শনিবার রংপুরে ১৫ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল
রংপুর প্রতিনিধি
রংপুর বিভাগের আট জেলায় কারফিউ জারির অষ্টম দিনে শনিবার (২৭ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শিথিল থাকবে। এদিন সকাল ৬টার আগ পর্যন্ত এবং রাত ৯টার পর থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকবে। শুক্রবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যায় রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. জাকির হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও রংপুর জেলায় সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত অর্থাৎ ১৫ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল থাকবে। অন্যান্য দিনের মতো শনিবারও সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যরা নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাঠে কাজ করবে।
এদিকে শুক্রবার রংপুরে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলমান কারফিউ শিথিল রাখা হয়। এদিন সকাল থেকেই নগরীতে জীবনযাত্রা ছিল স্বাভাবিক। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলেও জেলার কয়েকটি রুটে আন্তঃজেলা বাস চলাচলের পাশাপাশি রংপুর থেকে বেশ কয়েকটি ঢাকাগামী বাস ছেড়ে গেছে। পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুরো জেলায় যৌথ বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে।
রংপুর মহানগর এলাকায় লোকজনের চলাচল ও যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেই ঘর থেকে বাইরে বের হয়ে প্রয়োজনীয় কাজ সেরেছেন। বাইরে বের হতে পেরে স্বস্তিতে ছিলেন সাধারণ মানুষ। দূরপাল্লা, আন্তঃজেলা ও উপজেলা রুটে বাস ছেড়েছে। বাস স্ট্যান্ডগুলোতে যাত্রীদের ভিড় ছিল সকাল থেকেই। ছুটির দিনে বিভিন্ন এলাকায় খোলা ছিল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নগরবাসীর মধ্যে সব ধরেনর আতঙ্ক কেটে গেছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, রংপুর মহানগরসহ জেলায় সার্বিক পরিস্থিতি সন্তোষজনক। কারফিউ শুরুর পর থেকে রংপুরে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী ছাড়াও বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যরা কাজ করছেন। দ্রুতই সব কিছু স্বাভাবিক হবে বলে আশাবাদী তিনি।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরপিএমপি) কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান জানান, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করা দুষ্কৃতকারীরা রংপুরে গত ১৬, ১৮ ও ১৯ জুলাই সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা ও ব্যবসায়িক ভবনে নজিরবিহীন তাণ্ডব চালিয়েছে। তিন দিনে দুর্বৃত্তরা পুড়িয়ে দেয় তাজহাটা থানা, গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়, নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িসহ বিভিন্ন পুলিশ বক্স, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়, ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের কার্যালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ভবন, পরিবার-পরিকল্পনা অফিস, মুক্তিযোদ্ধা ভবন। র্যাব-বিজিবি, পুলিশের সাতটি গাড়ি, তিনটি ট্রাকসহ ২৫টিরও বেশি গাড়ি এবং ১২০টির বেশি মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা পুড়িয়ে দেয় তারা। তাজহাট থানা থেকে মোটরসাইকেল ও রিকশাসহ, কম্পিউটার, মামলার আলামত, ফোর্সের ট্রাংক ভেঙে সবকিছু লুট করে নিয়ে যায় দুষ্কৃতকারীরা।
এই সময়ে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান ফটক, সিসিটিভি ক্যামেরা, দুটি ময়লার গাড়ি, মডার্ন মোড়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য অর্জন ও শাপলা চত্তরের রেলিং, টাউন হলে মুজিববর্ষের ডিসপ্লে, সোনালী ব্যাংক, সমবায় ভবন, সাদমান হোটেল, জেলা পরিষদ কমিউনিটি মার্কেট, সিটি কর্পোরেশনের তিনটি প্রচার এলইডি টিভিসহ নগরীর বিভিন্নস্থানে ট্রাফিট পুলিশের বিভিন্ন রোড ডিভাইডার, ধাপ পুলিশ ফাঁড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। কারাগার, জেলা পুলিশ লাইন্স, ট্রাফিক অফিস, সার্কিট হাউস, ডিসি এসপির বাংলোয় হামলার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। ভাঙচুর ও লুটের চেষ্টা হয় সোনালী ব্যাংক, বুথ, অজর্ন ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন স্থাপনায়। এসব ঘটনায় অন্তত ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
পুলিশ কমিশনার জানান, এসব ঘটনায় ১২টি মামলায় শুক্রবার সকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৭৫ জনকে। অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তদন্ত চলছে অর্থের জোগানদাতা ও মদদদাতাদের ব্যাপারে। এর মধ্যে দুষ্কৃতকারীদের অনেককেই চিহ্নিত করা গেছে। নিরপরাধ কাউকেই গ্রেপ্তার করা হবে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নগরবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন জানান, রংপুর মহানগরীসহ আট জেলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই কারফিউ স্থায়ীভাবে তুলে নেওয়া হবে। জনগণ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিবেচনায় শিথিল সময় ছাড়া অন্য সময়ে সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানান তিনি।