ডার্ক মোড
Sunday, 08 September 2024
ePaper   
Logo
আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে আইওটির গুরুত্ব

আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে আইওটির গুরুত্ব

মোঃ জাহিদুল ইসলাম

আইওটি (IoT) এর পূর্ণরূপ হলো ইন্টারনেট অফ থিংস (Internet of Things)। এটি একইসঙ্গে মানুষ ও ডিভাইস নিয়ে গড়ে ওঠা একটি বিশাল নেটওয়ার্ক। ইন্টারনেট অফ থিংস (আইওটি) বলতে পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত ও ইন্টারনেট-সংযুক্ত বস্তুর একটি সিস্টেমকে বোঝায়। বিশেষ এই পদ্ধতিতে কোনো মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই একটি ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেটা বা তথ্য সংগ্রহ ও স্থানান্তর করা হয়। এই নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত ডিভাইসগুলি নিজেদের মধ্যেই ডাটা সংগ্রহ, শেয়ার ও পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী এই ডাটাগুলিকে কাজে লাগায়।

আমাদের প্রতিদিনের জীবনের সবকিছুই বদলে দিয়েছে এই “ইন্টারনেট অফ থিংস” বা আইওটি। “ইন্টারনেট অফ থিংস” হলো এমন একটি ধারণা যেখানে স্মার্ট ইলেকট্রনিক ডিভাইসসমূহ ইন্টারনেটের মাধ্যমে একে-অপরের সাথে সংযুক্ত থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বা তথ্যের আদান-প্রদান এবং তথ্য বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম। ইন্টারনেট অফ থিংস এর “থিংস” অর্থ হলো বস্তু। আর এই "থিংস" মূলত স্মার্ট ইলেকট্রনিক ডিভাইস সমূহ যেমন: ক্যামেরা, টিভি, ফ্রিজ, লাইট, অডিও সিস্টেম, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি। ফুটবলেও এখন আইওটি ব্যবহার করা হচ্ছে।

ফুটবলে থাকা সেন্সর দিয়ে হিসাব করা হয় কত স্পিডে বল কিক মারা হয়েছে অথবা বলটি কতদূর পর্যন্ত গিয়েছে। তারপর সব ডাটার রেকর্ড রাখা হয় খেলোয়াড়দের ট্রেনিং এর কাজে লাগানোর জন্য।আবার আইওটি’তে সংযুক্ত থাকতে পারে স্মার্ট মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ডিভাইসটি কতক্ষণ কোন খাবার গরম করতে হবে। এসব সেন্সর দ্বারা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই নির্ধারণ করা যেতে পারে।সেন্সর এর কাজ হল মানুষ কিংবা যেকোনো বস্তুর গতিবিধি মনিটর করে প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়া এবং সেটা প্রসেস করে একটি ডিভাইস থেকে আরেকটি ডিভাইস এ প্রেরণ করা।

এভাবেই চলতে থাকে একটি আইওটি সিস্টেম। তবে আসল কথা হল নেটওয়ার্কিং প্রযুক্তির উন্নতির ফলে এই নতুন স্মার্ট ডিভাইসগুলা ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হতে পারে।“ইন্টারনেট অফ থিংস” এর প্রতিটি থিংস (Things), সেন্সর এর সাহায্যে তার আশেপাশের পরিবেশ থেকে তথ্য নিয়ে থাকে। সেন্সর হলো বহুল পরিচিত একটি যন্ত্র। এটি কনভার্টার হিসেবে কাজ করে থাকে। অর্থাৎ পরিবেশগত কোন পরিবর্তনকে তড়িৎ সিগন্যালে রূপান্তর করতে পারে। এটি শব্দ, তাপ, আলো ইত্যাদির প্রতি সাড়া দিতে পারে।

বিভিন্ন প্রয়োজনীয় যন্ত্র বা জিনিসপত্রকে অটোমেটিক করার জন্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সাথে কম্পিউটার সিস্টেম সংযুক্ত করা হয়। এছাড়াও যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস আইওটি’তে যুক্ত হতে পারে। অন্তত যেসব ডিভাইস অন-অফ করা যায় সেগুলিই আইওটি এর আওতাভুক্ত হতে পারে। ইন্টারনেট অফ থিংস বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহার করে।ইন্টারনেট অফ থিংসয়ের (আইওটির) সবসময় ইন্টারনেটের প্রয়োজন হয় না।

