আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করায় সরকারের কার্যকর আর্থিক প্রতিবেদন ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো গঠনের উদ্যোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোঃ আবদুর রহমান খান, সরকারী ও বেসরকারী উভয় খাতের জন্য একটি শক্তিশালী এবং কার্যকর আর্থিক প্রতিবেদন ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো প্রতিষ্ঠার আহ্বান জারিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে একটি শক্তিশালী শাসন ব্যবস্থা তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘আর্থিক প্রতিবেদন ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো: সরকারি ও বেসরকারি খাত’ শীর্ষক আলোচনা সভার প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি বলেন, আর্থিক স্বচ্ছতা একটি সম্মিলিত দায়িত্ব, যা শুধু জাতীয় রাজম্ব বোর্ড ও করদাতাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি দুর্নীতি মোকাবিলা এবং সমৃদ্ধ জাতির গঠনের জন্য একটি জাতীয় কর্তব্য হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।
রেডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেনে ৫ নভেম্বর ২০২৪ সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত আলোচনা অনুষ্ঠানটি বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ আয়োজন করে। সময়পোযোগী সূচক ব্যবহার করে ২০২৫ সালের জন্য স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড কোডস অবজারভেন্স (ROSC A&A) এর তৃতীয় প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজনদের সাথে মতবিনিময় সূচনা করার জন্য আলোচনা সভাটি আয়োজন করা হয়।
এনবিআর চেয়ারম্যান রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠান (SOE), স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা এবং আইনানুগ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই প্রতিষ্ঠানসমূহ আন্তর্জাতিক হিসাবরক্ষণ মানদণ্ড অনুসরণ করতে বাধ্য, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব থাকায় তা সম্ভব হয় না। পেশাজীবীদের সহায়তায় কার্যকর আর্থিক প্রতিবেদন নিশ্চিত করার জন্য পরবর্তী ROSC প্রতিবেদন তৈরি করার সময় তিনি পেশাগত শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির পাশাপাশি যথাযথ সিস্টেম বিকাশের উপর গুরুত্ব প্রদান করার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন।
এর আগে ২০০৩ এবং ২০১৫ সালের ROSC প্রতিবেদন বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে, যেখানে কর্পোরেট আর্থিক প্রতিবেদনকে উন্নত করার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ২০০৩ সালের প্রতিবেদনে অপর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রক কাঠামো এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণের কম প্রবণতাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দুর্বলতা তুলে ধরা হয় এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিবেদন পদ্ধতি (IFRS) গ্রহণ ও একটি স্বাধীন ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (FRC) গঠনের সুপারিশ করা হয়। ২০১৫ সালের ROSC প্রতিবেদন দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রাত গুরুত্ব প্রদান করা হলেও মানদন্ড পালনের চ্যালেঞ্জ অব্যাহত ছিল।
অতিরিক্ত সচিব (বাজেট-১) ও জাতীয় কর্মসূচি পরিচালক, স্ট্রেনদেনিং পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজেমেন্ট টু এনাবল সার্ভিস ডেলিভারি (SPFMS), অর্থ বিভাগ বিলকিস জাহান রিমি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মার্গা পিটার্স এবং মূল বক্তা হিসেবে বিশ্বব্যাংকের লিড গভর্নেন্স স্পেশালিস্ট (ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট) সুরাইয়া জান্নাত বক্তব্য প্রদান করেন।
বিলকিস জাহান রিমি আর্থিক প্রতিবেদন ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো উন্নত করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে সরকার একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিতামূলক এবং টেকসই আর্থিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে।্
তিনি বলেন, জনসাধারণের আস্থা এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করার জন্য সরকারি খাতে আর্থিক প্রতিবেদন ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সরকারী সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সেবাদান এবং জাতীয় উন্নয়ন সূচক উন্নত করার জন্য লক্ষ্য স্থির করেছে।
মার্গা পিটার্স বলেন, রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠানে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সরকারের মনিটরিং সেল মানসম্মত প্রতিবেদন তৈরি করতে সহায়তা করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এবং ROSC এর লক্ষ্য অনুযায়ী একটি পরিপূর্ণ আর্থিক প্রতিবেদন কাঠামো প্রতিষ্ঠার যাত্রায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের পাশে রয়েছে।
সুরাইয়া জান্নাতের উপস্থাপনায় বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)-এর ROSC A&A প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয় যা বিভিন্ন দেশের হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষা মানদণ্ড অনুসরণ মূল্যায়ন করে আর্থিক ব্যবস্থা, স্বচ্ছতা ও বেসরকারী খাতের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়ক। বাংলাদেশের ROSC A&A গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারসমূহ চলমান রয়েছে যার মধ্যে আছে নতুন হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষা মানদণ্ড, হালনাগাদ পেশাগত শিক্ষা পাঠক্রম এবং একটি ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা যা সরকারি সেবা ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে রিপোর্টিং এর গুণমান উন্নত করেছে।
অনুষ্ঠানে সরকারী মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন পেশাজীবি সংস্থা এবং উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সাথে উন্মুক্ত আলোচনায় বিভিন্ন পরমর্শ তুলে ধরা হয়।