি চালায়। ভ’পাতিত রিটন ছটফট করছিলেন মৃত্যু যন্ত্রণায়। এমনি অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্স-সহ পুলিশ আসে এবং গুরুতর অবস্থায় রিটনকে নিকটস্থ অ্যারি কাউন্টি মেডিকেল সেন্টারে নেয়ার পর চিকিৎসকরা জানান যে, রিটন বেঁচে নেই।

রিটনের বাবা আতাউর রহমান লিটন ছিলেন কর্মস্থলে। বাসা থেকে মিসেস লিটন ফোন করে ব্যাপারটি জানানোর পরই তিনি ছুটে যান হাসপাতালে। সেখানে গণমাধ্যমকে লিটন বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে রিটন মারা গেছে-এটা আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। কারণ, রিটন খুবই শান্ত স্বভাবের মানুষ ছিল।

কারো সাথে তার কোন বাজে সম্পর্ক থাকতে পারে না। আমি বুঝতে পারছি না কে এবং কেন তাকে গুলি করলো? আমি ন্যায় বিচার চাই। দুর্বৃত্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আসার থেকে সপরিবারে নিউইয়র্কে বাস করতেন আতাউর রহমান লিটন। ২০১৯ সালে কানাডা সীমান্ত বরাবর (বিশ্বখ্যাত নায়েগ্রা ফল্্স অধ্যুষিত) বাফেলোতে বাড়ি ক্রয় করে সেখানেই বসত করছিলেন আমেরিকান স্বপ্ন পূরণের অভিপ্রায়ে।

রিটনের এই অকাল মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছেন না প্রবাসীরা। শনিবার ও রোববার তারা বিভিন্ন স্থানে মিলিত হয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন পুলিশী আচরণে। প্রবাসীরা অভিযোগ করছেন, রিটনকে গুলি করার পর দুবৃৃত্তটি নিজেই পুলিশের জরুরী ফোন নম্বর-৯১১ এ ফোন করেছে। এবং গাড়ি চালিয়ে অকুস্থল ত্যাগ করেছে। এতদসত্বেও কেন তাকে পাকড়াও করা সম্ভব হচ্ছে না?

জানা গেছে, বাফেলো একটি পরিত্যক্ত এলাকা ছিল। সেখানকার আফ্রিকান-আমেরিকানরা অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছেন অসহনীয় শীত পড়ায়। জরাজীর্ন বাড়ি খুবই স্বল্প দামে ক্রয়ের পর তার সংস্কার করে নিউইয়র্ক থেকে ৩৫ হাজারের অধিক বাংলাদেশী সেখানে বসতি গড়েছেন। কয়েক মাস আগেও নিজের বাসায় কাজের সময় আরেকজন প্রবাসীকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় বাফেলোর প্রবাসীরা স্বস্তিতে নেই।

রিটনের নামাজে জানাযা সোমবার স্থানীয় সময় অপরাহ্ন ৫টায় (বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার ভোররাত ৩টা) বাফেলো মুসলিম সেন্টারে অনুষ্ঠানের পরই দাফনের প্রস্তুতি চলছে বলে স্বজনেরা জানান।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন