
ভূমি জরিপের অতীত ও বর্তমান
মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন
ভূমির সঠিক মালিক নির্ণয় করার জন্য জরিপের গুরুত্ব অপরিসীম। মৌজাভিত্তিক ভূমির মালিকানা নির্ধারণ করা; জমির হালনাগাদ খতিয়ান সংগ্রহ করে হাল মালিক চিহ্নিতকরণ করা । ওয়ারিশদের মধ্যে ভূমি বন্টনের জন্য অথবা ক্রয় বিক্রয়ের পরে অংশিদারদের মধ্যে ভূমি বন্টনের জন্য ভূমি জরিপের প্রয়োজন হয়। নদী অথবা সমুদ্রে যখন নতুন চর কিংবা দ্বীপের সৃষ্টি হয় তখন ঐ ভূমি বন্দোবস্ত দেয়ার জন্য অথবা অন্য কোন কাজে ব্যবহারের জন্য জরিপ করার প্রয়োজন হয়। The Survey act 1875 এর সংশ্লিষ্ট বিধিমালা অনুযায়ী সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় জরিপ বিভাগ সরেজমিনে জমি মেপে জরিপ কার্য করে । এক বা একাধিক প্লট, দুই মৌজা ও সীমানা নির্ধারণ এবং আন্তর্দশীয় সীমানা নির্ধারণের জন্য ভূমি জরিপের প্রয়োজন। জমির অবস্থান সংবলিত মৌজাভিত্তিক একটি দাগ, পরিমাণ, নকশা, খতিয়ান, মালিকের নাম, ঠিকানা ইত্যাদি তথ্য দিয়ে তৈরী করা হয় ভূমি জরিপ। জরিপের মাধ্যমে নতুন মৌজা নকশা ও রেকর্ড তৈরী করা হয়। অন্তত ১৫/২০ বছর পর পর জমির নতুন নকশা ও রেকর্ড তৈরী করার জন্য ভূমি জরিপের প্রয়োজন হয়।
ইতিহাস হতে যানা যায় উপমহাদেশের ভূমি জরিপ সুত্রপাত হয় সিকান্দার শাহ এর সময়ে পরিচালিত সিকান্দারী গজ জরিপ (১৩৫৭-১৩৮৯); পরে পাঠান সম্রাট শেরশাহের আমলে শ্রেণী বিভাগ ও খাজনা জরিপ (১৫৪০-১৫৪৫) তিনি জমির উৎপাদিত ফসলের তিন ভাগের এক ভাগ রাজস্ব ধার্য্য করেছিলেন। মোঘল সম্রাট আকবরের আমলে নমূনা জরিপ (১৫৮২-১৫৮৭) ইহা ইতিহাসে উল্লেখ যোগ্য ভূমি জরিপ। এ সময় পাট্টা ও কবুলিয়ত প্রথার প্রবর্তন হয়। থাক বাস্ত ও রাজস্ব জরিপ (১৮৪৭-১৮৭৮) ও দিয়ারা জরিপ (১৮৬২)। বাংলাদেশের এই ভূখন্ডে এ যাবত কাল পর্যন্ত সাত বার ভূমি জরিপ ও রেকর্ড কার্যক্রম চালান হয় । রেকর্ড গুলো হল:- (ক) সি.এস. জরিপ (Cadastral Survey,1888) (খ) এস.এ. জরিপ (State Acquisition Survey,1956) (গ) পি.এস. জরিপ (Pakistan Survey,1956) (ঘ) আর.এস. জরিপ (Revisional Survey,1938) (ঙ) বি.এস. জরিপ (Bangladesh Survey,1998) (চ) সিটি জরিপ (City Survey,1999) (ছ) বিডিএস (বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে) (২০১৩- চলমান)।
জরিপের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতায় নীল নদের অতি প্লাবনের কারণে জমির সীমানা মুছে যাবার পর দড়ি দিয়ে সীমানা নির্ধারণের নথি পাওয়া গেছে। মোঘল সম্রাট আকবরের একজন অন্যতম সভাসদ টোডরমল সার্ভে ও সেটেলমেন্ট কার্যক্রম পরিচালনা করেন। কিন্তু উক্ত কার্যক্রম সম্পূর্ণ এবং plot-to-plot সার্ভে কার্যক্রম ছিলনা বরং একটি সংক্ষিপ্ত কার্যক্রম ছিল। ১৭৭৪ সালে প্রখ্যাত ভূগোলবিদ জেমস রনাল উপমহাদেশের সার্ভেয়ার জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পেয়ে ১৭৮০ সালে Plan of the environs of the city of Dhaka প্রণয়ন করেন। অতঃপর বাংলা ও বিহারের ৮টি বিভাগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানের Index Map তৈরি করেন।
বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইনের (১৮৮৫) অধীন ভূমির মালিকানা সম্পর্কিত ম্যাপ ও খতিয়ান প্রণয়ান কাজ পরিচালনার লক্ষ্যে “বোর্ড অব রেভিনিউ” এর নিয়ন্ত্রণাধীন “ভূমি রেকর্ড ও কৃষি” নামে দপ্তর সৃষ্টি হয় ১৮৮৪ সালে। কোন নির্দিষ্ট জনপদে একটি নির্ধারিত হারে রাজস্ব সংগ্রহের উদ্দেশ্যে জমির অবস্থান, তার প্রমিত পরিমাপ ও মালিকানা নির্ণয়ের জন্য পরিচালিত জরিপ ১৮৮৮ সালে “ভূমি রেকর্ড দপ্তর” নামে একটি স্বতন্ত্র দপ্তর গঠন করা হয়। তখন জরিপ কাজ “সার্ভে অব ইন্ডিয়ার” উপর ন্যস্থ ছিল।
প্রাচীন হিন্দু যুগের সময়ে যিনি জঙ্গল কেটে জমি বানাতেন তিনি জমির মালিক হতেন। জমি হস্তান্তরের মালিকের স্বীকৃত অধিকার ছিল। কৃষি জমি কৃষকদের স্থায়ী বন্দোবস্ত দেওয়া হতো। গ্রাম ছিল ভূমি ব্যবস্থাপনার মূল ভিত্তি। গ্রামের কয়েকটি পরিবার সমবায়ী ব্যবস্থায় ভূমি ব্যবহার করতেন। রাজা ছিল রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি। তিনি রাজ কর্মচারীদের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করতো। কোন জমিদার বা মধ্যস্বত্বভোগী ছিল না।
সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে এ অঞ্চলে জামা-ই-তামিল-তুমার নামে একটি জরিপ পরিচালিত হয়। এ জরিপে বাংলাকে ১৩টি চাকলা এবং ১৬৬০ টি পরগনায় বিভক্ত করা হয়। ইংরেজ আমল নক্সাবিদ মেজর জন রেনেল শৃংখলা বদ্ধ পদ্ধতিতে জরিপ কাজ করেন ১৭৬৩-১৭৮২ সালে । তিনি জরিপের মাধ্যমে নক্সা প্রস্তত করেন। ১৭৬৫ সালে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বার্ষিক ছাব্বিশ লক্ষ টাকার বিনিময়ে দিল্লির সম্রাট শাহ আলমের নিকট থেকে এদেশের ভুমি রাজস্ব আদায়ের কর্তৃত্ব লাভ করেন। তখন নায়েবগনের মাধমে রাজস্ব আদায় করা হতো। ১৭৬৯-১৭৭০ সাল (বাংলা ১১৭৬ সাল) এদেশে ভয়াভহ দুর্ভিক্ষে একতৃতীয়াংশ লোক মারা যায়। ১৭৭২ সালে ওয়ারেন্ট হেষ্টিংস পাঁচশালা বন্দোবস্ত চালু করেন। ১৭৯০ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ দশশালা বন্দোবস্ত চালু করেন। ১৭৯৩ সালে তিনি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেন। ফলে মধ্যস্বত্বভোগী ও জমিদার শ্রেনীর সৃষ্টি হয় এবং গন অসন্তোষ দেখা দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৫৯ সালে রেন্ট এ্যাক্ট পাশ করা হয়। ১৮৭৯ সালে রেন্ট কমিশন গঠন করা হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৮৫ সালে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন পাশ করা হয়। এর ফলে কৃষকদের অধিকার প্রতিষ্টা হয়। প্রজাদের অধিকার সম্বলিত খতিয়ান প্রণয়ন করা হয়। এ আইনকে রায়তদের মেগনাকার্টা বলা হয়। এ আইনের মাধ্যমে ক্যাডাষ্ট্রাল সার্ভে শুরু হয়। ১৯৩৮ সালে জমিদারী প্রথা বিলোপ করার জন ফ্লাউড কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ পাশ করা হয়।
ত্রিগনোমেট্রিক্যাল জরিপ ১৮০২ সনে মিঃ উইলিয়াম ল্যাম্বটন এর নেতৃত্বে সমগ্র ভারতে ত্রিগনোমেট্রিক্যাল জরিপ শুরু হয়। ভবিষ্যতে সমগ্র ভারতে যাতে সঠিক ও নির্ভুল নক্সা প্রস্তুত করা যায় সে লক্ষ্যে বিভিন্ন এলাকায় জি,টি পিলার স্থাপনই এ জরিপের উদ্দেশ্য ছিল।
থাকবস্ত জরিপ ১৮৪৫-১৮৭৭ মেয়াদে রাজস্ব জরিপের বেলায় সর্বদাই পূর্বশর্ত হিসেবে একটি থাকবস্ত বা চৌহদ্দি চিহ্নিতকরণ জরিপ পরিচালিত হতো। এর উদ্দেশ্য ছিল, জরিপের অধীন সকল গ্রাম ও তালুকের মধ্যকার সীমা-চৌহদ্দিগুলি সরেজমিনে চূড়ান্তভাবে চিহ্নিত করা। কার্যত, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা রাজস্ব জরিপ শুরুর আনুমানিক এক বছর আগে গ্রাম ও তালুকগুলির প্রকৃত সীমা-চৌহদ্দি সরেজমিনে চিহ্নিত করার জন্য যেতেন। সীমা-চৌহদ্দি সম্পর্কিত সকল বিরোধ এভাবে আগে থেকেই নিষ্পত্তি হয়ে থাকার ফলে সাবলীল গতিতে রাজস্ব জরিপ কর্মকর্তা রাজস্ব জরিপ সম্পন্ন করতে পারতেন।
থাকবাস্ত জরিপে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে জমিদারী এলাকার আয় নির্ণয়ের জন্য ১৮৪৭ সাল থেকে ১৮৭৮ সাল পর্যন্ত রাজস্ব জরিপ পরিচালনা করা হয়। এ জরিপ দক্ষ আমিনগণ দ্বারা পরিচালিত হয় বিধায় একে প্রথম বৈজ্ঞানিক জরিপ বলা হয়।। এ জরিপের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ জমিদারী এলাকার বাইরের ভূমিকে খাস ভূমি হিসেবে চিহ্নিত করে কালেক্টরের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। কর্ণেল মিঃ স্মিত এর অধীনে এ জরিপ পরিচালিত হয়।
খসড়া জরিপ হচ্ছে থাকবাস্ত জরিপ ও রাজস্ব জরিপ পরিচালনাকালে যেসব ভূমি অস্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত প্রদান করা হত ও যেসব এলাকায় স্থায়ীভাবে বন্দোবস্তকৃত ভূমিতে স্বত্ব নিয়ে বিরোধ বিদ্যমান ছিল এবং থাকবাস্ত জরিপের নক্সা যেখানে ছিলনা সেসব এলাকায় খসড়া জরিপ পরিচালিত হত। এতে ১৬ ইঞ্চি সমান ১ মাইল স্কেলে জরিপ কর্মীগণ ফিল্ডবুকে বিভিন্ন তথ্যাদি লিপিবদ্ধ করতেন। যেমন তৌজি নম্বর, মালিকের নাম, দখলকারী রায়তের নাম, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, ক্ষেত্রফল, মাটির বর্ণনা, উৎপাদিত ফসলের বর্ণনা ইত্যাদি।
দিয়ারা জরিপ বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এ দেশে প্রতিনিয়ত নদী ভাঙ্গনের ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা নদী বা সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। আবার কোথাও কোথাও নতুন চর জেগে ওঠে। এসব নদী ভাঙ্গন এলাকা জরিপ করার জন্য ১৯৬৩ সালে একটি স্থায়ী দিয়ারা সেটেলমেন্ট অফিস স্থাপন করা হয়। দরিয়া শব্দটি হতে দিয়ারা শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে।
সি.এস. জরিপ এ ভূমি জরিপকারীর অন্যতম প্রধান ভূমিকা হল জমির উপর অবস্থিত সম্পত্তির সীমানা নির্ধারণ করা। জরিপকারীকে অবশ্যই নির্ধারণ করতে হবে যে পার্শ্ববর্তী জমির মালিকরা কোথায় সীমানা নির্ধারণ করতে চান। সীমানাটি আইনী নথি এবং আইনজীবী, প্রকৌশলী এবং ভূমি জরিপকারী দ্বারা প্রস্তুত পরিকল্পনায় প্রতিষ্ঠিত হয়। জরিপকারী এরপর নতুন সীমানার কোণে স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করেন। তারা পূর্ববর্তী জরিপ দ্বারা চিহ্নিত সম্পত্তির কোণগুলি খুঁজে পেতে বা পুনঃজরিপ করতে পারেন।
ক্যাডাস্ট্রাল ভূমি জরিপকারীরা সরকার কর্তৃক লাইসেন্সপ্রাপ্ত। ভূমি ব্যবস্থাপনা ব্যুরো (BLM) -এর ক্যাডাস্ট্রাল জরিপ শাখা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেশিরভাগ ক্যাডাস্ট্রাল জরিপ পরিচালনা করে। তারা বন পরিষেবা, জাতীয় উদ্যান পরিষেবা, সেনাবাহিনীর প্রকৌশলী কর্পস , ভারতীয় বিষয়ক ব্যুরো, মৎস্য ও বন্যপ্রাণী পরিষেবা, পুনরুদ্ধার ব্যুরো এবং অন্যান্যদের সাথে পরামর্শ করে । BLM পূর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ল্যান্ড অফিস (GLO) নামে পরিচিত ছিল।
পাবলিক ল্যান্ড সার্ভে সিস্টেম (PLSS) অনুসারে সংগঠিত রাজ্যগুলিতে, জরিপকারীদের অবশ্যই সেই সিস্টেমের অধীনে BLM ক্যাডাস্ট্রাল জরিপ পরিচালনা করতে হবে। ক্যাডাস্ট্রাল জরিপকারীদের প্রায়শই সীমানা স্মৃতিস্তম্ভগুলিকে ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্থ করে এমন মাটির পরিবর্তনগুলি নিয়ে কাজ করতে হয়। যখন এটি ঘটে, তখন তাদের অবশ্যই এমন প্রমাণ বিবেচনা করতে হবে যা মালিকানার দলিলের উপর লিপিবদ্ধ নেই। এটি বহির্মুখী প্রমাণ হিসাবে পরিচিত।
দেশের সাধারণ জনগণকে প্রজাসত্ত্বের স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে ১৮৮৫ সালে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন পাশ করা হয়। ১৮৮৮ সনে ভূমি রেকর্ড দপ্তর সৃষ্টি করা হয় এবং সার্ভে অব ইন্ডিয়ার সহায়তায় কক্সবাজার জেলার রামু থানায় কিস্তোয়ার জরিপ ও খতিয়ান প্রণয়নের কাজ আরম্ভ হয়। ১৮৯০ সালে অত্যন্ত সফলভাবে সমাপ্ত হলে চট্টগ্রাম জেলায় ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে শুরু হয় এবং ১৮৯৮ সালে সফলতার সঙ্গে সমাপ্ত হয়। এর পর সমগ্র পূর্ববাংলায় সিএস জরিপ পরিচালিত হয় এবং ১৯৪০ সনে দিনাজপুর জেলায় জরিপের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। উল্লেখ্য যে বৃহত্তর সিলেট জেলা তখন আসাম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত থাকায় সিএস জরিপ পরিচালিত হয়নি।
দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে সিএস জরিপ চলায় যে সকল এলাকায় প্রথম জরিপ হয়েছে; সে সকল ভূমির প্রকৃতি ও মালিকানার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। ফলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, ফরিদপুর ও বাকেরগঞ্জ জেলায় নতুন করে সংশোধনী এসএ জরিপ শুরু হয়। ১৯৫২ সালে সর্বশেষ বাকেরগঞ্জ জেলার সংশোধনী জরিপ শেষ করে খতিয়ান চুড়ান্ত প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে জমিদারী হুকুম দখল ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হওয়ায় আর কোন জেলায় সংশোধনী জরিপ পরিচালিত হয়নি।
এস.এ. জরিপ দেশ বিভাগের পর জমিদারী হুকুম দখল ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ সনের ১৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব বাংলার পার্লামেন্টে পাশ হয় এবং গভর্নর জেনারেলের সম্মতি লাভের পর ১৯৫১ সনের ১৬ মে তারিখ ঢাকা গেজেটে প্রকাশিত হয়। এ আইনের মাধ্যমে জমিদারদের অধিভুক্ত সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণ করে ক্ষতিপূরণ প্রদানের মাধ্যমে জমিদারী এস্টটগুলো অধিগ্রহণ করা হয় এবং প্রজার নামে খতিয়ান প্রণয়ন করে মালিকানা প্রদান করা হয়। এস.এ জরিপ ১৯৫৬ সনের ১৪ এপ্রিল শুরু হয় এবং ১৯৬৩ সনে শেষ হয়। এস এ জরিপের খতিয়ান ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর কর্তৃক প্রণীত হয়নি এবং ইহা কোন মাঠ পর্যায়ের সরেজমিন জরিপ ছিল না। জেলা প্রশাসনের কর্মচারীগণ জমিদারদের কাচারিতে বসে পত্তন রেজিস্টার দেখে এস, এ খতিয়ান প্রণয়ন করেন। কাজেই এর বিশুদ্ধতা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। তাই এস.এ জরিপের পরপরই আর একটি সংশোধনী জরিপ শুরু করা হয়। ১৯৬৫-৬৬ সালে রাজশাহী জেলায় সংশোধনী জরিপ শুরু হয়। পরে দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, সিলেট, খুলনা ও বরিশাল জোনে করা হয়।
মহানগর জরিপ সিএস, এসএ এবং আরএস এই তিন প্রকার জরিপ ছাড়াও ঢাকা মহানগরী এলাকাভুক্ত মৌজাসমূহে অতি সম্প্রতি একটি বিশেষ জরিপের মাধ্যমে মৌজা নক্সা ও স্বত্বলিপি প্রস্তুত হয়েছে। ইহা মহানগরী জরিপ নামে পরিচিত এই জরিপটিও একটি সংশোধনী জরিপ। তবে অধিক্ষেত্রভুক্ত সকল মৌজায় ক্যাডাষ্ট্রাল জরিপের মাধ্যমে বিভিন্ন স্কেলে নতুন মৌজা ম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে বিধায় একে ক্যাডাস্ট্রাল জরিপও বলা যায়। মহানগরী জরিপ শুধু ঢাকা মহানগর এলাকায় পরিচালিত হয়েছে।
বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে ডিজিটাল যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যার ব্যবহার করে নির্ধারিত জিওডেটিক কন্ট্রোল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ETS এর সহায়তায় প্রতিটি দাগের প্রতিটি বাঁকের স্থানাংক নির্ণয়ের মাধ্যমে মৌজাভিত্তিক ভূমির নক্সা ও প্লট ভিত্তিক মালিকানা রেকর্ড প্রণয়নে যে ভূমি জরিপ সম্পাদন করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সরকারের ডিজিটালাইজেশনের অংশ হিসাবে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর কর্তৃক ২০১৩ হতে GNSS/ ETS/ Drone মেশিনের সাহায্যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ভূমি জরিপ হবে জিপিএস এবং জিও ফেন্সিংয়ে হয়ে যাবে এবং জমির মালিক চাইলেই গুগল অর্থে প্লটে জরিপ দেখতে পারবে। পরবর্তী স্টেজে এই জরিপের সাথে ভূমির মালিকানার একটা ম্যাপিং করে হবে। তার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে কিনা সে বিষয়টাও এখানে সংযুক্ত করে দেয়া হবে পাশাপাশি নামজারি প্রক্রিয়া চলমান আছে কিনা এবং কোন মামলা আছে কিনা থাকলে মামলার বর্তমান অবস্থা এই সব বিষয়ে গুলো সংযুক্ত করা হবে। অর্থাৎ একটা সিঙ্গেল গেটওয়ে বসে ভূমির ডিজিটাল ম্যাপের সাথে তার মালিকানা সহ বর্তমান অবস্থা দেখা যাবে।
