ভুয়া রপ্তানি দেখিয়ে ৩০৮১ কোটি টাকা আত্মসাৎ
নিজস্ব প্রতিবেদক
রপ্তানির জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় কাঁচামাল। নিয়ম অনুযায়ী, যে পরিমাণ রপ্তানি হবে, কাঁচামাল আমদানি তার চেয়ে কম হওয়ার কথা। তবে প্রিমিয়ার ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ শাখায় ঘটে উল্টো ঘটনা। রপ্তানির চেয়ে কাঁচামাল আমদানি দেখানো হয় কয়েক গুণ। আবার কাঁচামালের ৯০ শতাংশই কেনা দেখানো হয়েছে স্থানীয় বাজার থেকে। আদৌ রপ্তানি না হওয়ায় প্রথার বাইরে ঋণের টাকায় ডলার কিনে দেখানো হয়েছে ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায় সমন্বয়। প্রত্যেকের অনুমোদিত সীমার কয়েক গুণ পর্যন্ত টাকা দেওয়া হয়েছে। এভাবে অভিন্ন উপায়ে ৪৩ প্রতিষ্ঠানের ভুয়া রপ্তানির আড়ালে বের করে নেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৮১ কোটি টাকা। ঋণের সব টাকাই এখন অনাদায়ী। পাঁচ বছর ধরে এমন ঘটনা ঘটলেও সবই ছিল আড়ালে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এমন জালিয়াতির আদ্যোপান্ত বের করে এনেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ব্যাংক পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালীরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ডা. এইচ বি এম ইকবাল পরিবারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংক। ইকবাল দীর্ঘদিন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান। তাঁর এক ছেলে মঈন ইকবাল বর্তমানে ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান এবং আরেক ছেলে মোহাম্মদ ইমরান ইকবাল পর্ষদের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান। তাঁর প্রয়াত স্ত্রী মমতাজ ইকবালও ছিলেন ব্যাংকটির পরিচালক। অভিযোগ আছে, ব্যাংক থেকে নানা উপায়ে ইকবাল পরিবারের অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি জেনেও বিভিন্ন সময় নীরব ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত ফেব্রুয়ারিতে প্রিমিয়ার ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ শাখায় এমন অনিয়মের তদন্তে যায় বিএফআইইউ। পরে গত এপ্রিলে অধিকতর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) প্রতিবেদন দেয় সংস্থাটি। যে কর্মকর্তার নেতৃত্বে পরিদর্শন ও দুদকে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছিল, তাঁকে পুরস্কারের বদলে ওই সময় বদলি করেন সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। অবশ্য সরকার পতনের পর দৃশ্যপটে কিছুটা বদলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে পরিদর্শন পরিচালনা করছে।
বিএফআইইউর পরিদর্শনে উঠে এসেছে, চলতি হিসাব পরিচালিত হয় মূলত ব্যবসার দৈনন্দিন খরচ মেটানোর জন্য। আর রপ্তানি আয় থেকে ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায় পরিশোধ করা হয়। অথচ নারায়ণগঞ্জ শাখা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের চলতি হিসাব বিকলন বা ঋণের অর্থ ডলারে রূপান্তর করে দায় শোধ করেছে। এভাবে ৩ হাজার ১৪২ কোটি টাকা ৩৫ কোটি ৯৬ লাখ ডলারে রূপান্তর করে ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায় সমন্বয় করা হয়েছে। এ ঘটনাকে নজিরবিহীন ও ব্যাংকিং রীতিনীতির পরিপন্থি হিসেবে উল্লেখ করে পরিদর্শক দল। আবার ২৫টি রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের ১৪২ কোটি ২৬ লাখ ডলার (১৭ হাজার ৭১ কোটি টাকা) আমদানি দেখানো হয়েছে। এর বিপরীতে রপ্তানি দেখানো হয়েছে মাত্র ৬৪ কোটি ৬২ লাখ ডলার বা ৭ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা। আবার ৪৩টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ইস্যু করা ১ হাজার ১৭৯ কোটি টাকার কাগুজে ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্রে স্বীকৃতি দিয়ে ঋণ সৃষ্টি করেছে। এর বাইরে শাখার ১ হাজার ৫৭৩টি ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে বকেয়া আছে ৬২৯ কোটি টাকা। এই অর্থ এখন শাখাকে ফোর্স ঋণ সৃষ্টি বা অন্য উপায়ে পরিশোধ করতে হবে। শাখা থেকে ১৮টি প্রতিষ্ঠানকে সীমাতিরিক্ত অননুমোদিত ব্যাক টু ব্যাক এলসি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। শাখার ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে সৃষ্ট স্বীকৃত বিলের ৬২১ কোটি টাকা স্বল্পমেয়াদি ঋণে রূপান্তর করে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনের সুপারিশ অংশে বলা হয়েছে, সার্বিক পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়, শাখা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে যোগসাজশে সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছে। শাখা থেকে অননুমোদিত ঋণসীমার অতিরিক্ত ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলা হয়। পরে আবার তাতে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ফোর্স ঋণ সৃষ্টি করে এলসির দায় সমন্বয় করা হয়েছে। এসব অনাদায়ী ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায় মেয়াদি ঋণে রূপান্তরের জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর গত বছরের ২৫ জুলাই একটি চিঠি দেন তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক শহীদ হাসান মল্লিক। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায় সমন্বয়ের ক্ষেত্রে ব্যাংকটির শীর্ষ নির্বাহীসহ প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ অবগত ছিল। শাখা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও প্রধান কার্যালয়-সংশ্লিষ্ট বিভাগ অনিয়ম ও জালিয়াতির দায় এড়াতে পারে না।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, প্রিমিয়ার ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ শাখায় কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যারের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে ভুয়া কমিটমেন্ট আইডি তৈরির মাধ্যমে ৪৩ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভুয়া বিল, ব্যাক টু ব্যাক এলসি ইত্যাদির মাধ্যমে আনুমানিক ৩ হাজার ৮১ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে চিহ্নিত হয়েছে এই অনিয়ম। পরিদর্শন দলের নির্দেশনায় অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছয় কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গত ১১ জুলাই ব্যাংক থেকে দুদকে অভিযোগ করা হয়।
কোন প্রতিষ্ঠানের নামে কত টাকা লোপাট
বিএফআইইউর পরিদর্শন প্রতিবেদনে কোন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কী ধরনের অনিয়ম হয়েছে, তা বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়েছে, তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানির জন্য আমদানির পরিমাণ কোনোভাবে ৯০ শতাংশের বেশি হবে না। টোটাল ফ্যাশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান গত পাঁচ বছরে ১৯ কোটি ৫২ লাখ ডলারের কাঁচামাল আমদানি দেখিয়েছে। আর রপ্তানি দেখানো হয়েছে মাত্র ৪ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের। আবার রপ্তানির কাঁচামালের বড় অংশই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। অথচ প্রতিষ্ঠানটির ব্যাক টু ব্যাক এলসির ৯৭ শতাংশই হয়েছে স্থানীয়ভাবে। এটি অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক উল্লেখ করে আদৌ রপ্তানি হয়েছে কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ করেছে পরিদর্শক দল। কেননা রপ্তানি আয়ের বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক এলিসির দায় সমন্বয় করার কথা। অথচ এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের চলতি হিসাব থেকে টাকাকে ডলারে রূপান্তর করে দায় শোধ করা হয়েছে। আর চলতি হিসাবে অর্থের উৎস নগদ জমা বা শাখা থেকে দেওয়া ঋণ। এটিকে জালিয়াতি ও ব্যাংকিং রীতিনীতি পরিপন্থি উল্লেখ করেছে পরিদর্শক দল। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় এ ধরনের জালিয়াতি উদ্ঘাটিত না হওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক বলা হয়েছে। আবার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদিত ঋণসীমা ৫৯ কোটি টাকা। অথচ গ্রাহকের কাছে এখন পাওনা রয়েছে ৩৪৬ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অবন্তী কালার টেক্সের ক্ষেত্রেও ঘটেছে একই রকম জালিয়াতি। গত পাঁচ বছরে প্রতিষ্ঠানটি ১৪ কোটি ৩৪ লাখ ডলার আমদানির বিপরীতে রপ্তানি দেখিয়েছে ৭ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যাক টু ব্যাক এলসির ৯৭ দশমিক ৩৪ শতাংশই স্থানীয়। এ ক্ষেত্রেও চলতি হিসাব থেকে টাকাকে ডলারে রূপান্তর করে এলসির দায় শোধ করা হয়েছে। অবন্তী কালার টেক্সের কাছে এখন ব্যাংকের পাওনা ১৯৮ কোটি টাকা। একই উপায়ে কাপড় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ডোয়াসুল্যান্ড অ্যাপারেলস ৩ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের রপ্তানির বিপরীতে আমদানি দেখিয়েছে ১৭ কোটি ৪২ লাখ ডলার। ব্যাক টু ব্যাক এলসির ৮৯ দশমিক ৩৯ শতাংশই স্থানীয়। প্রতিষ্ঠানটির ৭৩ কোটি টাকা ঋণসীমার বিপরীতে এখন ব্যাংকের পাওনা ২৭০ কোটি টাকা। ক্রনি অ্যাপারেলসের ৮০ কোটির বিপরীতে ১৪৯ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ১ কোটি ৬৭ লাখ ডলার রপ্তানির বিপরীতে আমদানি দেখিয়েছে ৪ কোটি ৫৬ লাখ ডলার, যার ৯১ দশমিক ৩৯ শতাংশই স্থানীয়। এইচকে অ্যাপারেলস ৪ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের রপ্তানির বিপরীতে আমদানি দেখিয়েছে ১০ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। এর ৯৯ দশমিক ৯৩ শতাংশই দেখানো হয়েছে স্থানীয় আমদানি। প্রতিষ্ঠানটির ৪৫ কোটি টাকা সীমার বিপরীতে ১১৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। আমানা নিট ফ্যাশন ও আরটি ফ্যাশনের ২৮ কোটি টাকা সীমার বিপরীতে ৮৬ কোটি টাকা দিয়েছে ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটি ৯৫ লাখ ডলারের রপ্তানির জন্য ৩ কোটি ৫ লাখ ডলারের আমদানি দেখিয়েছে, যার ৯০ শতাংশই আবার স্থানীয়।
বিএফআইইউর প্রতিবেদনে দেখা গেছে, হুবহু একই রকম অনিয়মের মাধ্যমে ৪৩ প্রতিষ্ঠানকে ঋণের নামে অর্থ বের করে নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ শাখা। সব ক্ষেত্রেই যে পরিমাণ রপ্তানি দেখানো হয়েছে, কাঁচামাল আমদানি দেখানো হয়েছে এর অনেক বেশি। যে আমদানি দেখানো হয়েছে, তার ৯০ শতাংশের বেশি স্থানীয়। রপ্তানি আয় থেকে যেভাবে আমদানি দায় পরিশোধের কথা, এর একটি ক্ষেত্রেও তা হয়নি। শাখা থেকে ঋণ সৃষ্টি করে কিছু টাকা প্রথমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছে। তা আবার ডলারে রূপান্তর করে কিছু ক্ষেত্রে হয়েছে ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায় সমন্বয়। অনেক ক্ষেত্রে রাখা হয়েছে অসমন্বিত। প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদিত ঋণসীমার চেয়ে অনেক বেশি ঋণ দেওয়া হয়েছে। যদিও রহস্যজনক কারণে প্রধান কার্যালয় এ নিয়ে কখনও আপত্তি তোলেনি। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবছর শাখাটিতে পরিদর্শন করলেও তারাও এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেয়নি। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে পরিদর্শক দল এসব বিষয় প্রতিবেদনে আনেনি।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অপটিমাম ফ্যাশনের ১০৬ কোটি টাকা ঋণসীমার বিপরীতে দেওয়া হয়েছে ২১৮ কোটি টাকা। আরএজেড অ্যাপারেলসের ৭১ কোটি ৫০ লাখ টাকার বিপরীতে ১১৭ কোটি, আহানা নিট কম্পোজিটের ১৮ কোটি টাকা অনুমোদিত সীমার বিপরীতে ১০৪ কোটি, ওয়েস্ট অ্যাপারেলসের ৫৫ কোটি টাকা সীমার বিপরীতে ৯৩ কোটি, নিট রিফলেক্সের ৪৪ কোটি ৫০ লাখের বিপরীতে ৮৭ কোটি, এমবি নিট ফ্যাশনের ৫৫ কোটি টাকা সীমার বিপরীতে ৬৫ কোটি, আমানা নিটেক্স লিমিটেড ও আমানা নিটেক্সের ৪৬ কোটির বিপরীতে ৫৮ কোটি, নিট গার্ডেনের ২২ কোটি টাকা অনুমোদিত সীমার বিপরীতে ৪০ কোটি, নিউ রেজুলি অ্যাপারেলসের ২৪ কোটির বিপরীতে ২৯ কোটি টাকা ব্যাংকের অনাদায়ী রয়েছে। এ ছাড়া আইএফএস টেক্সওয়ারের কাছে ব্যাংকের পাওনা আছে ১০৩ কোটি টাকা। অবশ্য প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদিত সীমা ১৮৪ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রেও ঋণের টাকা ডলারে রূপান্তর করে ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায় পরিশোধ করা হয়েছে। একই উপায়ে দেওয়া ঋণের মধ্যে ইউনাইটেড নিটওয়্যারসের ৬২ কোটি, নিট গার্ডেনের ৪৭ কোটি, লতিফ নিটিং মিলসের ৪০ কোটি, জাবন অ্যাপারেলসের ২৫ কোটি, মোডিস অ্যাটায়ারসের ১০ কোটির বিপরীতে ১৩ কোটি, জননী ফ্যাশনের ১১ কোটি টাকা এখন বকেয়া রয়েছে।
ব্যবস্থা নিতে দুদকে প্রতিবেদন
জালিয়াতির বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে গত ২২ এপ্রিল দুদকে চিঠি দেয় বিএফআইইউ। সেখানে অনিয়মের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরে বলা হয়, জালিয়াতির সঙ্গে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও শাখা ব্যবস্থাপক মো. শহীদুল হাসান মল্লিক, শাখার সেকেন্ড অফিসার মুশফিকুল আলম, ফরেন এক্সচেঞ্জ ইনচার্জ দীপক কুমার দেবনাথ এবং ক্রেডিট ইনচার্জ মোহাম্মদ মেহেদি হাসান সরকার জড়িত বলে প্রতীয়মান হয়। পাশাপাশি প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তা, ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, ইন্টারনাল অডিট ও আন্তর্জাতিক বিভাগের কর্মকর্তারা দায় এড়াতে পারেন না। বিএফআইইউর প্রতিবেদন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় উপস্থাপনের পর চার কর্মকর্তাসহ ছয়জনকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রধান কার্যালয়ের সংযুক্ত করা হয়। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দুদককে অনুরোধ জানানো হয়।
বিএফআইইউর প্রতিবেদনের আলোকে ভুয়া বিলের মাধ্যমে ঋণের নামে ৩ হাজার ৮১ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। বিএফআইইউর তদন্তে যে চার কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয়, তারা যেন দেশ ছাড়তে না পারেন– সে জন্য প্রথমে গত ২৩ জুন আদেশ দেন আদালত। শহীদুল হাসান মল্লিক, মুশফিকুল আলম, দীপক কুমার দেবনাথ ও মেহেদি হাসান সরকার ছাড়াও আর কার কার, কী দায় রয়েছে তা খোঁজা হচ্ছে। অনুসন্ধান শেষে সংস্থাটির পক্ষ থেকে দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে জানা গেছে।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, প্রিমিয়ার ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ শাখার চার কর্মকর্তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর এখন বিস্তারিত অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধান শেষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরখাস্ত হওয়া প্রিমিয়ার ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক মো. শহীদুল হাসান মল্লিক বলেন, ‘এসব অনেক পুরোনো ইস্যু। ইতোমধ্যে সব নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। কেউ কি আমার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে?’ বিএফআইইউর পরিদর্শনে তাঁর সংশ্লিষ্টতা ও দুদকের আবেদনের ভিত্তিতে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো জবাব না দিয়ে ফোন কেটে দেন। পরে কয়েক দফা তাঁকে ফোন করলেও তিনি ধরেননি।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবু জাফরকে কয়েক দফা ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।