ডার্ক মোড
Tuesday, 17 September 2024
ePaper   
Logo
আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে শিশুদেরকে রোধ করে নয় বরং জরুরী সচেতনতা বৃদ্ধি করা

আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে শিশুদেরকে রোধ করে নয় বরং জরুরী সচেতনতা বৃদ্ধি করা

মোঃ জাহিদুল ইসলাম

বর্তমানে শিশুদের মেধাবিকাশে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে বড়দের পাশাপাশি ছোটদের মাঝেও প্রযুক্তিপণ্যের ব্যবহার ক্রমশই বাড়ছে। এর পাশাপাশি শিশুদেরও প্রযুক্তিপণ্যের আশক্তি বাড়ছে প্রতিনিয়ত। বর্তমান সময়ের কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, ট্যাব, গেমিং ডিভাইস, ইন্টারনেট কোনটাই তাদের অজানা নয়।পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জ্ঞানভাণ্ডার হচ্ছে ইন্টারনেট। জ্ঞানের এ জগত থেকে শিশুদের দূরে রেখে তাদের আগামী দিনের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা যাবে না।

তবে তাদের জন্য ইন্টারনেটকে নিরাপদ করতে হবে। প্রযুক্তি হল বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান যা কৌশল, দক্ষতা, পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া-সমষ্টি। প্রযুক্তি মূলত পণ্য ও সেবা উৎপাদনে বা উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহৃত হয়। প্রকৃতপক্ষে প্রযুক্তির সরল রূপ হল মৌলিক সরঞ্জামের বিকাশ ও ব্যবহার নিশ্চিত করা।

শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আজকের শিশুরা ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির রক্ষণাবেক্ষণ করবে। শিশুরাই আগামীতে তাদের বিবেক-বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে দেশ ও জাতিকে পথ দেখাবে। এজন্য শিশুদের সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। বর্তমান সময়ে শিশুর সাথে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সম্পৃক্ততা খুব বেশি। এখনকার অনেক শিশুই প্রযুক্তি পণ্যে এতটাই আসক্ত যে তাদের হাত থেকে মোবাইল ফোন বা ট্যাব কেড়ে নিলে তারা রেগে যায়।

এর পাশাপাশি তারা নেতিবাচক আচরণ করে। প্রযুক্তি মাত্রাতিরিক্ত অ্যাডিকশনের কারণে শিশুদের মানসিক বিকাশ বিলম্বিত হতে পারে। ফলে বাধাগ্রস্ত হতে পারে শিশুর মানসিক ও সামাজিক বিকাশ। শিশুকে প্রযুক্তি এই ভয়াবহ বিপদজনক আসক্তি থেকে বাঁচাতে বাবা-মায়েরা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

তাহলে শিশুদের মাঝে অকারণে প্রযুক্তির ব্যবহার কমে আসবে। শিশুকে যাবতীয় ভালো কিছুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মূল দায়িত্ব বাবা-মায়ের উপর। বিশ্ব প্রতিনিয়তই দ্রুতগতিতে প্রযুক্তির যুগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের শিশুরা পিছিয়ে থাকলে তারা আধুনিকতার প্রযুক্তির ছোঁয়া হতে বঞ্চিত হবে। তাই আমাদের উচিত হবে আমাদের সন্তানদের তথ্য প্রযুক্তির থেকে রোধ করে নয় বরং তথ্য প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহারের মাধ্যমে তাদেরকে গড়ে তোলা। আধুনিক প্রযুক্তির বিজ্ঞানসম্মত জ্ঞান দিয়েই তাদের গড়ে তোলার অত্যাবশ্যকীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আমাদেরই। প্রযুক্তির এ যুগে শিশু-কিশোরদের প্রযুক্তি ইতিবাচক দিকগুলো থেকে দূরে রাখা উচিত নয়।

অপরদিকে তাই বলে প্রযুক্তিতে অবাধ বিচরণের সুযোগ প্রদান করাও সঠিক হবে না। প্রযুক্তি মানুষের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার। প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতিনিয়ত যুগ অনেকটাই পরিবর্তিত হচ্ছে। নতুন প্রযুক্তি নতুনভাবে মানুষকে চালিয়ে নিচ্ছে। বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে প্রযুক্তি আজ বিভিন্নভাবে শিশুদের ব্যবহারেও আসছে। আধুনিক বিশ্বায়নের এই যুগে শিশুদের অনেক কাজকর্ম প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। তাই মানুষের উচিত প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা। প্রযুক্তি দ্বারা মানুষ নিয়ন্ত্রিত হোক এটা কখনোই আমাদের কাম্য নয়।

বর্তমান আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে আমরা এমন একটি সময়ে বসবাস করছি যেখানে প্রতিনিয়তই প্রযুক্তির সঙ্গে আমাদের সমন্বয় করে চলতে হচ্ছে। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির বিশেষ এই সময়ে শিশুদের জীবনেও প্রযুক্তির প্রভাবও কম নয়। সেটিকে শিক্ষামূলকভাবে উপস্থাপন করলে পারলেই তাদের জীবনযাত্রার মান বদলে যাবে। শিশুদের শারীরিক এবং মানসিক বৃদ্ধি একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এক একটা বয়সে শিশুদের এক একটা কাজ করা উচিত। এক একটা বয়সে অর্থাৎ বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন কাজ করার প্রবণতাই হলো শিশুদের বিকাশের স্তর। তাই বয়স অনুযায়ী শিশু কাজকর্ম করছে কি না সেদিকে নিয়মিত নজর রাখা প্রত্যেক মা-বাবার একান্ত দায়িত্ব এবং কর্তব্য।

আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি যুগে ইন্টারনেট আমাদের জন্য এক অনন্য আশীর্বাদ। এর কল্যাণে আমরা খুব সহজেই এবং খুব কম সময়েই হাতের নাগালে পেয়ে যাই নানা তথ্য উপাত্ত । এইসব তথ্য উপাত্ত জানার ক্ষেত্রে শিশুদের জন্যও ইন্টারনেট হতে পারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম। বর্তমানে ক্লাসের পড়া থেকে শুরু করে নানা ধরনের প্রজেক্টের কাজের জন্য তাদের প্রায় প্রতি দিনই নানা তথ্যের প্রয়োজন হয়। আর এসব তথ্য এখন খুব সহজেই হাতের নাগালে থাকা প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে শিশুরা সংগ্রহ করতে পারে। নানা শিক্ষণীয় বিষয়ের পাশাপাশি বিনোদনের নানা উপকরণ ছড়িয়ে রয়েছে নেট দুনিয়ায়। সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইন্টারনেটে ব্যবহারের ভালো দিকগুলো শিশুকে সাহায্য করে থাকে বিভিন্নভাবে।

বাইরে খেলার বা বিনোদনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকার কারণে এখন এই প্রযুক্তি হয়ে ওঠেছে তাদের সঙ্গী। আজকাল শিশুরা বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার করছে ইন্টারনেট। পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোয় কী হচ্ছে খুব সহজেই সেগুলো তারা জানতে পারে। যা শিশুদেরকে সামাজিক হয়ে ওঠতে সাহায্য করে। তবে এসবের পাশাপাশি ইন্টারনেটের নেতিবাচক দিকও কম নয়। আমরা প্রযুক্তিকে আমাদের কল্যাণে ব্যবহার করব। তবে লক্ষ রাখতে হবে প্রযুক্তি যেন কোনভাবেই আমাদের ব্যবহার না করে।

বিশেষ করে শিশুদের প্রযুক্তি ব্যবহারে অভিভাবকদের সবচেয়ে বেশি সচেতন হতে হবে। প্রতিটি শিশুর সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি সঠিকভাবে তাদের পরিচালনা করতে পারলেই তাদের মাঝে সঠিক মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ঘটবে। ফলশ্রুতিতে তারাই হবে ভবিষ্যতে সঠিক পথ প্রদর্শক। প্রকৃতপক্ষে শিশুদের স্বভাব সুলভ হয় কাদামাটির মত। তাদেরকে যেভাবে গড়া হবে তারা ঠিক সে ভাবেই গড়ে উঠবে।

তাদেরকে সঠিক পথ দেখালে তারা সেই সঠিক পথের দিকেই অগ্রসর হবে । তাই শিশুদের ক্ষেত্রে একটু বেশিই সচেতন হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোমলমতি শিশুদের বিষয়ে যেকোনো পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে যাচাই বাছাই করে নিতে হবে। শিশুরা যেন কোন ভুল পথে না যায় সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। সব সময় সচেতন থাকতে হবে যেন কোন অপশক্তি শিশুদেকে গ্রাস করতে না পারে।

কোনভাবেই শিশুদের ক্ষেত্রে কোন কিছুকে ছাড় দেয়া যাবে না। তাদের বিকাশে সর্বাত্তক সচেতন থাকতে হবে।আধুনিকতার ছোঁয়ার সুফল হিসেবে শিশুরা এখন শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে প্রযুক্তির সুবিধা ব্যবহার করছে। এরই ফলশ্রুতিতে এখন যদি শিশুদের বয়স উপযোগী বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের (অ্যাপস) মাধ্যমে তাদের কাছে প্রযুক্তির ইতিবাচক দিকগুলো প্রাথমিক শিক্ষার উপকরণ হিসেবে পৌঁছে দেওয়া হয়। তাহলে এর সুফল ভোগ করবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সমগ্র বিশ্ববাসী। দৈনন্দিন প্রায় প্রতিটি কাজকর্মের সাথে প্রত্যক্ষ, পরোক্ষভাবে জড়িয়ে গেছে প্রযুক্তি।

বর্তমানে প্রযুক্তি ছাড়া চলা সম্ভব নয়। শুধু প্রযুক্তি ক্ষেত্রেই নয় ভালো-মন্দ দিক সব কিছুতে থাকে। প্রযুক্তির মন্দ দিকগুলো থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে। এজন্য পরিবারকে হতে হবে অধিক সচেতন। সন্তানদের কাছে প্রযুক্তির ভালো-মন্দ তুলে ধরার পাশাপাশি তাদের কতটুকু ব্যবহার উচিত তার ধারণা দিতে হবে অভিভাবকদের। প্রযুক্তির সাথেই এগোতে হবে কিন্ত প্রযুক্তির ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে শিশুদের বাঁচিয়ে। শিশুরা সাধারণত অনুকরণপ্রিয় হয়। তাই অভিভাবকদের উচিত হবে তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কিত বিভিন্ন ডিভাইসের ব্যবহারের কার্যকলাপ নিয়েও বাচ্চাদের সামনে সব সময় সতর্ক থাকা।

লেখক, নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান (আইসিটি সেল) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন