ডার্ক মোড
Monday, 06 May 2024
ePaper   
Logo
ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশন সত্ত্বেও ভবিষ্যতের সোনালী সূর্যের স্বপ্ন দেখছি : শ্যামল দত্ত

ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশন সত্ত্বেও ভবিষ্যতের সোনালী সূর্যের স্বপ্ন দেখছি : শ্যামল দত্ত

যুক্তরাষ্ট্র ব্যুরো

যুক্তরাষ্ট্র সফররত জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত ২৩ এপ্রিল নিউইয়র্কে ‘আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাব’ (এবিপিসি)’র মতবিনিময় সভায় প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার হাল-হকিকত প্রসঙ্গে প্রচন্ড হতাশার সুরে বলেন, ১৮ কোটি মানুষের একটি দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। সেখানে সবগুলো পত্রিকা মিলিয়েও ২০ লাখ র্সাকুলেশন নেই। সোস্যাল মিডিয়ার আগ্রাসী তৎপরতায় চরম সংকট চলছে। এমন সংকটের মধ্যে গণমাধ্যমের বিকাশ একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। আমি হলফ করে বলতে পারি আগামী ১০ অথবা ১৫ বছর পর কেউ পত্রিকা পড়বে না। এখনি পড়ে না। একইভাবে টেলিভিশনও আগামী ২০ বছর পর কেউ দেখবে না। এখনই দেখে না আমাদের সন্তান, আপনাদের নাতি-পুতিরা। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলে জানতে পারবেন যে কেউই টিভি দেখে না। এ অবস্থাতেও তারা আপডেটেড। সকল ইনফরমেশন তারা পাচ্ছে সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে।

খবর, খবরের পেছনের খবর, যেটার প্রতি সকলের অসম্ভব আকর্ষণ, একটি পত্রিকা হাতে নিয়ে, এক কাপ চা নিয়ে দিন শুরু না করলে তো অনেকের দিনই শুরু হয় না। সেই আবেগটা আর থাকছে না। পাঠ একেবারেই নেই। বইপত্র পড়ে না বললেই চলে। বই পড়ায় আজকের প্রজন্মের উদাসীনতা প্রসঙ্গে শ্যামল দত্ত উল্লেখ করেন, আমি মাঝেমধ্যে বিসিএস’র ভাইবা বোর্ডে থাকি। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দিয়েছে। লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেছে।

ভাইবাতে যখন জিজ্ঞাসা করি গত তিন মাসে পড়েছো এমন একটি বইয়ের নাম বলো। একজনও বলতে পারেন না। অনেকে চালাকি করে ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র নাম বলে। তারা মনে করেন সেই বইয়ের নাম বললে আমরা হয়তো তাকে অনুকম্পা প্রদর্শন করবো, সদয় হবো। সে প্রার্থীর কাছে যখোন জানতে চাই যে, বঙ্গবন্ধু ওখানে কী কী বই পড়তেন সেই নামগুলো বলো তো? তখন আর বলতে পারে না। এজন্যে ওদেরকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। মেধা আর মননের জায়গাটি, পড়াশোনার জায়গাটি এতটাই সংকুচিত হয়েছে, এটা তো রাষ্ট্রের দর্শন হতে হবে, ফিলসফি হতে হবে যে, রাষ্ট্র একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ তৈরী করবে। এই ফিলসফিক্যাল ডেফিসিট যখন থাকে, ঘাটতি যখন থাকে, তখন কিন্তু এধরনের এলোমেলো হয়ে যায়।

গণতন্ত্রের ধারক-বাহক এবং মানবাধিকারের সবকদাতা দাবিকারি যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক আচরণের প্রতি ইঙ্গিত করে বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজের নেতা ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শ্যামল দত্ত বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে গণতন্ত্রের সিম্বল অব দ্য ওয়ার্ল্ড হিসেবে দাবি করা হয়, সেই দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অন্যায়ের প্রতিবাদে সামিল হওয়ায় তাদের ছাত্রত্ব বাতিলের পর ঢালাওভাবে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটলো এই নিউইয়র্কে। বিশ্বখ্যাত কলম্বিয়া ভার্সিটির দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে কয়েক ঘন্টা আগে। ছাত্রত্ব বাতিলের পর এদের ১৫ মিনিট সময় দেয়া হয়েছিল আবাসিক হল ত্যাগের। আইন আছে, আপনি যখন ছাত্র থাকবেন না, তখন হবেন বহিরাগত।

সে অনুযায়ী গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে সামিল হওয়া শিক্ষার্থিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত গণতন্ত্রের ধ্বজাধারি দেশ, যারা বলে যে এটি হচ্ছে গণতন্ত্রের সিম্বল অব দ্য ওয়ার্ল্ড, তাদের দেশে এগুলো ঘটছে। আর অন্য দেশের অবস্থা কী হবে এবার বুঝোন। সুতরাং এমন একটি ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশনে রয়েছে আজকের বিশ্ব। এতসব কিছুর মধ্যেও ভবিষ্যতের সোনালী সূর্যের স্বপ্ন তো দেখতেই হবে। না হলে বাঁচা যাবে না। হতাশায় মানুষ তো বাঁচে না। আমরা তো আশাবাদি জাতি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে শ্যামল দত্ত বলেন, আমরা স্বপ্ন দেখি, বাংলাদেশটা একদিন আপনাদের স্বপ্নের দেশ হবে। কেননা আপনাদের স্বপ্ন ছিল অন্যরকম। আপনাদের স্বপ্ন ছিল একটা অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। সেটি আসবে-তা বিশ্বাস করি, হয়তো সময় লাগবে। তারই অনুসঙ্গ হিসেবে, অনুগামী হিসেবে থাকবে গণমাধ্যম। কীভাবে থাকবে সে ধারণা এখন করতে পারছি না। কারণ, ৩০ বছর আগে আমি যখন সাংবাদিকতা শুরু করি তখন ভাবতেই পারিনি যে গণমাধ্যমের চেহারাটা আজকের মত হবে।

মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য দেন একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখিকা-সাংবাদিক নাজমুননেসা পিয়ারি এবং যমুনা টিভির সিইও ফাহিম আহমেদ। শুভেচ্ছা জানান নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেলের পক্ষে হেড অব চ্যান্সেরি ইশরাত জাহান। সকলকেই নিউইয়র্কে কর্মরত সাংবাদিকদের সমন্বয়ে গঠিত এবিপিসির পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।

এবিপিসির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার। সেক্রেটারি শাহ ফারুক রহমানের সঞ্চালনায় জ্যাকসন হাইটসে শেফ মহলের মিলনায়তনে এ সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের মধ্যে ছিলেন রেজাউল বারি, আবুল বাশার চুন্নু এবং শামসুল আলম চৌধুরী। বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির শিশু-কিশোরদের উচ্চ শিক্ষায় সার্বিক সহায়তাকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘দ্য অপ্টিমিস্ট’র প্রেসিডেন্ট মিনহাজ আহমেদ সাম্মু, উত্তর আমেরিকায় বাংলা সংস্কৃতির বিকাল ও লালনকারি প্রতিষ্ঠান ‘শো-টাইম’র কর্ণধার আলমগীর খান আলমসহ গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা ছিলেন বিশেষ সম্মানীত অতিথি হিসেবে।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন