
নির্বাচন যাতে সময় মতো না হয় ষড়যন্ত্র চলছে : ড.আসাদুজ্জামান রিপন
কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি
বাংলাদেশ জাতীয়তবাদী দলের সহসভাপতি ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, নির্বাচনকে বাঁধাগ্রস্থ করার চেষ্টা চলছে। কিছুক্ষণ আগে কক্সবাজারে বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এটা কি স্বাভাবিক ঘটনা ? এখনতো দেশে সরকার আছে। বাংলাদেশে যাতে সময় মতো নির্বাচন না হয়, গণতন্ত্র নস্যাতের জন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, পাকিস্তানে মাঝে-মধ্যে দেখি ওখানকার সেনাবাহিনী-বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে মাঝে মধ্যে পিছন থেকে হামলা করে। পটকা, বোমা, টোমা ফাটায়।এধরনের ঘটনা আমরা পাকিস্তানের বেলায় জানি। কিন্তু সে আলামত বাংলাদেশে কেন? তার কারনটা হলো বাংলাদেশে যাতে দ্রুত নির্বাচনটা না হয়। নির্বাচনকে বাঁধাগ্রস্থ করতে ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু আমরা সে ষড়যন্ত্র রুখে দিতে চাই।
রোববার বেলা পৌনে ১১টায় দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতি,আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ও জাতীয় নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণার দাবীতে শহরের পৌরপার্কের মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় ঘোষিত জেলা বিএনপি’র সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. আসাদুজ্জামান রিপন জনগণের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, একটি ফ্যাসিবাদী সরকারকে আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা যদি ক্ষমতাচ্যুত করতে পারি, তাহলে আমরা ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে কেন পারবো না? ১৬ বছর ধরে আন্দোলনের ফল হিসেবে গত ৫ আগষ্ট ফ্যাসিবাদীরা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। তবে এখনও তাদের দোসরা নানান জায়গায় রয়ে গেছে। তারাই এখন দেশের মধ্যে ষড়যন্ত্র করছে।আমরা মানুষের ভোটের অধিকারের জন্য আন্দোলন করছি। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিকভাবে সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা আন্দোলন করছি। এখন জাতীয়তাবাদী দল জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরকার নির্বাচিত করতে চায়। নির্বাচন সম্পর্কে কোন এক উপদেষ্টা বক্তব্যে বলেছেন, আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, তারপর হবে জাতীয় নির্বাচন। আবার কোনো কোনো দল বলছে আগে শেখ হাসিনার বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে।বিচার করতে কত বছর লাগবে? আমরা আওয়ামী লীগের আমলে দেখিছি জামায়াতের নেতাদের ফাঁসি দিতে তথাকথিত প্রহসনের বিচার করতে হাসিনার প্রায় ১০ বছর লেগেছে।৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাসহ সকল হত্যাকে আমরা নিন্দা করি। কোন মুসলমান কারও হত্যাকে সমর্থনকে করে না। যাদেরকে তিনি মনে করেছেন-তার পিতার হত্যার জন্য দায়ী, তাদেরকে ফাঁসি দিয়েছে কত বছরে? বহু বছর পরে তাদেরকে ফাঁসিতে দিয়েছেন বিচারিক প্রক্রিয়ায়।আমরা কি তাহলে এই নির্বাচনের জন্য ৫-১০ বছর অপেক্ষা করবো?
দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এমনিতেই পারেন না,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাত ৩টায় সংবাদ সম্মেলন করেন।দেশে নির্বাচিত সরকার না থাকার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। অর্থাৎ এখানে কোন মালিক নেই, যে যার মতো ফ্রিস্টাইলে চলছে। সকাল বেলায় টেম্পুলীগ, দুপুর বেলা ঠেলালীগ।নানান ধরণের প্রতিষ্ঠান এখন শাহবাগে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছে সরকারকে। সে জন্য দেশে একটা দায়িত্বশীল জনগণের সরকার দরকার। একটা কর্তৃত্বশীল সরকার দেশে দরকার। যার নির্দেশ সরকারি কর্মকর্তারা মানতে বাধ্য হবে।একজন উপদেষ্টা বলেছেন, সকল ডিসি রাতের ভোট করেছেন, তাদের চাকরি থেকে বাদ দিচ্ছেন।পুলিশদেরকেও ধরা হবে। এতদিন লাগে? আপনারা জানেন না ২০১৮ সালের নির্বাচনে কোন কোন এসপি সাহেব, কোন ওসি সাহেব রাতের ভোটে এমপি বানিয়েছেন, ব্যালট বাক্স ভরেছেন জানেন না? ২০১৪ ও ২০১৮ সালের এসপি যারা যেখানে আছেন, তাদেরকে এখন পর্যন্ত বসিয়ে রেখেছেন কেন? তাদেরকে এই মূহুর্তে চাকরি থেকে বাদ দিতে হবে। স্বৈরাচারের ভূত সরকারের মধ্যে রেখে গণতন্ত্র কায়েম করা যায় না। একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমাদের রাজনীতিকে সুন্দর করতে হবে। হানাহানি, দ্বন্দ এগুলো রাখা যাবে না। আগামীতে যাতে বিএনপি বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পারে সেজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি’র অনেকে বলেছেন গোপালগঞ্জ নাকি নৌকার ঘাঁটি। কেন নৌকা মার্কার ঘাঁটি? নৌকা মার্কা গোপালগঞ্জকে কি দিয়েছে। এখানে একজন পুলিশ প্রধান (আইজিপি) বেনজির আহমেদ ছিলেন। তিনি এখানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি জোর-জবরদস্তি করে ব্যক্তিগত খামার করেছেন। বাংলাদেশের জনগণকে খুন-গুম, মিথ্যা মামলা ও জিম্মি করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন। সেই টাকায় তিনি জমিদারি প্রতিষ্ঠা করার জন্য চেষ্টা চালিয়েছেন।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, পতিত সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা দেশ থেকে পালানোর পরে তাদের বিরুদ্ধে দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে। এটা কি এক ধরণের ফাজলামী নয়? এসব ফাজলামী আমরা দেখতে চাই না। আমরা স্পষ্ট জানতে চাই, ফ্যাসিবাদের দোসরা, যারা দুর্নীতি, জনগণের সম্পদ লুন্ঠন ও খুন-গুমের সাথে জড়িতরা কোথায় আছেন? সবাই পালিয়ে গেছেন। যারা সরকারের দায়িত্বে ছিলেন, তারাই পালাতে সুযোগ করে দিয়েছেন। মাঝে-মধ্যে শুনি দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা।এই নাটক বন্ধ করতে হবে। আমরা চাই তাদেরকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।আমরা বারবার বলছি দেশের সামনে বিপদ আছে। বিপদটা এখনো কাটেনি।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান, সেলিমুজ্জামান সেলিম ও সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট জয়নুল আবেদিন মেজবা।
প্রধানবক্তা ছিলেন, বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও বিশেষ বক্তা ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী ।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব রখেন, জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি এম,এইচ খান মনজু, এফ এম সরফুজ্জামান জাহাঙ্গীর, সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, জেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারন সম্পাদক মনিরুজ্জামান পিনু, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক তৌহিদুর রহমান তাজ, জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক মেজর (অব.) ওহিদুল হক মোল্লা ও ডা. কেএম বাবর, জেলা যুবদলের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন লিপ্টন, জেলা ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাজ্জাতুল ইসলাম হীরা, প্রমূখ।
সঞ্চলনা করেন, জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক এডভোকেট কাজী আবুল খায়ের।#
মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন
আপনি ও পছন্দ করতে পারেন
সর্বশেষ
জনপ্রিয়
আর্কাইভ!
অনুগ্রহ করে একটি তারিখ নির্বাচন করুন!
দাখিল করুন