আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ভারতের জাতীয় নির্বাচনের দুদিন আগে বুধবার নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেস। এতে নাগরিকদের বিনামূল্যে সিলিন্ডার গ্যাস ও পাঁচ কেজি রেশন সরবরাহসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লোকসভা নির্বাচন শুরু হতে আর দু’দিন বাকি। আগামী শুক্রবার প্রথম দফায় ভারতের ১০১টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। তার আগে বুধবার নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তথা কেন্দ্রের বিরোধী জোট ‘ইনডিয়া’র অন্যতম শরিক তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র তৃণমূল ভবন থেকে সংবাদ সম্মেলন করে দলের ১০টি প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছেন। তবে এটাকে প্রথাগত ‘ইশতেহার’ বলতে চাইছে না তৃণমূল। নির্বাচনী এই ইশতেহারকে বলা হচ্ছে ‘দিদির শপথ’। কেন্দ্রে ‘ইনডিয়া’ জোট সরকার গঠন করলে এসব প্রতিশ্রুতি পালন করা হবে বলে জানিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব।

তৃণমূলের ১০ প্রতিশ্রুতিতে ১০০ দিনের কাজ থেকে শুরু করে রেশন, পরিবার প্রতি বিনামূল্যে ১০টি সিলিন্ডার সরবরাহ, আবাসনের পাশাপাশি সিএএ, এনআরসি, অভিন্ন দেওয়ানি বিধির মতো আইনের কথাও উঠে এসেছে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকারের একাধিক প্রকল্প এবং প্রতিশ্রুতির বিকল্প ঘোষণা করেছে তৃণমূল। এবার লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে বিজেপির পক্ষ থেকে বার বার উঠে এসেছে ‘মোদির গ্যারান্টি’র প্রসঙ্গ। মোদি নিজেও পশ্চিমবঙ্গে এসে এই দুই শব্দবন্ধে জোর দিয়েছেন।

মোদি বলেছেন, তিনি ভোটের আগে যে গ্যারান্টিগুলো দিচ্ছেন, নিশ্চিতভাবেই ভোটের পর তা পালন করা হবে। বিজেপির সেই ‘মোদির গ্যারান্টি’র বিকল্প হিসাবেই ইশতেহারে ‘দিদির শপথ’ পাঠ করল তৃণমূল। প্রধানমন্ত্রীর আবাস যোজনার বিকল্প হিসাবে সেখানে রয়েছে গরিবদের পাকা বাড়ি গড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। ‘লাখপতি দিদি’র বিকল্প হিসাবে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’র ধাঁচে নারীদের মাসিক আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছে তৃণমূল। এছাড়াও রয়েছে ‘আয়ুষ্মান ভারত’র বিকল্প স্বাস্থ্যসাথী বিমা। পাশাপাশি সিএএ, এনআরসি এবং অভিন্ন দেওয়ানি বিধির মতো যে সব আইন চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মোদি, তা সম্পূর্ণ বিলোপ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মমতা।

• তৃণমূল কংগ্রেসের ইশতেহারে যা আছে

• ভারতের সব জব কার্ডধারীদের ১০০ দিনের কাজের নিশ্চয়তা দেওয়া হবে। দেশজুড়ে সব শ্রমিক দৈনিক ৪০০ টাকা বর্ধিত ন্যূনতম মজুরি পাবেন।

• সব দরিদ্র পরিবারের জন্য আবাসন নিশ্চিত করা হবে। সব পরিবারকে নিরাপদ, পাকা বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে।

• দেশের প্রত্যেক বিপিএল পরিবার বছরে ১০টি করে সিলিন্ডার বিনামূল্যে পাবেন। এর মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব রান্নার প্রক্রিয়া ব্যবহারের অভ্যাস বৃদ্ধি করা হবে।

• প্রতি মাসে দেশের প্রত্যেক রেশন গ্রাহককে পাঁচ কেজি রেশন বিনামূল্যে দেওয়া হবে। বিনামূল্যে রেশনের খাদ্যসামগ্রী মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে।

• প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যুবকদের উন্নতির স্বার্থে তফসিলি জাতি, জনজাতি প্রভৃতি অনগ্রসর জাতির উচ্চশিক্ষার বৃত্তি বাড়ানো হবে। ৬০ বছরের বেশি বয়স্কদের বার্ধক্য ভাতার পরিমাণও বৃদ্ধি করা হবে। তারা মাসে ১০০০ টাকা করে বার্ষিক ১২ হাজার টাকা পাবেন।

• স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, দেশের সব কৃষককে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য প্রদানের আইনগত গ্যারান্টি দেওয়া হবে। যা সব ফসলের উৎপাদনের গড় খরচের চেয়ে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ বেশি ধার্য করা হবে।

• পেট্রল, ডিজেল এবং এলপিজি সিলিন্ডারের দাম সাশ্রয়ী মূল্যে সীমাবদ্ধ করা হবে। এগুলোর দামের ওঠানামা নিয়ন্ত্রণের জন্য মূল্য স্থিতিশীলতা তহবিল (প্রাইস স্টেবিলাইজেশন ফান্ড) তৈরি করা হবে।

• ২৫ বছর পর্যন্ত দেশের সকল স্নাতক এবং ডিপ্লোমা অর্জনকারীর দক্ষতা বাড়াতে এক বছরের শিক্ষানবিশ প্রতিশিক্ষণ প্রদান করা হবে। শিক্ষানবিশদের অর্থনৈতিক সহায়তার জন্য মাসিক বৃত্তি দেওয়া হবে। এ ছাড়া, উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারীরা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা পাবেন।

• বহুল বিতর্কিত সিএএ বিলুপ্ত ও এনআরসি বন্ধ করা হবে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কোথাও প্রয়োগ করা হবে না।

• বাংলার কন্যাশ্রী প্রকল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের শিক্ষার জন্য বার্ষিক এক হাজার টাকা এবং এককালীন ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে।

• সব নারীকে মাসিক আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের বদলে উন্নততর স্বাস্থ্যসাথী বিমা চালু করা হবে। যার ফলে ১০ লাখ টাকার বিমার সুবিধা পাওয়া যাবে।

তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অমিত ছাড়াও দলটির নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় চন্দ্রিমা বলেন, তাদের ইশতেহার প্রায় ১০০ পাতার দীর্ঘ। দিদির শপথগুলোকে সেখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ১০টি শপথের পাশাপাশি রাখা হয়েছে ১৫টি অধ্যায়। কেন্দ্রে ‘ইনডিয়া’ ক্ষমতায় এলে এই প্রতিশ্রুতি পালনে দেশের মানুষের কাছে তৃণমূল দায়বদ্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন দলটির এই নেত্রী।