বর্তমানে ডিজিটাল ল্যান্ডস্কেপে ডিভাইস, মেশিন এবং যে কোনো আকারের বস্তু স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেটা ট্রান্সফার করতে পারে। একই সঙ্গে এই পদ্ধতিতে একে অপরের সঙ্গে কার্যকরভাবে রিয়েল টাইমে যোগাযোগ করতে পারে। ইন্টারনেট অব থিংস আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আগের চেয়ে করেছে আরও সহজ। আধুনিক এই পদ্ধতি বিশ্বকে নতুন করে উদ্ভাবন করছে যা আমরা আগে কল্পনাও করতে পারিনি।সেই সঙ্গে এটি ডিজিটাল এই সময়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।

এই অসাধারণ ধারণা আমাদের স্মার্ট ডিভাইসের মাধ্যমে কার্যত সবক্ষেত্রে সংযুক্ত করেছে। ইন্টারনেট অফ থিংস এর মাধ্যমে মূলত দৈনন্দিন ডিভাইসের আন্তঃসংযোগ বোঝায়। স্মার্টফোন এবং ল্যাপটপ থেকে শুরু করে যন্ত্রপাতি এবং যানবাহন, সমস্তই ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত এবং একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম। এই প্রযুক্তি স্বাস্থ্যসেবা থেকে পরিবহণ পর্যন্ত শিল্পে বিপ্লব ঘটাচ্ছে। বর্তমানে এই পদ্ধতি আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাপকভাবে উন্নত করার সম্ভাবনা তৈরি করছে। মানুষের জীবনযাপনকে সহজ করতে আইওটির ভূমিকা অপরিসীম।

এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীর এক প্রান্তে বসে অন্য প্রান্তের ব্যবহার্য বিভিন্ন ডিভাইস যেমন-লাইট-ফ্যান, ওয়াশিং মেশিন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, সিসিটিভি ক্যামেরা ইত্যাদি স্মার্টফোনের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট অফ থিংস এখন অনেক বড় ও সম্ভাবনাময় একটি প্রযুক্তি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইওটির গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে বহুগুন। এর পেছনের মূল কারণ হলো ভোক্তা ও সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই এর সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে। এক গবেষণার মাধ্যমে ধারণা করা হয়েছে ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের সংযুক্ত আইওটি ডিভাইসের সংখ্যা ৭৫ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। আইওটি এ্যাপ্লিকেশনসগুলো ম্যানুফ্যাকচারিং, হেলথ ক্যায়ার, শিক্ষা, ডিজিটাল শহর তৈরি করা, সিকিউরিটি, মেডিক্যাল, ট্রান্সপরটেশন, হসপিটাল, রুম অটুমেশন করা ইত্যাদি বিশেষ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ব্যবহার করা হয়।এমনকি চিকিৎসা সেবায় রোগীদের জন্য কখন কোন ওষুধ দরকার তাও বলে দিতে পারে ইন্টারনেট অব থিংস সংবলিত ডিভাইস। এছাড়াও আইওটির সুবিধাগুলোর মধ্যে রয়েছে খরচ কমানো, দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা, ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করা, গ্রাহকের অভিজ্ঞতা, সক্রিয়তা ও দ্রুততা।

আইওটি ডিভাইসের চমৎকার কিছু উদাহরণ হলো স্মার্ট হোম সিকিউরিটি সিস্টেম, অটোনোমাস ফার্মিং ইকুইপমেন্ট, হেলথ মনিটর, স্মার্ট কারখানার সরঞ্জাম, ওয়্যারলেস ইনভেন্টরি ট্র্যাকার, অতি উচ্চ গতির ওয়্যারলেস ইন্টারনেট, বায়োমেট্রিক সাইবার সিকিউরিটি স্ক্যানার ইত্যাদি। আইওটি এবং এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স)-এর উদ্ভাবনগুলো স্মার্ট হোম ডিভাইসকে আরও উন্নত করার জন্য ক্রমাগত কাজ করছে।এখন প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার উপযুক্ত সময়, কারণ আইওটি-সক্ষম ডিভাইস এই মুহূর্তে ভার্চুয়াল জগতে রাজত্ব করে চলেছে।আইওটি এবং এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স)-এর উদ্ভাবনগুলো স্মার্ট হোম ডিভাইসকে আরও উন্নত করার জন্য ক্রমাগত কাজ করছে। এখনই প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার উপযুক্ত সময়, কারণ আইওটি-সক্ষম ডিভাইস এই মুহূর্তে ভার্চুয়াল জগতে রাজত্ব করে চলেছে।আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আইওটি-সক্ষম স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহারের অসংখ্য সুবিধা রয়েছে। আইওটিতে এমন সব বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা প্রতিনিয়তই তার ব্যবহারকারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে চলছে।একই সঙ্গে ব্যবহারকারীদের কাজকর্ম যেমন সহজ করেছে পাশাপাশি তেমনি বাঁচিয়ে দিচ্ছে মূল্যবান সময়। আইওটির মূল বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর প্রচুর পরিমাণে ডেটা সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা রয়েছে।

