ডার্ক মোড
Friday, 01 November 2024
ePaper   
Logo
পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলনের আশায় রাজবাড়ীর চাষিরা

পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলনের আশায় রাজবাড়ীর চাষিরা

রাজবাড়ী প্রতিনিধি

রাজবাড়ীর জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে সাদা ফুলের বাতাসে দোল খাচ্ছে লুকায়িত ‘কালো সোনা’ খ্যাত পেঁয়াজের বীজ। আর সাদা ফুলের মাঝে কালো বীজেই রয়েছে চাষীর সোনালী স্বপ্ন। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে রাজবাড়ীতে কালো সোনা খ্যাত পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

পেঁয়াজের দানা চাষীরা বলছেন, পেঁয়াজের দানা (বীজ) উৎপাদন অতি লাভজনক হলেও ঝুঁকিও রয়েছে শতভাগ। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে উৎপাদন ভালো ও লাভজনক হয়। আর বিরূপ হলেই মাথায় হাত পড়ে যায় চাষীদের।

জানা গেছে, পেঁয়াজ ও পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে রাজবাড়ী জেলার মাটি ও আবহাওয়া অত্যন্ত উপযোগী। এ জেলার উৎপাদিত পেঁয়াজ বীজ গুণে ও মানে উৎকৃষ্ট। তাই সারা দেশের মধ্যে পেয়াজ উৎপাদনে ৩য় স্থানে রয়েছে রাজবাড়ী জেলা। দেশের উৎপাদিত পেঁয়াজের ১৪ শতাংশ আসে এ জেলা থেকে। উৎপাদিত বীজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ীতে ফরিদপুরী ও তাহেরপুরী জাতের বীজ আবাদ হয়ে থাকে। জেলার চলতি বছর সদরে ৪২ হেক্টর, পাংশায় ৪৪ হেক্টর, কালুখালীতে ৪৪ হেক্টর, বালিয়াকান্দিতে ১০ হেক্টর ও গোয়ালন্দে ৫ হেক্টর জমিতে পেয়াজ বীজ আবাদ হয়েছে। গত অর্থ বছরে ১৭২ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজ আবাদ হলেও চলতি বছরে ২৯ হেক্টর জমিতে কম চাষাবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৫০০/৬০০ কেজি পেয়াজ বীজ উৎপাদিত হলে এ বছর প্রায় ৮০ মেট্রিক টনেরও বেশি পেঁয়াজ বীজ সংগ্রহ করতে পারবে চাষীরা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নে বাহাদুরপুর ও বালিয়াডাঙ্গা এলাকায় ফসলি মাঠে জমি থেকে ২ ফুট উচ্চতায় সবুজ ডগায় গোল আকৃতি সাদা ফুলগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে। তাছাড়া শেষ সময়ের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে চাষিরা।

বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের গ্রামের পেঁয়াজ দানা চাষী মোঃ গোলজার হোসেন মৃধা দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ তিনি পেঁয়াজ দানা চাষ করে আসছেন। এ বছর তিনি ৬ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষাবাদ করেছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে পেঁয়াজের বীজ থেকে বাম্পার ফলনের আশা করছেন তিনি।

দৌলতদিয়া ইউনিয়নের তোরাপ শেখের পাড়া এলাকার পেঁয়াজের বীজ চাষি হুমায়ুন আহম্মেদ বলেন, তিনি চলতি মৌসুমে ২ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করেছেন। আরো বলেন, এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করতে খরচ পড়ে ৫০-৬০ হাজার টাকা। আর বিঘা প্রতি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হয় দুই মণের বেশি যা দেড় লক্ষ টাকার অধিক বিক্রি করা যায়। আবহাওয়া ভালো হলে খরচ বাদে এই পেয়াজের বীজ চাষে লাভ হয় দ্বিগুণেরও বেশি লাভবান হবো, তাই এগুলো ‘কালো সোনা’ নামে খ্যাতি পেয়েছে।

গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান জানান, এ উপজেলার মোট ৫ হেক্টর জমিতে চাষীরা পেঁয়াজ দানা চাষাবাদ করেছে। কয়েকদিন যাবৎ রৌদের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় আশংঙ্কা রয়েছেন পেয়াজ বীজের বাম্পার ফলন নিয়ে। তবে আবহাওয়া ভালো থাকলে চাষিরা অনেক লাভবান হবে।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে রাজবাড়ী জেলা বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। গত বছর ১৭২ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজ আবাদ হয়েছিল। চলতি অর্থ বছরে তা কমে ১৪৩ হেক্টর হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ বছর হেক্টর প্রতি ৫০০/৬০০ কেজি ফলন হবে। বীজের মানভেদে ২-৫ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে বীজ।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন