ডার্ক মোড
Sunday, 08 September 2024
ePaper   
Logo
অনিয়ম ও দুর্নীতিতে বন কর্মকর্তা গড়েছেন সম্পদের পাহাড়

অনিয়ম ও দুর্নীতিতে বন কর্মকর্তা গড়েছেন সম্পদের পাহাড়

এ.বি.রাজ্জাক

সামছুদ্দিন আহমেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি অবৈধভাবে গাছ কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেন।

এ ঘটনার বিষয়ে বনপ্রহরী লিপন বলেন, যে দিন গাছ কাটে ওই দিন সন্ধ্যায় সামাজিক বনায়নের সভাপতি কাশেমের মাধ্যমে তথ্য পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। ওখানে প্রায় ২০টি গাছ কাটা হয়। তবে ঘটনাস্থলে ছিল মাত্র দুই-তিনটি গাছের অংশ ও কিছু ডালপালা। পরের দিন সামছুদ্দিন স্যার আমাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে শিপনকে বকাবকি করেন, মামলার ভয় দেন। পরে বদলকোটের বাহারসহ (নোয়াখালী-২ আসনের এমপি মোরশেদ আলমের শালা) অন্য নেতাদের ধরে সবকিছু ধামাচাপা দেওয়া হয়। স্যার প্রথমে মামলার ভয় দেয় পরে ম্যানেজ হয়ে যান।

জানা যায়, গত বছরের আগস্ট মাসে সেনবাগের কাদরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়ার নির্দেশে হিজলী গ্রামের সামাজিক বনায়নের প্রায় ৫০টি গাছ কেটে ফেলেন ইউপি মেম্বার পলাশ। বিষয়টি জানতে পেরে সেনবাগ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা এ এস এম সামছুদ্দিন আহমেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও গাছ কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নিয়ে অভিযুক্তদের জিম্মায় গাছ দিয়ে এসেছেন।

এ ঘটনা স্বীকার করেছেন সেনবাগ উপজেলার বনপ্রহরী মো. আব্দুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, ‘উনি অফিসে আসেন মাসে একবার। কখনো দুই মাসে একবার আসেন। দুষ্কৃতকারীরা ৫০টি গাছ কেছে ফেলেছিল। সামসুদ্দিন স্যার এসে গাছ জব্দ করেন। পরে মামলা না দিয়ে যে গাছ কেটেছে তার জিম্মায় গাছ দিয়ে এসেছেন।’

এ ছাড়া সোনাইমুড়ী সতের মাইল এলাকায় গত দুই বছরে সামাজিক বনায়নের প্রায় ১৫টি গাছ উধাও হয়ে গেছে। পৌরসভার বর্জ্যের আগুনে জীবন্ত গাছগুলি পুড়িয়ে মারা হয়েছে। তবে সেসবে বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বন কর্মকর্তা সামসুদ্দিন। উল্টো ওই ঘটনায় নোয়াখালীর একটি স্থানীয় পত্রিকায় ‘সামাজিক বনায়নের গাছ উধাও, জানে না বন কর্মকর্তা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে ওই সাংবাদিককে নানাভাবে হেনস্তা করেন সামসু।

উপজেলার বন কর্মকর্তা এ এস এম সামছুদ্দিন আহমেদের দায়িত্বে থাকা সোনাইমুড়ী-সেনবাগ-বেগমগঞ্জ উপজেলার সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের তালিকা তৈরিতেও ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। লভ্যাংশ বণ্টনেও ঘটেছে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের অর্থনৈতিক, বাস্তুসংস্থানিক ও সামাজিক সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার সামাজিক বনায়নের কর্মসূচি হাতে নিলেও সেই সুফল পাচ্ছে না এই তিন উপজেলার অসহায় মানুষ।

এ বিষয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলা বন কর্মকর্তা এ এস এম সামছুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে কথা হলে তিনি নিজ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দীর্ঘদিন থেকে দায়িত্বপালনের বিষয়টি স্বীকার করেন। প্রতিবন্ধী ভাই বন বিভাগে কর্মরত এবং তিনি যে ডিউটি করেন না সে বিষয়টিও স্বীকার করেন সামছুদ্দিন। অন্যান্য অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে অনেক শত্রু রয়েছে। শত্রুরা প্রতিবেদককে ভুল তথ্য দিচ্ছে।

এ বিষয়ে নোয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু ইউসুফের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। বন কর্মকর্তা এ এস এম সামছুদ্দিন আহমেদের দীর্ঘদিন নোয়াখালী জেলায় চাকরির বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন। তবে সামছুদ্দিনের ভাই মহিন উদ্দিন নৌকাচালক পদে যে চাকরি করছেন, সে তথ্য জানা নেই বিভাগীয় বন কর্মকর্তার। এ ছাড়া সামাজিক বনায়নে উপকারভোগীর কমিটি গঠনে অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানান তিনি।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন