ডার্ক মোড
Friday, 18 October 2024
ePaper   
Logo
আমার বেটাকে ওরা পিটিয়ে মেরে ফেলেছে

আমার বেটাকে ওরা পিটিয়ে মেরে ফেলেছে

নীলফামারী প্রতিনিধি

কখনও রিকশা চালিয়ে কখনও বা দোকানে কাজ করে চালিয়েছেন নিজের পড়াশোনা। স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শেষে ধরবেন সংসারের হাল, কিন্তু নিমেষেই নিভে গেল সেই স্বপ্ন। বলছিলাম কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢাকায় সংঘর্ষে নিহত হওয়া ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী সবুজ আলীর কথা।

গত ১৬ জুলাই কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত হন তিনি। সবুজের বাড়ি নীলফামারী সদর উপজেলার চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের আরাজী দলুয়া বাংলাবাজার গ্রামে। একমাত্র বাড়ির ভিটের আট শতক জমি ছাড়া তেমন কোনো সম্পদ নেই সবুজ আলীর পরিবারের। বাবা আব্দুর রহিম বাদশা ভ্যানচালক এবং সূর্য বানু কাজ করেন অন্যের বাড়িতে। দুজনের সামান্য আয়ে সাত সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণের পাশাপাশি ছেলে সবুজ আলীকে পড়াচ্ছিলেন ঢাকা কলেজে।

জানা গেছে, চার ভাই এক বোনের মধ্যে সবুজ আলী তৃতীয়। সবার বড় ভাই সুজাব আলী একজন প্রতিবন্ধী। মেজ ভাই নুরুন্নবী ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করে সংসার খরচে কিছুটা জোগান দেন। একমাত্র বোন বাছিরন বেগমের বিয়ে হয়েছে। সবুজ আলী ঢাকা কলেজে পরিসংখ্যান বিভাগে অনার্স শেষে ভর্তি হয়েছেন মাস্টার্সে। তার ছোট ভাই শাহ সুলতান পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়েন।
জেলা শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে সবুজ আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পাগলপ্রায় মা সূর্য্য বানু এখনো তার ঘরে ছেলেকে খুঁজছেন। ভাঙাচোরা টিনের ঘরের পাটকাঠির বেড়া ধরে দরজায় দাঁড়িয়ে ছেলের অপেক্ষায় ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকেন সকাল-সন্ধ্যা। এখনো ঘুমের ঘোরে সবুজ সবুজ বলে ডেকে ওঠেন।

কথা হলে বুক চাপড়ে সূর্য্য বানু বলেন, আমার বেটাকে ওরা পিটিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। যাদু মোর বাঁচার জন্য কতই না কাকুতি-মিনতি করেছে পাষাণদের কাছে। ওদের দিলে কী একটু মায়া-দয়া নেই। আল্লাহ ওদের বিচার করবে।

এদিকে গত ১৮ জুলাই নীলফামারী জেলা সদরের চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের আরাজি দলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সবুজ আলীর জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাকে গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়। সবুজ আলীর জানাজায় নীলফামারী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ হাসান রিপন, গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মমতাজুল হক প্রমুখ অংশ নেন। এ সময় তারা সবুজ আলীর পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেন। তবে আজও কোনো সাহায্য-সহযোগিতা করেননি কেউ।

সবুজের বাবা আব্দুর রহিম বলেন, মানুষের বাড়িতে দিনমজুরি করে সংসার চালাইছি। ছেলেও আমার ঢাকায় কখনো রিকশা চালাইছে, আবার কখনো অন্যের দোকানে কাজ করেছে। মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগের নেতারা সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। আমার অন্য ছেলেকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জানাজার সময়। কিন্তু আজও কোনো সাহায্য-সহযোগিতা করেননি কেউ।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন