
বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মজিবুর রহমান সরোয়ার -প্রাচ্যের ভেনিস এখনো অযত্ন অবহেলায়
বরিশাল ব্যুরো
বরিশাল বিভাগ উন্নয়ন ও স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির আয়োজনে বরিশাল বিভাগের উন্নয়ন শীর্ষক ভাবনা সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি (বিআরইউ) কার্যালয়ে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
শুরুতে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক নেতা গোলাম মাওলা সহ যারা মৃত্যু বরণ করেন তাদের রুহের মাগফেরাত কামনায় এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার।
তিনি বলেন, প্রাচ্যের ভেনিস এখন অযত্নে অবহেলায় রয়েছে। এক সময়- যে খালে গয়না নৌকা স্পিড বোর্ড চলতো সে খাল এখন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আন্দোলন সংগ্রাম ছাড়া বরিশালবাসী কখনো কিছু আদায় করতে পারেনি।
বরিশালে যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সবই আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে। আমি মেয়র থাকাকালীন সময়ে বরিশালের ২২টি খান খননের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। আবার দায়িত্বে আসলে চলাচলের অযোগ্য খাল কে পূনরায় খনন করে পূর্বের অবস্থানে নিয়ে যেতে চেষ্টা করবো।
বিগত দিনে দেখেছিলাম হঠাৎ এক জেলা প্রশাসক খান খননের ডাক দিয়ে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে পরিষ্কার করেছিল। সেই সময়ে দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী পুরস্কৃত করবার পর তিনি আর সে খালের দিকে নজর দেয়নি। তারপর থেকে আর সঠিকভাবে খাল খননের উদ্যোগও নেয়া হয়নি।
আসলে উদ্যোগ নিলেই হবে না। কারণ, পরিপূর্ণভাবে সফলতা না আসা পর্যন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া উচিত। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বরিশালের সমস্যাগুলো নিয়ে আগেই কাজ করবে।
বরিশাল বিভাগ উন্নয়ন ও স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটি সভাপতি এ্যাভোকেট নজরুল ইসলাম খান রাজন এর সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন- বিআরইউ সভাপতি আনিসুর রহমান খান স্বপ্নন ও সাধারণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ, বরিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি আমিনুল ইসলাম খসরু, বরিশাল আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট সাদিকুর রহমান লিংকন।
বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট আকতার হোসেন মেবুল, বরিশাল মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল, গণসংহতি আন্দোলনের বরিশাল জেলার সমন্বয় দেওয়ান আব্দুর রশিদ নিলু,এ্যাডভোকেট হিরোন কুমার দাস। বিআরইউ সাবেক সভাপতি সুশান্ত ঘোষ ও আলী জসিম সহ বরিশাল বিভাগ উন্নয়ন ও স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটি প্রায় অর্ধশত নেতৃবৃন্দ।।
এ্যাড. নজরুল ইসলাম খান বলেন, ৫ ই আগষ্টের আন্দোলনে সাংবাদিকরা যে অবদান রেকেছে তা মনে রাখার মত। আমরা সকল পেশার মানুষদের ওই আন্দোলনের শ্রম কে স্বরণ করে সম্মান জানাচ্ছি।
আমাদের বরিশাল বিভাগ উন্নয়ন ও স্বার্থ সংরক্ষণ কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। আমাদের বিগত দিনে সমাবেশ বা আন্দোলন করা সম্ভব ছিলো না।
তবুও আমরা কাজ করে গেছি আমাদের সাধ্যের মধ্যে দিয়ে। আমরা আমাদের এ সংগঠন সকল সময়ের মত এখনো অরাজনৈতিক ভাবে বরিশালের স্বার্থে কাজ করে যাবে। আয়োজকদের পক্ষে অনুষ্ঠানে তিনি বরিশাল বিভাগের ২১ জেলার উন্নয়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সকলকে একত্রে কাজ করতে অনুরোধ করেন।
অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, আমাদের বরিশাল অভাগা। যেখানে বরিশালের উন্নয়নে বহু সিদ্ধান্ত গ্রহণের আশ্বাস দিলেও তা আমরা সফল হতে দেখিনি। আমরা একটি সময় আমরন কর্মসূচি করে অনেক টা সমস্যার সমাধান সরকারের কাছ থেকে আদায় করতে কাজ করেছিলাম।
আমাদের বরিশালে এই সকল উন্নয়ন মূলক কাজে যোগ্য লোক না নির্বাচন করলে সেই উন্নয়ন সঠিক ভাবে দ্রুত সময়ে সফল করা সম্ভব নয়। বরিশালের উন্নয়নে যোগ্যেদের অগ্রাধিকার দিয়ে আমাদের বরিশালের জন্য কাজ করে যেতে হবে।
বক্তরা দাবি করেন- ভোলার গ্যাস পাইপাই লাইনের মাধ্যমে বরিশালে আনা, বরিশালে ইপিজেড, ঢাকা বরিশাল মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নত করা, কুয়াকাটাকে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র করা, আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম তৈরি করা, বরিশাল বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের করার দাবি, জেলের টেকসই উন্নয়নের জন্য মৎস্য প্রেসেসিং জোন করার দাবি, মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি, টেকটাইল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি, বরিশালে রেল লাইন স্থাপন, শহর রক্ষা বাদের দাবি তুলেন, ভোলা নদীতে ব্রিজের দাবি, ওয়াটার টিট্রমেন্ট প্লান স্থাপনের দাবি, আধুনিক ইকোপার্ক তৈরি করা, জেল খাল সহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ খালগুলো উদ্দার করা।
উল্লেখ্য, ২০০০ সাল থেকে বরিশাল বিভাগ উন্নয়ন ও স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের দাবির মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয় এবং বরিশাল বিভাগের ২১ টি জেলায় বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন হয়।