ডার্ক মোড
Friday, 10 May 2024
ePaper   
Logo
বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বেজে উঠলো  হোয়াইট হাউসে

বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বেজে উঠলো হোয়াইট হাউসে

যুক্তরাষ্ট্র ব্যুরো

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, গত ১৯ এপ্রিল হোয়াইট হাউজের সামনে একদল প্রবাসীকে দেখতে পেয়েই বেজে উঠলো বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। মূল গেটের সামনে ক্যাসেটে গানটি শোনার সাথে সকলে থমকে দাঁড়ালেন কিছুক্ষণের জন্যে। হৃদয় উজার করে এবং প্রাণ ভরে নিজেরাও গাইলেন ৩০ লাখ বাঙালির তাজা রক্ত আর আড়াই লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’। সেখানে লাল-সবুজের পতাকা দৃশ্যমান না হলেও প্রতিটি বাঙালির হৃদয়পটে ভেসে উঠেছিল তা। গোটাবিশ্বের পরিস্থিতির আলোকে করণীয় নির্দ্ধারণকারি অর্থাৎ কখনো কোন দেশ গণতান্ত্রিক অথবা মানবাধিকার সংকটে নিপতিত হলে যুক্তরাষ্ট্র ঝাপিয়ে পড়ে সে সব দেশের কর্তৃত্ববাদি শাসকের বিরুদ্ধে। আবার মিত্র দেশ আক্রান্ত হলেও সৈন্য পাঠানো হয় দেশটিকে রক্ষার্থে।

এসব কারণে বিশ্বের কাছে মোড়ল হিসেবেও পরিচিত এই হোয়াইট হাউজের অধিকর্তা। তবে সব সময়েই যে প্রত্যাশিত রেজাল্ট যুক্তরাষ্ট্রের ঘরে এসেছে তা ঠিক নয়। কখনো কখনো নাজুক পরিস্থিতিতেও নিপতিত হতে হয়, লজ্জাজনক পরাজয়ের গ্লানি সইতে হয়েছে। ভিয়েতনাম যুদ্ধ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যাবার ঘটনাবলি এখনো সচেতন আমেরিকানদের পীড়া দেয়। গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার গণহত্যা পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নগ্ন অবস্থানের রেজাল্ট আসছে নভেম্বরের নির্বাচনে কিছুটা হলেও পড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এমন একটি ভবনের ভেতরে থেকে কীভাবে এতসব সিদ্ধান্ত দেয়া হয়, কোথায় বসে সিদ্ধান্তে উপনীত হোন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, মাঝেমধ্যে অতিথি আপ্যায়নের ঘটনাও কোন টেবিলে ঘটে, কোথায় ঘুমান প্রেসিডেন্ট, ফার্স্টলেডি, কীভাবে অবলোকন করা হয় গোটাবিশ্বের পরিস্থিতি ইত্যাদি নিয়ে খোদ আমেরিকানদের মধেও কৌতুহলের শেষ নেই। কারণ, ইচ্ছা করলেই এই হাউসের ভেতরে প্রবেশাধিকার মেলে না। এই ভবনের বাসিন্দা ছাড়া সকলকেই সিকিউরিটি পয়েন্ট অতিক্রম করতে হয়। ব্যাক গ্রাউন্ড চেক করা হয় পরিদর্শণ/পরিভ্রমণে আগ্রহীদের।

এরপর অন্তত: তিনটি চেক পয়েন্ট পাড়ি দিয়ে ভেতরে ঢুকতে হয়। প্রতিটি চলার পথ, কক্ষ, ডাইনিং রুম, সিনেমা হল, গসিপ রুম, ব্রিফিং রুম সর্বত্র মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। অর্থাৎ কোনকিছুই লুকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। নিরাপত্তা প্রহরিদের দৃষ্টি এড়িয়ে ভিডিও করাও সম্ভব হয় না। তবে আইফোনের সুবাদে (ফ্লাশ ঝলসে উঠবে না) সবকিছুর ছবি সংগ্রহ করার অনুমতি দেয়া হয় দর্শনার্থী অথবা ভ্রমণকারিকে। ভবনটি তন্ন তন্ন করে অবলোকনের আগ পর্যন্ত থাকা কৌতুহল একেবারেই চুপসে যায় ৩০/৪০ মিনিট পরিভ্রমণের পর। কারণ, সবকিছুই স্বাভাবিক, চিরচেনা। বিছানা, ডাইনিং টেবিল, অতিথি কক্ষ, ব্রিফিং রুম-সবকিছু একই রকমের। মিটিং রুমেও কোন বিশেষ বৈশিষ্ট নেই।

গোটাবিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু এই হোয়াইট হাউজ পরিভ্রমণের সুযোগ হয়েছিল ১৯ এপ্রিল শুক্রবার। ৩৮ জনের একটি টিমে সকলেই ছিলাম বাংলাদেশী আমেরিকান। নেতৃত্ব দেন ম্যারিল্যান্ড স্টেট ডেমক্র্যাটিক পার্টির নির্বাহী সদস্য এবং এএপিআই লিডারশিপ কাউন্সিলের মেম্বার আনিস আহমেদ। তিনি মাঝেমধ্যেই প্রবাসীদের জন্যে এমন আয়োজনে নেতৃত্ব দেন বিধায় চলতি পথে সকলকে নিজ ভাষায় জানিয়ে দেন কক্ষগুলোর ইতিহাস-ঐতিহ্য। অর্থাৎ গাইডেন ভ’মিকায় অবতীর্ণ হোন তিনি। কোথায় দাঁড়িয়ে ছবি উঠানো সম্ভব সেটিও তারই ইশারায় ঘটেছে। ধীওে চলার অবকাশ নেই, কিংবা কোথাও অকারণে সময়ক্ষেপণেরও সুযোগ নেই। সক্রিয় থাকতে হয় সারাক্ষণ। কারণ, সময় বেধে দেয়া হয়েছে। উচ্চস্বরে, এমনকি ফোনে কথা বলাও মানা। তবে বোবা হয়ে চলতে হয় না।

হোয়াইট হাউস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দাপ্তরিক বাসভবন। ওয়াশিংটন ডি.সির ১৬০০ পেনসিলভেনিয়া এভিনিউয়ে অবস্থিত এই বাসভবনটি ১৭৯২ থেকে ১৮০০ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। জন অ্যাডামসের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সকল প্রেসিডেন্টই এই বাসভবনে ছিলেন। এই ভবনের স্থাপতি ছিলেন জেমস হোবান, তিনি আয়ারল্যান্ডের নাগরিক। পুরো ভবনটি মূলত তিনটি আলাদা ভাগে বিভক্ত-ওয়েস্ট উইং, ইস্ট উইং ও এক্সিকিউটিভ রেসিডেন্স। ভবনের মোট আয়তন প্রায় ৫৫ হাজার বর্গফুট।

চারতলা এই ভবনে রয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর। তার মধ্যে অন্যতম হলো প্রেসিডেন্টস রুম, ওভাল অফিস ও কেবিনেট রুম। আগে প্রেসিডেন্টস রুমে সেক্রেটারি দপ্তর ও প্রেসিডেন্টের দপ্তর ছিল। বর্তমানে এই কক্ষ ডাইনিং রুম বা খাবার ঘর হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

ওভাল অফিসটি বর্তমানে প্রেসিডেন্টের প্রধান দপ্তর। ডিম্বাকৃতির এই কক্ষের জানালাগুলো বুলেটপ্রুফ কাঁচ দিয়ে তৈরি। কক্ষটির অন্দরসজ্জা ও আসবাব প্রেসিডেন্টের পছন্দ অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়।

কেবিনেট রুমে প্রেসিডেন্ট তাঁর মন্ত্রীসভার সঙ্গে বৈঠক করেন। হোয়াইট হাউসের রীতি অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট সব সময় টেবিলের মাঝখানে বসেন। গ্রাউন্ড ফ্লোরে আছে সিচুয়েশন রুম। ৫ হাজার বর্গফুটের এই ঘরে প্রেসিডেন্ট আসেন সমস্যার মুখোমুখি হলে। এখানে তিনি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করেন। সিচুয়েশন রুম চালান ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের কর্মীরা। হোয়াইট হাউসের প্রেস ব্রিফিং রুম। এখান থেকে সংবাদমাধ্যমের সামনে কথা বলেন প্রেসিডেন্ট।

হোয়াইট হাউস চত্বরের কেন্দ্রীয় ভবন হলো এক্সিকিউটিভ রেসিডেন্স। এটি মূলত ওয়েস্ট ও ইস্ট উইংয়ের মাঝখানে অবস্থিত। এই ভবনে আছে সবুজ, নীল ও লাল কক্ষ। এসব কক্ষের জানালার পর্দা, মেঝের কার্পেটসহ গৃহসজ্জার সামগ্রীর রং কক্ষের নাম অনুসারে হয়ে থাকে। এক্সিকিউটিভ রেসিডেন্সের পুবদিকে দ্বিতল ভবনটি হলো ইস্ট উইং। ভবনের দ্বিতীয় তলায় আছে ফার্স্ট লেডির দপ্তর। এ ছাড়া এই ভবনে আছে একটি পারিবারিক থিয়েটার হল, যেখানে প্রেসিডেন্ট ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা দিনের যেকোনো সময় নিজেদের পছন্দের সিনেমা উপভোগ করতে পারেন।

এক্সিকিউটিভ রেসিডেন্সের ফার্স্ট ফ্লোরে আছে ক্রস হল। এটি হোয়াইট হাউসের সবচেয়ে প্রশস্ত হলওয়ে। ক্রস হল স্টেট ডাইনিং রুম এবং ইস্ট রুমের সঙ্গে এক্সিকিউটিভ রেসিডেন্সের সংযোগ স্থাপন করেছে।

অনেকেই হয়ত ভাবেন বাড়িটার নাম হোয়াইট হাউস কেন? কারণ, ১৮১২ সালে সংঘঠিত হয় ইংল্যান্ড-আমেরিকা যুদ্ধ। যুদ্ধ চলাকালে ১৮১৪ সালের ২৪ আগস্ট ব্রিটিশ সেনাবাহিনী হোয়াইট হাউস জ্বালিয়ে দেয়। এরপর বিল্ডিংয়ের ছোট একটি অংশ শুধু অবশিষ্ট ছিল। বিল্ডিংটির বিভিন্ন জায়গায় তখন আগুন ও ধোঁয়ার দাগ ঢাকতে এর দেয়ালে সাদা রং দেওয়া হয়। সেই থেকে মূলত একে ‘হোয়াইট হাউস’ বলা শুরু হয়। হোয়াইট হাউসের মোট রুমের সংখ্যা ১৩২ টি।

বাংলাদেশী আমেরিকানদের এই টিমে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক লাবলু আনসার, বিশ্ববাংলা টোয়েন্টিফোর টিভির চেয়ারপার্সন আলিম খান আকাশ এবং ব্যবস্থাপনা সম্পাদক নুরুন্নাহার নিশা খান, আলভি খান, স্নেহা খান, আলিসা খান, সাফিন চৌধুরী, আসমা চৌধুরী, শামীন চৌধুরী, সারাহ চৌধুরী, ওমর চৌধুরী, হাসিনা পারভিন, তাসমিয়া দিয়া, সাফকাত চৌধুরী, নাফিজা আহমেদ, সুজাত হোসেন, লোকমান খান, শাহানা সুলতানা, তারেক মেহেদী, নাবিল আহমেদ, সাঈদ হারুন, রফিকুল আলম, ফরিদা পারভিন, কাজী ইসলাম, জাকির চৌধরী, মাহমুদা ইসলাম, সৈয়দ জুনায়েদ, কারাবি চৌধরী, মিজানুর রহমান, রাহেলা সুইটি, নূরজাহান খাতুন, নাসিমা আহমেদ, মোহাম্মদ খান, ডা. নুরুল চৌধুরী, লোকমান খিয়ানি প্রমুখ।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন