
নারায়ণগঞ্জে ‘ইএফডি’ মেশিন বসানোর জন্য ভ্যাট অফিসের জরীপ চলমান
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, নারায়ণগঞ্জ
তিন মাস ধরে ভ্যাট অফিসের টিম নারায়ণগঞ্জের স্বর্ণের দোকানগুলোতে জরীপ চালাচ্ছে। তাদের জরীপ শেষ হলেই সরকার থেকে একটি তালিকা আসবে। সেই তালিকানুযায়ী মেশিন বসানো হবে। এক্ষেত্রে কোন আপত্তি চলবেনা। তবে নারায়ণগঞ্জের জুয়েলারি দোকান মালিকরা ঘোরতর আপত্তি জানিয়েছে।
কোন ধরনের কর্মসূচি না দিলেও শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জের জুয়েলারি দোকান মালিকগণ ভ্যাট বৈষম্য নীতি দূর করার দাবি জানিয়েছেন। জুয়েলারি দোকান মালিক তথা স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ জেলার অধিকাংশ স্বর্ণ ব্যবসায়ী সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দেয় না। আমরা যারা ১০০ দোকান মালিক ভ্যাট-ট্যাক্স দেই-তাদের কোন পরামর্শই ভ্যাট কর্মকর্তারা কানে তুলছেনা। নারায়ণগঞ্জে গড়পড়তা ইএফডি মেশিন বসাচ্ছেন। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জ জেলা কাস্টমস, একসাইজ ও ভ্যাট অফিসের অফিস সুপার শামীমা আক্তার জানান, জেলায় বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এ যাবত ৩০০ ইএফডি মেশিন বসানো হয়েছে। জুয়েলারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে জরীপ চলছে। এই জরীপ শেষে যতগুলোর তালিকা পাওয়া যাবে ততগুলো প্রতিষ্ঠানেই ইএফডি মেশিন বসানো হবে। নারায়ণগঞ্জের জুয়েলারী প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ২০০ এর মত মেশিন বসানো হতে পারে।
নারায়ণগঞ্জসহ ১৮টি জেলার স্বর্ণের দোকানগুলোতে ভ্যাট মেশিন বা ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। রাজস্ব আদায় বাড়াতে জুয়েলার্স সমিতির কাছে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের তালিকা চেয়েছে এনবিআর।
তবে ভ্যাট মেশিন বসানোর আগে সকল দোকানকে ভ্যাটের আওতায় আনতে হবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) ব্যবসায়ী নেতারা। প্রয়োজনে মাঠ পর্যায়ে এসে কাজ করতে হবে বলে মতামত তাদের।
বছরের শুরুতে (২২ জানুয়ারি) ভ্যাট মেশিন বসানোর প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এমনই মতামত ব্যক্ত করেন বাজুসের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি মো. হানিফ উদ্দিন সেলিম।
তিনি বলেন, ‘শুধু নারায়ণগঞ্জে ১০০ নিচে এমন ব্যবসায়ী পাওয়া যাবে যারা ভ্যাট এবং অন্যান্য লাইসেন্সের ফি সরকারকে দিচ্ছে। তবে সমগ্র নারায়ণগঞ্জে ৫০০ বেশি স্বর্ণের দোকান আছে। এই ভ্যাট মেশিনটা দেওয়ার আগে আমরা বলেছিলাম মাঠ পর্যায়ে এসে সকল দোকানকে ভ্যাটের আওতায় আনতে হবে। তারপর মেশিনের ব্যবস্থাটা করলে সকলের জন্যই ভালো।
তবে তারা সেটা না করে, যারা ভ্যাট দিচ্ছে তাদের উপর মেশিনটা চাপিয়ে দিচ্ছে। এটা করে দুই ধরনের ব্যবসায়ীদের মাঝখানে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। দেখা যায় যারা ভ্যাটের আওতায় আছে তারা সরকারকে ভ্যাট সহ ৫ রকমের ফি দিচ্ছে, অথচ তারা যারা ফি দিচ্ছে না প্রতি ভরি সোনা দশ হাজার টাকা কম বিক্রি করলেও তাদের লাভ বেশি হচ্ছে।
এ জন্য আমরা আহ্বান জানিয়েছিলাম যাতে আগে মাঠ পর্যায়ে এসো হলেও প্রতিটি জেলার সকল দোকানকে ভ্যাটের আওতায় আনা হোক। তারপর ভ্যাট মেশিনের ব্যবস্থা করা হোক। ব্যবসায়ীদের জন্য সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে সকল সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই।’
প্রসঙ্গত, জানুয়ারির শুরুতে জুয়েলার্স সমিতির নেতাদের সঙ্গে ইএফডি স্থাপন নিয়ে আলোচনা করে এনবিআর। সেখানে সমিতির নেতারা জুয়েলারি খাতে ভ্যাট, ব্যাগেজ রুল, সোনা আমদানিসহ বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। সভায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, টাঙ্গাইল, জামালপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি এলাকার সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন স্থাপন করা হবে বলে জানায় এনবিআরের কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তালিকা চান এনবিআর। প্রয়োজনে একবারে দেওয়া সম্ভব না হলে আংশিকভাবে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।