ডার্ক মোড
Tuesday, 18 March 2025
ePaper   
Logo
দিন বদলের প্রচেষ্টায় কুয়াকাটা শুটকি শ্রমিকরা

দিন বদলের প্রচেষ্টায় কুয়াকাটা শুটকি শ্রমিকরা

পটুয়াখালী প্রতিনিধি

খোলা জায়গায় বাতাস এবং রোদ ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছকে শুকানোর পরে যে অবস্থা তৈরি হয় সেটির নাম শুটকি। এ পদ্ধতিতে মাছকে বহুদিন সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব তাই দিন দিন বেড়েই চলছে শুটকির কদর। উপকূল অঞ্চল কুয়াকাটায় বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের সহজলভ্যতার কারণে পুরো অঞ্চল জুড়ে চলছে শুটকি উৎপাদন। এখান থেকে উৎপাদিত শুটকি সমগ্র বাংলাদেশ সহ বিদেশে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হয়। আর এ কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে স্থানীয় নারী পুরুষ। পুরুষের সাথে নারীরাও সমানতালে শ্রম দিয়ে যাচ্ছে। শুটকি তৈরির জন্য বছরে মাত্র ছয় মাস সময় পেয়ে দিনে ১২-১৫ ঘন্টা পরিশ্রম করে ভাগ্য বদলের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এ অঞ্চলের শ্রমিকরা। মৌসুমের পর বাকি সময়ে তাদের খুঁজে নিতে হয় অন্য কোন উপার্জন।

সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা সৈকতের পশ্চিমদিকে মাঝিবাড়ি, খাজুরা ছাড়াও খালগোড়া, গঙ্গামতি, কাউয়ার, চর ধুলাসার ও মহিপুরের নিজামপুর সহ আরো বেশ কয়েকটি গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে শুটকির উৎপাদন। এই এলাকার অন্তত ৩০ হাজার মানুষ শুটকির মৌসুমে কাজের সাথে জড়িত। এর মধ্যে অর্ধেক পরিমাণ জেলে এবং বাকিরা শুটকি উৎপাদনে কাজ করে। কুয়াকাটা, মহিপুর, আলিপুর, বাবলাতলা সহ বেশ কিছু মৎস্য আরৎ থেকে শুটকি ব্যবসায়ীরা সরাসরি কাঁচা মাছ সংগ্রহ করে শুকানোর জন্য নিজেদের মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে বড় ও ছোট মাছ আলাদা করে রোদে শুকানো হয়। সাইজ অনুযায়ী দুই-চার দিন শুকানোর পর পাইকারি বিক্রির জন্য বস্তা বন্দি করে বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়। পুরো অঞ্চল জুড়ে কয়েক হাজার নারী শ্রমিক রয়েছে যারা শুকানোর পর প্যাকেট জাত প্রস্তুতে কাজ করছে। তবে প্রতিটি কাজেই নারী-পুরুষদের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন দলবদ্ধতা।

নিজামপুর শুটকি পল্লীর নারী শ্রমিক মাসুদা বেগম বলেন, আমাদের দলে আমরা পাঁচজন একত্রে কাজ করি। আমাদের কাজ মাছ শুকানোর পর ছোট বড় আলাদা করা। আমরা প্রোডাকশনের কাজ করে এক মন মাছ বাছাই করতে পারলে ১৫০ টাকা মজুরি পাই। সারাদিন ১০ মন মাছ বাছাই করতে পারলে পনেরশো টাকা পাঁচ জনে ভাগ করে নেই। দিনে আমাদের অন্তত ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হয়।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, নির্দিষ্ট করে শুঁটকি শ্রমিকদের জন্য কোন বরাদ্দের ব্যবস্থা নেই তবে আমরা চেষ্টা করছি শুটকি শ্রমিকদের বাছাই পূর্বক জেলেদের তালিকাভুক্ত করে বিজিএফ কার্ডের অন্তর্ভুক্ত করে কিভাবে সহযোগিতা করা যায়।

জেলা মৎস কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, শুধুমাত্র শুটকি শ্রমিকদের নিয়ে মৎস্য অধিদপ্তর থেকে কোন ধরনের পরিকল্পনা কিংবা পরিকল্পনার প্রস্তাব দেয়া নেই তবে পরিসংখ্যান করে যদি শুধুমাত্র পেশাজীবী শুটকি শ্রমিকদের বা যাচাই বাছাই করা হয় তবে তাদের জন্য সরকারি প্রাণদনা কিংবা সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। শুটকি উৎপাদন সাধারণত মৌসুমী ব্যবসা আমরা চাচ্ছি বর্ষা মৌসুম সহ তারা যেন সারা বছর করতে পারে এজন্য তাদেরকে ইনডোর শুটকি করার জন্য পরিকল্পনা পদ্ধতি ও সহযোগিতা করছি। বড় সাইজের মাছ পচন ধরার পূর্বেই দু-একদিনের ভেতর যেন শুকিয়ে ফেলতে পারে এই ধরনের পদ্ধতির পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছি আমরা।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন