
হাতিয়ায় অস্বাভাবিক জোয়ারের তাণ্ডব, দ্বীপজুড়ে ক্ষতচিহ্ন
সাব্বির ইবনে ছিদ্দিক , হাতিয়া (নোয়াখালী)
উপকূলীয় দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় অমাবস্যা ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট অস্বাভাবিক জোয়ারে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। টানা কয়েক দিনের জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে দ্বীপের বিস্তীর্ণ এলাকা। ভেঙে পড়েছে প্রায় ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ, তলিয়ে গেছে চাষাবাদ এলাকা ও বসতভিটা।
জোয়ারের ভয়াবহতা শুধু জীবন-জীবিকাকেই নয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাকেও বিপর্যস্ত করে তুলেছে। দ্বীপবাসীর দাবি, শুধু এককালীন ত্রাণ নয়, প্রয়োজন টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র, স্বাস্থ্যসেবা ও বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মধ্যে রয়েছে—নিঝুমদ্বীপ, সোনাদিয়া জেলে পল্লী তুপানিয়া, আল-আমিন গ্রাম এবং নলচিরা চরঈশ্বর । এসব এলাকার ফসলি জমি, মাছের ঘের, কাঁচা ঘরবাড়ি হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। ভিটেমাটি ছেড়ে অনেক পরিবার গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন উন্মুক্ত জায়গায়। পানিবন্দি হয়ে পড়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ।
নিঝুমদ্বীপের বাসিন্দা তোফাজল হোসেন,বলেন,
“প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে বাঁচতে হয় আমাদের। কিন্তু যুদ্ধ করতে গেলে তো অস্ত্র লাগে। সরকার শুধু ত্রাণ দিয়ে দায় শেষ করলে হবে না। আমাদের প্রয়োজন টেকসই বেড়িবাঁধ, নদীভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা এবং চরাঞ্চলের মানুষদের জীবনধারা রক্ষায় সুপরিকল্পিত উদ্যোগ।”
তিনি আরও বলেন,জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য, সুপেয় পানি, ওষুধ ও টয়লেট ব্যবস্থার পাশাপাশি সুরক্ষিত আশ্রয়কেন্দ্র এবং বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবি।”
চরঈশ্বর ইউনিয়নের হামিদুল্লাহ গ্রামের বাসিন্দা মাসুম বিল্লাহ জানান,বাংলা বাজার এলাকায় অস্বাভাবিক জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙে পড়ে পুরো এলাকা প্লাবিত হয়। এতে কৃষকদের সবজিক্ষেত, ধান, ও অন্যান্য শস্য পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এমন ক্ষয়ক্ষতি আগে কখনো দেখিনি। আমাদের জীবন-জীবিকা এখন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। দ্রুত পুনর্বাসন ও সহায়তা প্রয়োজন।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)
মো. আলাউদ্দিন,বলেন,প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা শুধু তাৎক্ষণিক ত্রাণ নয়, একটি দীর্ঘমেয়াদি, টেকসই পরিকল্পনা চাই। বেড়িবাঁধ ও অবকাঠামোগত দুর্বলতাই প্রতি বছর একই দুর্ভোগের পুনরাবৃত্তি ঘটায়। এবারের বিপর্যয় প্রমাণ করে, সময় এসেছে হাতিয়াকে প্রাধান্য দিয়ে উপকূলীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায় বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার।
তিনি আরও বলেন,কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাপক হারে, ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা এবং শিক্ষাখাতে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে।
হাতিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলীমো. জামিল পাটওয়ারী, বলেন,
“ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ দ্রুত মেরামতের কাজ শুরু হচ্ছে। তবে একটি স্থায়ী ও টেকসই বাঁধ নির্মাণ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।”
Comment / Reply From
You May Also Like
Latest News
Vote / Poll
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা বন্ধ করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগ যথেষ্ট বলে মনে করেন কি?