ডার্ক মোড
Friday, 18 October 2024
ePaper   
Logo
কুয়াকাটায় বেড়িবাঁধ সড়ক নির্মাণে সংরক্ষিত বনের বালু উত্তোলন, হুমকির মুখে সবুজ বেষ্টনী

কুয়াকাটায় বেড়িবাঁধ সড়ক নির্মাণে সংরক্ষিত বনের বালু উত্তোলন, হুমকির মুখে সবুজ বেষ্টনী

গোফরান পলাশ, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা উপকূলের রক্ষাকবচ বেড়িবাধেঁর উপর পাকা সড়ক নির্মাণ কাজ করছে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর। এ কাজে ড্রেজার মেশিন দিয়ে সংরক্ষিত বনের ভিতর থেকে বালু উত্তোলন করছে একটি প্রভাবশালী মহল। ফলে বনের মধ্যে তৈরি হচ্ছে বড় বড় দিঘি। উজাড় হচ্ছে সবুজ বেষ্টনী । সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও কোন সুফল পায়নি স্থানীয়রা। উল্টো সাব ঠিকাদার মামলা, হামলার হুমকি দিচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন,
ড্রেজার মেশিন দিয়ে বনের ভিতর থেকে বালু উত্তোলন করে বড় বড় দিঘি তৈরি করা হয়েছে। আমরা বাঁধা দিলে ঠিকাদার চাঁদাবাজি মামলার হুমকি দিচ্ছেন।

জানা গেছে, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত লাগোয়া উপকূলীয় বেড়িবাঁধের উপর পাকা সড়ক নির্মাণ কাজ চলছে। কুয়াকাটায় আগত পর্যটক দর্শনার্থীদের চলাচলের সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে এ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়।২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ওয়েডিং এন্ড এস্টেনথিং প্রজেক্ট (BDIRWSP) এর আওতায় কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টের দুই দিকে ৪৮ নং পোল্ডারের বেড়িবাঁধের উপর ১৬ ফুট প্রশস্ত ১০ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। এ কাজের ঠিকাদার " ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স" নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সড়কটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

প্রথম পর্যায়ে কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে গঙ্গামতি পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণের লক্ষ্যে বালু ভরাটের কাজ শুরু করা হয়। এ বালু ভরাট কাজের দায়িত্ব দেয়া হয় কবির হোসেন নামের স্থানীয় এক বালু ব্যবসায়ীকে।

সড়ক নির্মাণ ও প্রশস্তকরণ কাজে লোকাল বালু কিনে ট্রাকে করে নিয়ে সড়কে ব্যবহারের কথা রয়েছে। কিন্তু বিধি বহির্ভূতভাবে সংরক্ষিত বন উজাড় করে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে ব্যবহার হচ্ছে সড়কে। এতে বনের সরল জমিসহ শত শত গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। ফলে বনের মধ্যে বড় বড় দিঘির সৃষ্টি হয়েছে। বন কর্মকর্তারা বাঁধা দিলে শুনেছে না প্রভাবশালী ঠিকাদার। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, ভূমি প্রশাসন থেকে শুরু করে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও কোন সুরাহা হয়নি।

পটুয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান, বেড়িবাঁধ সড়ক নির্মাণ কাজের জন্য একটি প্রভাবশালী চক্র গঙ্গামতি ও মম্বিপাড়া এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করছে। প্রভাবশালীদের প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়ে আইনী সহযোগিতা চেয়েও তারা পাচ্ছেন না।

বন কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, উপজেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ করার পরও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

স্থানীয়রা জানান, ঝড় বন্যা জলোচ্ছ্বাস ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে সংরক্ষিত বন সমুদ্র উপকূলের রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করছে। বন না থাকলে বেড়িবাঁধ ভেঙে সমুদ্রের করাল গ্রাসে চলে যেত গ্রামের পর গ্রাম। সেই বনভূমি ধ্বংস করে প্রভাবশালী মহলটি কোটি কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্য করছে।

উপকূলীয় ঝুকিপূর্ণ এলাকা থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছেন না কেউ। অভিযোগ রয়েছে খোদ উপজেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা এ কাজের সাথে যুক্ত রয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা প্রশাসনের পরোক্ষ সহযোগিতায় বনভূমির পাশাপাশি পর্যটন এলাকার রেকর্ডীয় কৃষি জমি থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে দেদারসে বালু উত্তোলন চলছে।

এমন অভিযোগ অস্বীকার করে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল ইসলাম জানান, তিনি শুনে এসিল্যান্ডকে পাঠিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছেন।

তবে উপজেলা প্রশাসনের বক্তব্যের সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। বালু উত্তোলন চলমান থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তারা নিশ্চুপ। নানা অজুহাতে তৎপর হচ্ছেন‌ না প্রশাসনের কর্তারা।

স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল ফকির অভিযোগ করে বলেন, আমি এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক, উপজেলা প্রশাসক, ভূমি কর্মকর্তাসহ বন বিভাগকে একাধিকবার জানানোর পরও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যেখানে সরকারি অর্থ দিয়ে কাজ হচ্ছে, সেখানে যদি সরকারি জমি থেকেই বালু উত্তোলন করা হয় তাহলে এটা সাগর চুরি। আমার দাবি যাতে এই ঠিকাদারকে কোনো প্রকার টাকা না দেওয়া হয়। যেসকল জায়গাগুলো থেকে বালু উত্তোলন করা হয়েছে সেসব ভরাট করে দেওয়া হোক। নতুবা অচিরেই এই বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়বে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক বাসিন্দা বলেন, বেড়িবাঁধে কাজের শুরু থেকে বন ও বাঁধের দুইপাশ থেকে মাটি কেটে দেওয়া হয়েছে। এখন আবার বালু দিচ্ছে তাও একই স্টাইলে। প্রশাসনকে জানানোর পরেও যদি কোনো পদক্ষেপ না নেয় আমাদের কি করার আছে? কর্মকর্তারা আসে যায়, দুএকদিন পর আবারো কাজ চলতে থাকে।

স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাদেকুর রহমান বলেন, সরকারী নিয়মের বাইরে আমাদের যাওয়ার সুযোগ নেই। উপকূলীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ একটি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল। সেখান থেকে বালু উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন