ডার্ক মোড
Sunday, 19 May 2024
ePaper   
Logo
রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় বহমান ২৬৮ নদ-নদীর সন্ধান

রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় বহমান ২৬৮ নদ-নদীর সন্ধান

রংপুর প্রতিনিধি

রংপুরে বিভাগের ৮ জেলায় বহমান ছোট-বড় ২৬৮টি নদ-নদীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সরকারী ভাবে চিহ্নীত হয়েছে ১৮টি আন্তঃ সীমান্ত নদ-নদী। নদী গবেষক হেরিটেজ ও রিভারাইন পিপল ক্লাবের নিবির অনুসন্ধানে রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ২৬৮টি বহমান এসব নদ-নদীর সন্ধান মিলেছে। এই ২৬৮ নদ-নদীর তালিকা গত ৩১ মার্চ রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আবু জাফরের হাতে তুলে দেন নদী গবেষক হেরিটেজ ও রিভারাইন পিপল ক্লাবের দায়িত্বশীলরা।

নদী গবেষক হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী এবং রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রিভারাইন পিপল ক্লাবের পরিচালক অধ্যাপক ডক্টর তুহিন ওয়াদুদ রংপুর বিভাগের এ ২৬৮ নদ-নদীর তালিকা তৈরীর বিষয়ে অগ্রনী ভুমিকা পালন করেন বলে জানা গেছে।

তালিকায় দেখা গেছে, রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম জেলায় সব চেয়ে বেশি নদ-নদী বহমান রয়েছে। এ জেলায় ৬৬টি নদীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এরপরেই রয়েছে পঞ্চগড়, এ জেলায় ৪৬টি নদ-নদী বহমান আছে। অন্যান্য জেলার মধ্যে রংপুরে ৩৪, নীলফামারীতে ৩৩, দিনাজপুরে ৩২, ঠাকুরগাঁওয়ে ২১, লালমনিরহাটে ২০ এবং গাইবান্ধা জেলায় ১৬ টি নদ-নদীর নাম তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এর মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলায় সব চেয়ে বেশী ৬৬ টি বহমান নদ-নদীর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ধরলা, ব্র²পুত্র, দুধ কুমার, ফুল কুমার, নীল কুমার, কালডোরা, কালো, গঙ্গাধর, গিড়াই, চন্ডিজান, জিঞ্জিরাম, টেপরী, দিকদারী, ধরনী, নীল কমল, বুড়ি তিস্তা, সংকোশ, সোণাভরী, মন্নেয়া, শিয়ালদহ, কাপনা কাঞ্চনা, সরিসুরি, বালাজান, বাঁশজানি, যমডারা, গিদারী, চাকলী, শানবান্ধ, শানদিয়া, ধোন্দ্রা, অর্জুনের ডারা, খলিশা কুড়ি, নাগেস্বর, পায়রা ডাঙ্গা, গোদ্ধার, ঠুঠাপাইকার, চকির পাশার, কোটেশ্বর, ঘড়িয়াল ডাঙ্গা, পাঁচগাছির ছড়া, ছোট ধনী, বড় ধনী, ভাগিরথী, কোটল ডাঙ্গা, হলহলিয়া, হলহলি, হাড়িয়ার ডারা, জাল ছেঁড়া, কালজানি, বোয়াল মারী, থানবান্দ, বানিয়াদহ, অন্তাই, চন্ডিমারী, নাগদহ, বারোমাসি, মহিষ কুড়ি, নওজল, হাওড়া, ইছামতি, শালঝোর, ধরের নালা, যমুনা, গঙ্গারাম, সোণারাম, নীলকন্ঠ, বামনা, গদাধর এবং তোরসা অন্যতম।

এর পরেই রয়েছে পঞ্চগড় জেলায় বহমান ৪৬ টি নদ-নদীর মধ্যে করতোয়া, আলাই কুমাড়ী, আলোয়া, কুরমা, গোবরা, ঘোড়ামাড়া, চাওয়াই, ডাহুক, তালমা, তীরনাই, নাগর, পাঙ্গা, পাথরাজ, পাম পেটকি, বেরং, বোরকা, ভুল্লী, ভেরসা, যমুনা, চিলকা, ডারি, বহু, মড়া তিস্তা, রণচন্ডি, সিঙ্গীয়া, হাতুরী, সাউ, বুড়াইল, করুণ, কালিদহ, রাঙ্গাপানি, পাইকানি, তিস্তা ভাঙ্গা, বহিতা, শালমাড়া, বাঘমাড়া, কাঠগিরী, হুয়ারী, খড়খড়িয়া, ছাতনাই, সুই, ভাতা, জোড়া পানি, চাউলী এবং হাই হরি অন্যতম।

এর পরেই রয়েছে রংপুর জেলায় বহমান ৩৪ টি নদ-নদীর অবস্থান। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তিস্তা, যমুনেশ্বরী, ঘাঘট, খোকসা ঘাঘট, আখিরা, আলাইকুড়ি, আলাই কুমাড়ী, কাঠগড়া, চৈত্রকোল, মড়া, বুল্লাই, খাঁড়–ভাঁজ, বুড়াইল, বিলাইচন্ডী, মরিচা, মানাস, শালমারা, শ্যামাসুন্দরী, মাশানকুঁড়া, মলিমারী, ভেলুয়া, উছামতি, ফরিঙ্গা, ঘিরনাই, শান, নলেয়া, মড়া ধাইজান, খটখটিয়া, সোণামতি, র্স্বণমতি, মড়া তিস্তা, বাইশারডারা, ডোমজানা, কাফ্রিখাল এবং ধুম নদী।

এরপর নীলফামারী জেলায় বহমান ৩৩ টি নদ-নদীর অবস্থান। এর মধ্যে তিস্তা, করতোয়া,আউলিয়া খান, আপার কুমলাই, কেতকী, খোড়া, খড়খড়িয়া, চড়া, চাঁড়াল কাটা, চিকলী, দেওনাই, ধাইজান, ধুম, বামনডাঙ্গা, কুড়িখোড়া, বুড়ী তিস্তা, যমুনেশ্বরী, কলমদার, নাউতারা, নেংটি ছেঁড়া, ছোট চিকলী, শালকি, চেকাডারা, স্বর মঙ্গলা, সুই, খেরুয়া, গুপ্ত বাসিনী, চুঙ্গা ভাঙ্গা, বামন ডাঙ্গা, গুড়গুড়ী, ইছামতি, কুন্দ পুকুর, সর্ব মঙ্গলা এবং মাড়গলা অন্যতম।

এরপরই দিনাজপুর জেলায় বহমান ৩২ টি নদ-নদীর অবস্থান। এর মধ্যে ইছামতি, আত্রাই, কাকিরা, কাকতারা, কাঞ্চন, কালা, কালিয়ানী, গর্ভেশ্বরী, ঘাকশিরা, গাবুরা, ঘাঘরা, বাঁশদহ, চিরনাই, ছোট যমুনা, ঢেপা, নান, তুলশী গঙ্গা, তুল্লাই, নর্ত, নলশীলা, বেলান, পাথর ঘাটা, ভাবকি, ভেলামতি, মাইলা, তিনাই, শাশুয়া, ভুল্লী, টাঙ্গুয়ার, রণগাঁও, বিজরা এবং সোণারবন্দ অন্যতম।
এরপর ঠাকুগাঁও জেলায় বহমান ২১ টি নদ-নদীর অবস্থান। এর মধ্যে টাঙ্গন, আমন দামন, কুলিক, কাহালাই, গড় গড়িয়া, ছোট ঢেপা, ছোট সেনুয়া, তাররা, তীরনাই, নোনা, পূর্নভবা, মড়া টাঙ্গন, বসিয়া, লাচ্ছি, শুক, সেনুয়া, অহনা, চারাবান, ভক্তি, রামডারা, পুঠিয়া এবং নহনা অন্যতম।

লালমনিরহাট জেলায় বহমান ২০ টি নদ-নদীর অবস্থান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তিস্তা, ধরলা, খুটামাড়া, খাপড়া, খানা, গিদারী, চেনাবোলা, ত্রিমোহনী, কানিবাড়ী, ভাটেশ্বরী, সতী, সাঁকোয়া, সাঙ্গলী, সাতানোয়া, সানিয়াজান, চতরা এবং রতনাই নদী অন্যতম।

সবচেয়ে কম সংখ্যক ১৬ টি নদ-নদীর সন্ধান পাওয়া গেছে গাইবান্ধা জেলায়। এই জেলায় প্রবাহমান নদ-নদীর মধ্যে রয়েছে তিস্তা, ব্র²পুত্র, ঘাঘট, কাটাখালী, আলাই, গাঙ্গনাই, মানস, বানজানী, ভিমাতি, মড়া মানস, ল্যঙ্গা, সরাই, কালাপানি, মৎস, মরুয়াদহ, হলহলি, ইছামতি এবং মড়া নদী অন্যতম।

এদিকে নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী ও ডক্টর তুহিন ওয়াদুদ তাঁদের কুড়িগ্রাম সহ ৮ জেলায় সরেজমিন অনুসন্ধানের প্রাপ্ত তথ্যে জানিয়েছেন, রংপুর বিভাগে যে ২৬৮টি নদীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এ সংখ্যাও চূড়ান্ত নয়। নদ-নদীর সংখ্যা এর চেয়েও বেশি হতে পারে। তারার জানান, তালিকা প্রস্তুত করতে প্রত্যেক জেলার নদ-নদী নিয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তি ও সংগঠন গুলো এ কাজে সহযোগিতা করেছেন।

প্রাপ্ত নদীর সংখ্যা ও অনুসন্ধান সাপেক্ষে রংপুর বিভাগের নদ-নদীর পূর্ণ তালিকা প্রকাশের আহŸান জানিয়ে মাহবুব সিদ্দিকী বলেন,‘নদ-নদীর পূর্ণাঙ্গ তালিকা করে নদ-নদী সংরক্ষণের উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি।’এ বিষয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রিভারাইন পিপল ক্লাবের পরিচালক ডক্টর তুহিন ওয়াদুদ বলেন,‘রংপুর বিভাগে আন্তঃ সীমান্ত নদীর তালিকাও ঠিক নেই। সরকারী ভাবে ১৮টি আন্তঃ সীমান্ত নদ-নদীর কথা বলা হলেও প্রকৃত পক্ষে এ সংখ্যা ৫০ এর বেশি হবে। নদ-নদীর এই তালিকা জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ও বিভাগের ৮ জেলা প্রশাসককেও প্রদান করা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১১ সালে রংপুর বিভাগে ৮৪টি নদীর তালিকা তৈরী করে। আর পরবর্তিতে ২০২৩ সালে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন সর্ব শেষ তালিকা তৈরী করেছে ১৩১টি ।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন