ডার্ক মোড
Thursday, 19 September 2024
ePaper   
Logo
সাংবাদিকদের উপর প্রতিহিংসার খড়গ বন্ধ করুন

সাংবাদিকদের উপর প্রতিহিংসার খড়গ বন্ধ করুন

হামিদ মোহাম্মদ জসিম

অনেকেই সতীর্থ সাংবাদিকদের দুঃখ দুর্দশা দেখে উল্লাস প্রকাশ করছেন। আমরা জানি কাকের মাংস কাকে খায় না। কিন্তু একজন সাংবাদিক খাদে পড়লে অনেক সতীর্থই চামচিকার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এবিষয়টি ক্রমশ প্রকট আকার ধারণ করছে।

এমনিতেই দেশের সাংবাদিক সমাজ দুই ভাগে বিভক্ত। আওয়ামী লীগ, এন্ট্রি আওয়ামী লীগ। অনেকটা আম জনতার মতোই। এরপরও সাংবাদিকদের মধ্যে কিছুটা রাখঢাক ছিল। একজনের সমস্যায় আরেকজন পাশে থাকতেন। হালে তাও নেই। এমনকি আপন ঘরানায়ও নানা বিভক্তি। ব্যক্তিগত ঈর্ষা ও সাংগঠনিক কারণে নিজেদের মধ্যেই অনেক সমস্যা। একজন আরেকজনকে দেখতে পারেন না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামনাসামনিও সৌজন্য প্রকাশে অনীহা। পেছনে তো একে অন্যের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করেন। গত কয়েক বছর ধরে চলমান এ ধারাটি রাজনৈতিক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রায় উদ্ভাসিত হয়েছে।

বর্তমানে আওয়ামী ঘরানার অধিকাংশ ডাকসাইটে সাংবাদিকই হত্যা মামলার আসামী। সঙ্গত কারণেই প্রেসক্লাবে তাদের আনাগোনাও নেই। বলতে গেলে অনেকটাই আত্মগোপনে আছেন তাঁরা। হাতেগোনা দু'একজনকে দেখা গেলেও আগের মতো ম্যারাথন আড্ডা মারেন না। এতে করে আওয়ামী ঘরানায় নেতৃত্ব শূন্যতা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে।

এরই মধ্যে সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ক্ষমতাচ্যূত সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত ও একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবুর গ্রেফতারে অনেকেই নড়েচড়ে বসেছেন। বিশেষ করে সীমান্ত পারি দিয়ে দেশান্তরী হওয়ার বিষয়টিই অনেকের আলোচনার বিষয়। এনিয়ে অনেক কাছের মানুষও আড়ালে আবডালে নানা কথা বলছেন। তাদের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করছেন। আমরা দেখছি, শুনছি আর বিস্মিত হচ্ছি। অনেক সুশীলতো এফবি কিংবা টকশোতে দুজনকেই তুলোধুনো করছেন। কিন্তু একবারও বলছেন না, পেশাদার সাংবাদিকদের কোন যুক্তিতে, কোন অধিকারে হত্যা মামলার আসামী করা হচ্ছে? মানলাম এরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসর। তাই বলে মিথ্যা হত্যা মামলার আসামী করবেন?

ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটিয়ে আম জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের শপথ নিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারে মনোনিবেশ করেছে বর্তমান বিএনপি সমর্থিত ও জামাত নিয়ন্ত্রিত অন্তর্বতীকালীন সরকার। তারা ভালো কিছু করবে, বিশেষ করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে না, এমনই আমাদের প্রত্যাশা। কিন্তু সাংবাদিকদের উপর যেভাবে প্রতিহিংসার খড়গ চালানোর অপপ্রয়াস চলছে, তাতো সুলক্ষণ নয়। আমরা চাই সব কিছু ছাপিয়ে দেশটা ভালো চলুক, দেশের মানুষ সুখে শান্তিতে থাকুক। এক্ষেত্রে বুদ্ধিবৃত্তিক পেশার সাংবাদিক, সাহিত্যিক, বিশ্লেষক, গবেষক সর্বোপরি সুচিন্তকদের সকল দরজা জানালা বন্ধ করে রাষ্ট্র সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মকান্ডকে এগিয়ে নিতে পারবেন?

একাত্তরে বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে আমরা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বুদ্ধিজীবী সূর্য সন্তানদের হারিয়েছি। ২৪ সালে আমরা আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা মামলার আসামী হিসেবে কাঠগড়ায় দেখতে চাই না। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আইনের আওতায় আনুন, নয়তো প্রতিহিংসার আগুনে দগ্ধ করে দেশ ও দশের ক্ষতি করবেন না। মনে রাখবেন, পাপ বাপকেও ছাড়ে না।

লেখক, নির্বাহী সম্পাদক এবিনিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম, সাপ্তাহিক বাংলা বিচিত্রা

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন