ডার্ক মোড
Wednesday, 22 January 2025
ePaper   
Logo
সোমেশ্বরী ও মহারশি নদী থেকে বালু লুটপাটের মহোৎসব

সোমেশ্বরী ও মহারশি নদী থেকে বালু লুটপাটের মহোৎসব

খোরশেদ আলম, শেরপুর

শেরপুরের ঝিনাইগাতীর সোমেশ্বরী ও মহারশি নদীসহ খালবিল, নদী নালা, ঝর্ণা পাহাড় থেকে বালু লুটপাটের মহোৎসব চলছে। স্থানীয় বালু দস্যুরা বালু উত্তোলনের নীতিমালার প্রতি তোয়াক্কা না করে খালবিল, নদী - নালা, নদীর পাড় ও পাহাড় কেটে অবাধে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছে । জানা গেছে, ১৪৩২ বাংলা সালে উপজেলার মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর ২ টি বালু মহাল ইজারা দেয়া হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক বছর মেয়াদে নির্ধারিত এলাকায় বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয়া হলেও ১ বৈশাখ থেকে ইজারাদারের লোকজন দীর্ঘদিন ধরে ইজারা বহির্ভ‚ত এলাকা থেকে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছেন।

ইজারাদারের লোকজন প্রভাবশালী হওয়ার কারনে স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে কেউ তাদের বালু লুটপাটের বিষয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না। আবার কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ রয়েছে। এ সুবাদে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বালু লুটপাট চালিয়ে আসলে ও কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়নি। গতবছরের ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটার পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মিদের শেয়ার বাতিল করে বিএনপি নেতাকর্মীকে শেয়ারদার নিয়ে ইজারাদারের লোকজন বেপরোয়াভাবে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছে।

সোমেশ্বরী নদীর শুধু তাওয়াকোচা মৌজায় ৭ একর এলাকায় বালু উত্তোলন অনুমতি থাকলেও ইজারা বহির্ভ‚ত এলাকা খাড়ামুড়া, বালিজুরি, রাঙ্গাজান, জোকাকুড়া, আয়নাপুর, দুপুরিয়া,বাগেরভিটা,মহারশি নদীর ইজারা বহির্ভ‚ত এলাকা শালচুড়া, সন্ধাকুড়া,গোমড়াসহ বিভিন্ন স্থানে শতশত একর এলাকা থেকে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছে বালুখেকোরা । শুধু তাই নয় কর্ণঝোড়া নদী,বাঁকাকুড়া এলাকার কালঘোষা নদীসহ ঝর্ণা, খালবিল নদী ও বনবিভাগের ছড়া ও পাহাড়ের সামাজিক বনের বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন বালু মহালের আবির্ভাব ঘটানো হয়েছে। বন বিভাগের সামাজিক বন ধ্বংস করে এসব এলাকা থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা ম‚ল্যের বালু অবাধে লুটপাট চালিয়ে আসছে বালুখেকোরা। বালুদস্যুদের থাবায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে পরেছে পাহাড় ও নদীর পাড়। সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা সদরের বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে, সদর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে, শালচুড়া, খৈলকুড়া,ডাকাবর,রাংটিয়াসহ বিভিন্ন হাট বাজার, গ্রামেগঞ্জে, পাড়ামহল­ায় রাস্তার পাশে অংখ্য স্থানে অবৈধ বালু স্তুপ করে রেখে বেচা-কেনা করা হচ্ছে। অবৈধভাবে শতশত ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বেপরোয়া ভাবে বালু উত্তোলনের কারনে বালিজুরি সেতু, বাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন বিভাগের সামাজিক বন হুমকির মুখে পড়েছে। ট্রাক, মাহিন্দ্র, ট্রলিগাড়িসহ ভারি যানবাহনে দিনে রাতে বালু সরবরাহের কারণে রাস্তাঘাট ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পরেছে। হুমকির সম্মুখীন হয়ে পরেছে পরিবেশের ভারসাম্য। সরকার বঞ্চিত হচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে। অবৈধ বালু লুটপাট বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে সাজাও দেওয়া হয়েছে।

ভাঙচুর করা হয়েছে বালু উত্তোলন যন্ত্র। করা হয়েছে জরিমানা। কিন্তু বালু লুটপাট বন্ধ হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে বালু লুটপাট বন্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে গিয়ে বালুখেকোদের তোপের মুখেও পরতে হচ্ছে প্রশাসনকে। ফলে বালু লুটপাট বন্ধে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন । বন্ধ হচ্ছে না বালু লুটপাট। বর্তমানে প্রতিদিন কোটি টাকা ম‚ল্যের বালু লুটপাট ও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। ইজারা বহির্ভ‚ত এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়ে কথা হয় সোমেশ্বরী নদীর তাওয়াকোচা বালু মহালের ইজারাদার সামীম আহমেদের সাথে তিনি বলেন ড্রেজার মেশিন মালিকরা তাদের কোন কথাই শুনেন না। এ দায় তারা নিতে অস্বীকার করেন।

মহারশি নদীর বালু মহালের ইজারাদার আসাদুজ্জামান স্বপন বলেন ইজারা বহির্ভ‚ত এলাকায় তার কোন লোকজন বালু উত্তোলনের সাথে জরিত নেই। অবশেষে ১৬ জানুয়ারি উপজেলা প্রশাসন বালু মহালের ইজারার নীতিমালা ভঙ্গের দায়ে সোমেশ্বরী নদীর বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেন। বালু মহালের টোল আদায় ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনিন্দা রানী ভৌমিক বলেন বালু মহালের ইজারাদার বালু উত্তোলনের নীতিমালা ভঙ্গ করে বালু উত্তোলনের দায়ে ইজারাদারকে কারন দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল অবৈধভাবে বালু লুটপাট বন্ধে বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অবৈধ বালু লুটপাটের দায়ে সাজাও দেয়া হয়েছে। ভাংচুর করা হয়েছে বালু উত্তোলন যন্ত্র। করা হয়েছে জরিমানা। তিনি আরও বলেন ইজারা বহির্ভ‚ত এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের দায়ে সোমেশ্বরী নদীর বালু মহালের বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছে। পরবর্তী ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন