
নারায়ণগঞ্জে গ্যাস বিস্ফোরণে দগ্ধ শিশু সুমাইয়ার পর মা রুপালীর মৃত্যু, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে দগ্ধ শিশু সুমাইয়ার পর তার মা রূপালী (২০)’র মৃত্যু হয়েছে। রবিবার (৯ মার্চ) ভোর পৌনে ছয়টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যায়। যার ফলে আহত আটজনের মধ্যে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩ জনে দাঁড়িয়েছে।
জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন শাওন বিন রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ৩৪ শতাংশ দগ্ধ হয়ে হাসপাতালের বিছানায় জীবন-মরণের লড়াই করছিলেন রূপালী।
এরআগে, গত শনিবার জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মোহাম্মদ হান্নান (৪০) এবং রূপালীর দেড় বছর বয়সী শিশু কন্যা সুমাইয়া মারা যান। হান্নানের শরীরের ৪৫ শতাংশ পুড়ে এবং সুমাইয়ার ৪৪ শতাংশ পুড়েছিলো।
টিনশেডের একটি বাড়িতে গ্যাস পাইপলাইনে লিকেজ থেকে সৃষ্ট আগুনে দুটি পরিবারের চার শিশুসহ আটজন গুরুতর দগ্ধ হয়েছিলো। আহতদের মধ্যে রয়েছেন, রূপালীর স্বামী সোহাগ (২৩), হান্নানের স্ত্রী নূরজাহান আক্তার লাকী (৩০), তাদের মেয়ে জান্নাত (৩), সামিয়া (৯) এবং ছেলে সাব্বির (১৬)। তারা সকলেই এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নারায়ণগঞ্জে আইন-শৃংখলা বাহিনীর পরিচয়ে প্রবাসীদের গাড়িতে ডাকাতি, ২ পুলিশ সদস্যসহ গ্রেপ্তার ৫
আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে প্রবাসীদের গাড়ীতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতরা প্রবাসীদের সাথে থাকা বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় শনিবার (৮ মার্চ) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রূপগঞ্জের পূর্বাচল ও রাজধানীর মিরপুর ক্যান্টমেন্ট এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২ পুলিশ সদস্য ও ১ নৌবাহিনীর সদস্যসহ ৫ ডাকাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসময় উদ্ধার করা হয় লুট হওয়া বিভিন্ন মালামাল। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, বরাস্তকৃত পুলিশ কন্সটেবল কাজল ইসলাম, চাকুরিরত পুলিশ কন্সটেবল রুবেল, বরখাস্তকৃত নৌ বাহিনী সদস্য রিয়াজুল জান্নাত, সিয়াদাত রাজ ও রহমত আলী।
প্রবাসী জসিম উদ্দিন জানান, তার বাড়ি কক্সবাজার এলাকায়। দীর্ঘ দিন ধরে সে ও তার দুই বন্ধু সালাউদ্দিন ও শহীদ মিলে দুবাই থেকে বিভিন্ন মালামাল এনে রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় ব্যবসা করে আসছে। গত ২ বছর পূর্বে দুবাইয়ে পরিচয় হয় মিরপুর এলাকার সজিব নামে একজনের সাথে। তাদের সাথে সেও ব্যবসায় যোগ দেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার ভোরে তারা একসাথে মালামাল নিয়ে ৪ জন দেশে ফিরেন। এয়ারপোর্ট থেকে গাড়ি যোগে ঢাকা নিউমার্কেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। নিউমার্কেট বাসার নিচে পৌছলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাদের সাথে আসা সজিবের সহযোগী একটি গাড়ীতে আসা ৮/৯ জন পুলিশ, নৌবাহিনীর সদস্য পরিচয়ে আইন শৃংখলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তাদের কাছে অবৈধ মালামাল আছে এমন কথা বলে থানায় যেতে বলে।
এ নিয়ে প্রথমে তাদের সাথে কথাকাটাকাটির পর জোর পূর্বক তিন বন্ধু সালাউদ্দিন, জসিম উদ্দিন ও শহীদকে বিদেশ থেকে আনা স্বর্নালংকার ও বিভিন্ন মালামালসহ পুলিশের ব্যবহৃত ১টি ডাবল কেবিন পিক-আপ ও ১ টি প্রাইভেটকারে তুলে নেয়। অন্য গাড়ীতে কৌশলে পালিয়ে যায় সজিব।
কিন্তু তাদেরকে থানায় না নিয়ে একটি প্রাইভেটকারে মিরপুর ও পুলিশের ব্যবহৃত ডাবল কেবিন পিকআপ পূর্বাচল তিনশো ফিট সড়কের এক জায়গায় এনে তাদের মুক্তিপন বাবদ ৫০ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের বিভিন্ন ভাবে হেনস্থা করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে রাজধানী মিরপুর ক্যান্টমেন্ট এলাকা থেকে ছিনতাই হওয়া বিভিন্ন মালামালসহ আটক করা হয় ৩ ডাকাত সদস্যকে।
পূর্বাচল হাবিব নগর থেকে এলাকাবাসীর সহযোগীতায় পুলিশের কন্সটেবল রুবেলসহ ২ জনকে আটক করে। পরে র্যাব-১’র কাছে তাদেরকে হস্তান্তর করে। উদ্ধার করা হয়- লুট হওয়া ১৬ ভরি স্বর্নালংকার, ৭টি ল্যাপটপ, ২৮ টি মোবাইল ফোন, ৫৩ কার্টুন সিগারেট, ৫৯ কৌটা গুড়া দুধ, ৭৮ সেট থ্রী পিস, ৩৮৪ টি প্রসাধনী ক্রীম উদ্ধার। জব্দ করা হয় ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ১টি পুলিশের ডাবল কেবিন পিকআপ, ১টি প্রাইভেটকারসহ ১টি হ্যান্ডকাপ, ১ টি ওয়াকিটকি ও আইনশৃংখলা বাহিনীর পোশাক।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র নিজেদে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে প্রাবাসীদের তুলে নিয়ে তাদের মালামাল লুটে নিয়ে যায়। পূর্বাচলের হাবিব নগর ও মিরপুর ক্যান্টমেন্ট এলাকা থেকে ডাকাত সদস্য একজন চাকুরিচুত্য পুলিশ সদস্য, একজন চাকুরিচূত্য নৌবাহিনীর সদস্যসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় লুট হওয়া বেশীরভাগ মালামাল।
ওসি আরো জানান, পুলিশ হেড কোয়ার্টারে কর্মরত পুলিশ কন্সটেবল রুবেল। সে গাড়ী চালাত। সে পুলিশের গাড়ী নিয়ে ডাকাতির কাজে অংশ গ্রহন করেন। এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এঘটনায় জড়িত বাকিদের গ্রেপ্তার ও লুট হওয়া বাকি মালামাল উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।