এর ফলে প্রক্রিয়াগুলি অপ্টিমাইজ করতে এবং আরও ভাল সিদ্ধান্ত নিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। আইওটি ডিভাইসে সেন্সর ও মিনি-কম্পিউটার প্রসেসর থাকে। এই সেন্সর ও মিনি-কম্পিউটার প্রসেসর মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে সেন্সর দ্বারা সংগৃহীত ডেটাগুলোতে কাজ করে। মেশিন লার্নিং মূলত আইওটি ডিভাইসগুলোকে স্মার্ট করে তোলে। আইওটির মৌলিক উপাদান হচ্ছে কানেকটেড ডিভাইসেস, সেন্ট্রাল কন্ট্রোল হার্ডওয়্যার, ডেটা ক্লাউড, ইউজার ইন্টারফেস, নেটওয়ার্ক ইন্টারকানেকশন, সিস্টেম সিকিউরিটি এবং ডেটা অ্যানালিটিক্স। আইওটি মূলত এমবেডেড সিস্টেমগুলোকে আন্তঃসংযোগ করে ওয়্যারলেস কানেকটিভিটি ও সেন্সর এই দুটি বিকশিত প্রযুক্তিকে একত্রিত করে।

এই সংযুক্ত এমবেডেড সিস্টেমগুলো স্বাধীন মাইক্রো-কন্ট্রোলার ভিত্তিক কম্পিউটার যা ডেটা বা তথ্য সংগ্রহের জন্য সেন্সর ব্যবহার করে থাকে। আইওটি সিস্টেমগুলোতে ওয়াইফাই, ব্লুটুথ বা একটি কাস্টম কমিউনিকেশন সিস্টেমের মতো ওয়্যারলেস প্রটোকল দ্বারা যৌথ সম্প্রচার যোগাযোগ ব্যবস্থা করা হয়। নোড বিতরণ এবং সংগৃহীত তথ্যের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে নেটওয়ার্কিং প্রটোকল নির্বাচন করা হয়। এ তথ্যটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মূল কেন্দ্র বা কম্পিউটারে পাঠানো হয়। এরপর প্রধান অর্থাৎ মূল কম্পিউটার প্রসেসর এর সাহায্যে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে এটিকে মেমোরিতে সংরক্ষণ করে।

এমনকি এই বিশ্লেষণের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে সিস্টেম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে।বর্তমানে ইন্টারনেট এখন শুধু কমপিউটার ব্যবহার করে একে অপরের সাথে যোগাযোগের জন্য একটি গ্লোবাল নেটওয়ার্কই নয়। এটি এখন বিশ্বের বিভিন্ন ডিভাইসের সাথে ইলেকট্রনিক উপায়ে যোগাযোগের একটি প্লাটফরমও বটে। এর ফলে বিশ্ব এখন সম্পূর্ণরূপে তথ্যে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। যেহেতু ডাটা এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে প্রবাহিত ও শেয়ার হয়।

সুতরাং এখন বহুজনের পাশাপাশি বহু ডিভাইস সমূহে ব্যবহার করা যাবে। এক্ষেত্রে অর্থনীতি এবং সমাজের ভালোর জন্য এ ডাটাগুলো সুরক্ষিত রাখাই হবে আগামী যুগের অন্যতম প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ। আর এই ডাটাগুলো সুরক্ষার জন্য আমাদের বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যার মধ্যে রয়েছে সময়মত আইওটি ডিভাইসগুলোর ফার্মওয়্যার আপডেট রাখতে হবে। যখন ব্যবহার না করা হয় তখন ভয়েস ডিটেকট সফটওয়্যার বন্ধ রাখতে হবে। বিশেষ করে কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে এনক্রিপ্টশন মেথড ব্যবহার করতে হবে। এন্টি-ডিডস ব্যবহার করতে হবে। আইওটি ডিভাইসগুলোর মধ্যে অথেনটিকেশন ডেপলয় করতে হবে যেন শুধুমাত্র ট্রাস্টেড ডিভাইসগুলো যোগাযোগ করতে পারবে। আইওটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা যদি ডাটাগুলো সুরক্ষার জন্য সর্বাধিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে ভবিষ্যতে আগামী প্রজন্মের জন্য আইওটি যেমন উৎপাদনশীলতা বাড়াবে তেমনই নতুন নতুন উদ্ভাবনের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

লেখক, নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান (আইসিটি সেল) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন