মাটির পরিবর্তে বাঁধ দিতে বালি ব্যবহার করছে চিনা কোম্পানি, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে অসন্তুষ্ট বাংলাদেশের বিশিষ্টজনেরা
বিশেষ প্রতিনিধি
পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা-সহ বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ উচ্চতার কাজ চলছে, সেই কাজ করছে চিনের কোম্পানি। চিনের কোম্পানি মাটির পরিবর্তে বাঁধ দিতে বালি ব্যবহার করছে, যা ঝুঁকিপূর্ণ!
বালি দিয়ে বাঁধ দেওয়ায় সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় বন্যার কারণে জলোচ্ছ্বাস হলে মানুষের প্রাণ চলে যেতে পারে, বিনষ্ট হতে পারে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। চিনা কোম্পানির এই কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্টজনেরা। তাঁদের মতে, চিনকে খুশি করতেই বাঁধের কাজও চিনা কোম্পানিকে দিয়ে করানো হচ্ছে, দেশীয় প্রতিষ্ঠানই যাতে এই বাঁধের কাজ করুক এমনটাই চাইছেন তাঁরা।
এ ব্যাপারে সংবাদদাতার সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেছেন, "চিনা কোম্পানিগুলোর কাজের ব্যাপারে অনিয়মের অভিযোগ অনেক আগে থেকেই আছে। সেক্ষত্রে চিনের বিনিয়োগ করা কাজ চুক্তি অনুযায়ী তারাই করবে।
কিন্তু দেশীয় কোম্পানি থাকতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের কাজ চিনা কোম্পানিকে দেওয়াটা, অনেকটা সে দেশকে খুশি করার মতো মনে হয়। আর উপকূলীয় এলাকায় বেরিবাঁধ নির্মাণের কাজ, সেই পাকিস্তানের সময় থেকে দেশীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো করে আসছে। তখনও বিশ্বব্যাংকের টাকায়ই বেরিবাঁধ নির্মাণ করা হতো। বালি দিয়ে বেরিবাঁধ নির্মাণকারী চিনা কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।"
উল্লেখ্য, সরেজমিনে অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছে, পটুয়াখালীর গলাচিপা, কলাপাড়া, পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া ও বরগুনার পাথরঘাটায় ২০৮ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ পুন:নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশের ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড’। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ১ হাজার ৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের র্নিমাণ কাজ পায় চিনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চংকিং ইন্টারন্যাশনাল কনসট্রাকশন কর্পোরেশন (সিকো)।
এই প্রকল্পের আওতায় ১২৮.৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলার গলাচিপার গোলখালী এলাকার ৩৪ কিলোমিটার বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু করে চিনের এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বাঁধ নির্মাণে মাটির পরিবর্তে বালু ব্যাবহার করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পটুয়াখালীর নির্বাহী কর্মকর্তা এই কথা অস্বীকার করেন। স্থানীয় মানুষের বাধার মূখে প্রথমদিকে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হলেও, স্থান পরিবর্তন করে ড্রেজার দিয়ে বালি কেটে চালাচ্ছে বাঁধ উচ্চতার কাজ।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংবাদাতাকে বলেন, বাঁধ নির্মাণে বালির ব্যবহার হওয়ার কথা নয়। তবে এমনটা হয়ে থাকলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। বিশেষ সুযোগ অথবা খুশি করতেই বাঁধ নির্মাণের কাজও কী চিনকে দেওয়া হয়েছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক টেন্ডার করা হয়েছে যারা কম দর দিয়েছে তারা পেয়েছে। এতে কোনও দেশকে খুশি করার কিছু নেই বলে তিনি দাবি করেন।
তবে এ ব্যাপারে একাধিকবার কাজ বন্ধের জন্য চিঠি দেওয়া হলেও তা উপেক্ষা করে সিডিউল বর্হিভূত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে চিনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। এমন অভিযোগ করেন পটুয়াখালীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী। তিনি বলেন, চিনা কোম্পানির অনিয়মের অভিযোগ সংশ্লিষ্টদেরও জানানো হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।