ঝিনাইগাতী সীমান্তে সক্রিয় হয়ে উঠেছে মাদক পাচারকারীরা, হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক
শেরপুর প্রতিনিধি
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তে সক্রিয় হয়ে উঠেছে মাদক পাচারকারীরা। বেড়েছে মাদকের ব্যবহার। উপজেলার সর্বত্রই এখন হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। ফলে এর প্রভাব পড়ছে তরুন ও যুবসমাজের উপর। তরুণ ও যুব সমাজ বেপরোয়াভাবে মাদকাসক্ত হয়ে পরছে। মাদক পাচারকারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা ভারত থেকে দামি দামি বিভিন্ন ব্যান্ডের মাদক পাচার করে এনে এলাকায় সরবরাহের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে আসছে।
ফলে বর্তমানে উপজেলার যত্রতত্র হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। মাঝে মধ্যেই পুলিশ, বিজিবি ও সাধারন জনতার হাতেও মাদক আটকের ঘটনা ঘটছে। জানা গেছে, ৫ আগষ্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে এ সীমান্ত পথে মাদক পাচারকারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা সীমান্ত পথে মাদক পাচারে সক্রিয় হয়ে ওঠে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সীমান্তে বিজিবি সদস্যদের নিষিক্রয়তাকে পুঁজি করে উপজেলার গোমড়া, হলদিগ্রাম,সন্ধ্যাকুড়া, রাংটিয়া, নকশী, গজনী ও তাওয়াকোচা এলাকার সীমান্ত পথে মাদক পাচারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে পাচারকারীরা।
বন বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অতীতের ন্যায় পদচারণা না থাকায় সীমান্ত এলাকায় দিনে রাতে অপরিচিত মানুষের আনাগোনা ও বৃদ্ধি পেয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে সীমান্ত পথে গভীর রাত পর্যন্ত অপরিচিত প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেলে রহস্যজনক আনাগোনা। উপজেলার সীমান্তে রাস্তাও সড়ক উন্নয়ন হওয়ায় মাদক পাচারকারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, সিএনজি ও ইজিবাইক দূরো পাল্লার বাস ও রাতের আঁধারে বালুর ট্রাক যোগে মাদকের চালান দেশের বিভিন্ন স্থানে অনায়াসে পাচার করে আসছে। এছাড়া মাদক পাচারকারীরা মাদক পাচারে ব্যবহার করে আসছে কিশোর গ্যাং এর সদস্যদের।
স্কুল ব্যাগে করে কিশোর গ্যাং এর সদস্যদের মাদক পাচারে ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে সারা উপজেলাতেই ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে কিশোর গ্যাং এর পদচারণা। জানা যায়, মাদকের ছড়াছড়ি ও সহজ লভ্যতার কারণে অতি সহজেই মাদক পৌঁছে যাচ্ছে কিশোর গ্যাংএর হাতে। এতে অভিভাবকরা তাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। জানা গেছে, গত ২৯ অক্টোবর মঙ্গলবার রাতে স্কুলব্যাগে করে ১৯ বোতল ভারতীয় মদ পাচারকালে উপজেলা সদরের সিএনজি স্টেশন থেকে রাকিবুল ইসলাম (১৩) নামে এক কিশোরকে আটক করে স্থানীয় জনতা।
একই রাতে ডাকাবর এলাকা থেকে ১০০ বোতল ভারতীয় মদসহ ৩ জনকে আটক করে থানা পুলিশ। ২৩ অক্টোবর বুধবার রাতে উপজেলা সদরের সিয়াম বাসকাউন্টার থেকে ২৪ বোতল ভারতীয় মদসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে জনতা, উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের রাংটিয়া গ্রামের কালুগাজির ছেলে মিষ্টার আলী (২৯), বাচ্চু মিয়ার ছেলে বাদল মিয়া (২০),চান মিয়ার ছেলে আয়নাল হক (২৫)।
পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, বুধবার রাত ১১টার দিকে ওই ৩ মাদকপাচারকারি ঢাকায় পাচারের উদ্যেশে ব্যাগে মাদক নিয়ে সিয়াম বাস কাউন্টারে টিকিট করতে যায়। এসময় স্থানীয়দের সন্দেহ হলে মাদক পাচারকারীরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাদের আটক করে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ২৪ বোতল ভারতীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদসহ তাদের গ্রেপ্তার করে। হলদিগ্রাম সীমান্ত ফাঁড়ির বিজিবি সুত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বর মাসে ৩টি অভিযানে ভারতীয় ২০০বোতলেও বেশি মদ ও কম্বলসহ ২ জনকে আটক করে হলদিগ্রাম সীমান্ত ফাঁড়ির বিজিবি সদস্যরা। ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল আমিন বলেন চলতি মাসে তারা ৫টি অভিযানে ২ শতাধিক বোতল ভারতীয় মদসহ ৮ জনকে আটক করেছেন। এবিষয়ে মদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন মাদক নিয়ন্ত্রণে পুলিশী অভিযান পরিচালনা অব্যাহত আছে।