ডার্ক মোড
Friday, 01 November 2024
ePaper   
Logo
বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় বাড়ছে আগাম জাতের শিম চাষ

বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় বাড়ছে আগাম জাতের শিম চাষ

পাবনা প্রতিনিধি

শিম শীতকালিন সবজি হলেও বাজারে ভালো দাম ও চাহিদা থাকায় বাড়ছে আগাম জাতের শিম চাষ। স্বল্প পূঁজি, ভালো ফলন ও লাভজনক হওয়ায় আগাম জাতের শিম চাষে ঝুঁকছেন কৃষককেরা। বাজারে বেশি দামে শিম বিক্রি করতে পেরে খুশি তারা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাটির ৪ থেকে ৫ ফুট উচু বাঁশের মাচায় থুকায় থুকায় ঝুলে আছে উচ্চ ফলনশিল অটো জাতের শিম। পরিবার নিয়ে সেই শিম গাছ পরিচর্যায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

চলতি মৌসুমে এবার অটো, রুপবান, চকলেট, কেরালাসহ বিভিন্ন জাতের শিম চাষ করছেন চাষীরা। এছাড়াও স্থানীয় জাতের শিমও আবাদ হয়েছে প্রচুর। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলন হবে বলে মনে করছেন তারা। কৃষকরা জানান, অতিমাত্রায় বৃষ্টি ও গরমে গাছের ফুলগুলো ঝড়ে যায়। সেই সঙ্গে গাছের পঁচনও দেখা দেয়। এবছর প্রায় সব এলাকায় কমবেশি শিমের আবাদ হলেও আটঘরিয়া উপজেলার মাজপাড়া, চাঁদভা, সড়াবাড়িয়া, খিদিরপুর, দেবোত্তরসহ বেশ কিছু এলাকায় বেশি পরিমাণে আগাম জাতের শিম চাষ করা হয়েছে।

কথা হয় ধলেশ্বর গ্রামের শিম চাষী মোস্তফার সাথে, তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে আগাম জাতের শীম চাষ করছেন। এবছর ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় খুব খুশি তিনি। একই এলাকার কৃষক ওসমান জানান, এবছর ৫ বিঘা জমিতে অটো জাতের শিম চাষ করেছেন তিনি। তার এই শিম আবাদ দেখে এলাকার অনেকেই এগিয়ে এসেছেন শিম চাষে। তিনি জানান, আগাম জাতের এই শিমের বীজ জমিতে সাধারণত জুন মাসে বপন করতে হয়। বীজ বপনের ৩৫ থেকে ৪০ দিন পর গাছ গুলোতে ফুল আসতে শুরু করে। বৃষ্টিতে বা গাছগুলো মরে না গেলে ৫ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। এবছর বিঘা প্রতি ১ লাখ টাকা করে শিম বিক্রি হবে বলে তিনি মনে করছেন।

একই গ্রামের শিমচাষী নজরুল জানান, খরচ বাদে বিঘা প্রতি ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা লাভ হয় তার। তবে বর্তমান শিমের আবাদে নানা উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় কিছুটা বেড়েছে। তিনি জানান, বীজ লাগানোর পর থেকে এক বিঘা জমিতে শিম আবাদ করতে বীজ, সার, বাঁশ, তার, শ্রমিক, সেচ খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। শিমের গাছ মাচায় উঠে গেলে ফুল এবং ফল ধরার সময় পোকা দমন এবং পচন রোধে প্রায় প্রতিদিন ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। ৫০ থেকে ৫৫ দিনের মধ্যেই গাছে ফুল ও ফল ধরে জানান তিনি।

কথা হয় শিম চাষি মুকুল, রওশন, নুরুল, মকছেদ, মান্নানের সাথে তারা জানান, বাজারে প্রতি কেজি শিম ২০২ থেকে ২৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এই শিমগুলো উপজেলার মাজপাড়া চাঁদভা, খিদিরপুর, সড়াবাড়িয়া, মুলাডুলিতে এবং ধলেশ্বর মাদ্রাসার মার্কেটের শিমের আড়ৎতে বিক্রি করেন তারা। এছাড়াও পাইকারি বাজারের একাধিক ব্যবসায়ীরা জানান, এবছরের প্রথম দিকে প্রতি কেজি শিম ২০০ থেকে ২৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। দীর্ঘসময় ধরে এই দামটা চলমান আছে। তারা এই শিম ঢাকায় সরবরাহ করে থাকেন বলে জানান।

এবিষয়ে আটঘরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সজিব আল মারুফ জানান, শিম চাষের অন্যতম উপজেলা আটঘরিয়া। এই উপজেলায় আগাম শিম চাষ হওয়ায় কৃষকেরা লাভবান হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি গ্রীষ্মকালীন এই শিম নিজ দেশের চাহিদা পুরণ করে দেশের বাহিরে রপ্তানি করতে। এছাড়াও কৃষকদের নানা ভাবে মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে জানান তিনি।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপÍর সুত্রে জানা যায়, গত বছর এই উপজেলায় ১৫’শ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের শিম চাষ করা হয়েছিল। এবছর চলতি মৌসুমে ১৫'শ ৫৩ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করা হয়েছে। যা গতবছরের তুলনায় ৫৩ হেক্টর বেশি।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন