ডার্ক মোড
Friday, 01 November 2024
ePaper   
Logo
সাতক্ষীরায় চলতি বছর কৃষি খাতে ঋণ বরাদ্দ বেড়েছে ৩৫ শতাংশ

সাতক্ষীরায় চলতি বছর কৃষি খাতে ঋণ বরাদ্দ বেড়েছে ৩৫ শতাংশ

কে এম আনিছুর রহমান, সাতক্ষীরা

চলতি অর্থবছরে সাতক্ষীরা জেলায় কৃষি খাতে ঋণ বরাদ্দ বাড়িয়েছে কৃষি ব্যাংক, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি। খাদ্যশস্য, মৎস্য, পশু পালন, কৃষি যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য খাতে এ ঋণ পাবেন কৃষক। ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলায় কৃষি উদ্যোক্তা বেড়েছে।

ফলে তাদের চাহিদানুযায়ী ঋণ বরাদ্দও বাড়ানো হয়েছে। কৃষি ব্যাংক সাতক্ষীরা মুখ্য আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রিয়াজুল ইসলাম বলেন, কোনো রকম হয়রানি ছাড়াই প্রকৃত কৃষি উদ্যোক্তার মাঝে এসব ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন কৃষি ব্যাংকের গ্রাহক সেবার মান খুবই ভালো। একজন প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক বা উদ্যোক্তা দালাল কিংবা হয়রানি ছাড়াই সরাসরি ব্যাংকে এসে ঋণ গ্রহণ করতে পারছেন। শুধু তাই নয়, গ্রাহক যে খাতে ঋণ গ্রহণ করছেন প্রকৃতপক্ষে সেই খাতে বিনিয়োগ করছেন কিনা সেটিও মনিটর করা হচ্ছে ব্যাংকের পক্ষ থেকে। তাছাড়া ঋণসংক্রান্ত ব্যাপারে কৃষি ব্যাংক সাতক্ষীরার ১৭টি শাখায় কোনো রকম আর্থিক লেনদেন বা অনিয়মের অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

কৃষি ব্যাংক সাতক্ষীরা মুখ্য আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে জানা গেছে, জেলার ১৭ শাখার অধীনে চলতি অর্থবছরের জন্য কৃষি ঋণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪০৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্যে খাদ্যশস্যে ঋণ বরাদ্দ দেয়া হয় ১১৩ কোটি, মৎস্য খাতে ২৪৩ কোটি, প্রাণিসম্পদ ও পশু পালনে ২৫ কোটি, সেচ ও কৃষি যন্ত্রাংশে ৩২০ কোটি, বীজ উৎপাদন ও খাদ্যশস্য বাজারজাতে ১ কোটি ২০ লাখ এবং দারিদ্র্য বিমোচন ও অন্যান্য খাতে ১৮ কোটি টাকা।

২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি ব্যাংক সাতক্ষীরা আঞ্চলিক অফিসের অধীনে ঋণ বরাদ্দ ছিল ৩০৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এ হিসাব অনুযায়ী চলতি অর্থবছর কৃষিঋণ বরাদ্দ বেড়েছে ১০৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। শতকরা হিসাবে ৩৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

২০২২-২৩ অর্থবছরে খাদ্যশস্যে ঋণ বরাদ্দ দেয়া হয় ৮১ কোটি ৫০ লাখ, মৎস্য খাতে ১৭০ কোটি, প্রাণিসম্পদ পশু পালনে ২৩ কোটি, সেচ ও কৃষি যন্ত্রাংশে ৩ কোটি ৫০ লাখ, দারিদ্র্য বিমোচনে ৪ কোটি, শস্য গুদামজাত ও বীজ উৎপাদনে ১ কোটি ৫২ লাখ এবং অন্যান্য খাতে ২০ কোটি টাকা।

ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২৫ অক্টবর পর্যন্ত ৮৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ঋণ বিরতণ করা হয়েছে, যা বরাদ্দের ২২ শতাংশ। এছাড়া ঋণ আদায় হয়েছে ৬৭ কোটি ৯ লাখ টাকা অর্থাৎ ৩৮ শতাংশ। তবে গেল অর্থবছর বিতরণ করা ঋণের শতভাগ আদায় হয়েছে।

কৃষি উদ্যোক্তা সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কাটিয়া এলাকার আরিফুজ্জামান জানান, দেবহাটা উপজেলার শসাডাঙ্গা গ্রামে সাড়ে ছয় বিঘা জমির ওপর স্টার ফিশ প্রকল্প নামে একটি মৎস্য খামার রয়েছে তার। খামারে উৎপাদন বাড়াতে কৃষি ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখা থেকে ২৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেন স্টার ফিস প্রকল্পে। ২০২১ সাল থেকে ঋণ চলমান রয়েছে তার। বছর শেষে ব্যাংকের পাওনা সুদ পরিশোধ এবং অন্যান্য খরচ উঠিয়ে ১২-১৪ লাখ টাকা লাভ হয়েছে তার। কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণের টাকা পেয়ে অনেক উপকৃত হয়েছেন তিনি।

সাতক্ষীরার দহকুলা গ্রামের মৎস্য চাষী আজমল হোসেন জানান, মাছ চাষের ওপর ৩৫ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেছেন কৃষি ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখা থেকে। মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে পুরো অর্থ বিনিয়োগ করেছেন তিনি। ব্যাংকের বার্ষিক সুদ পরিশোধ ও মৎস্য ঘেরের উৎপাদন খরচ তুলেও প্রতি মৌসুমে ৮-১০ লাখ টাকা লাভ হচ্ছে তার।

আরিফুজ্জামান ও আজমলের মতো ৩৫-৩৬ হাজার কৃষি উদ্যোক্তা রয়েছেন সাতক্ষীরায়। এসব উদ্যোক্তা কৃষি ব্যাংক থেকে বিভিন্ন অংকে কৃষিঋণ নিয়ে গড়ে তুলেছেন কৃষি খামার।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন