ডার্ক মোড
Tuesday, 18 March 2025
ePaper   
Logo
একটি বিল্ডিংয়ের গাঁ ঘেঁষে আরেক বিল্ডিং দূর্ঘটনা ঘটলে ম্যাসাকার হবে নয়ামাটিতে অগ্নিঝুঁকি অভিযান জরুরী

একটি বিল্ডিংয়ের গাঁ ঘেঁষে আরেক বিল্ডিং দূর্ঘটনা ঘটলে ম্যাসাকার হবে নয়ামাটিতে অগ্নিঝুঁকি অভিযান জরুরী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, নারায়ণগঞ্জ

অগ্নিঝুঁকি নিয়ে অভিযান শুরু হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা সদরের হোসিয়ারী ব্যবসার জন্য প্রসিদ্ধ নয়ামাটি এলাকার ভবনগুলোর দিকে নজর দেয়া উচিৎ। একেতো গলিপথ। তার উপর একটি বিল্ডিং ও আরেকটি বিল্ডিংয়ের গাঁ ঘেষাঁঘেষি করে তৈরী। কোন দূর্ঘটনা ঘটলে নয়ামাটি এলাকা ম্যাসাকার হবে। গুলশান সিনেমা হল গলির কয়েকজন থান কাপড় বিক্রেতা জানালেন, নয়ামাটি এলাকায় পানির অভাব। এখানে মানুষ পানির কষ্ট করে। ঠিকমত খাওয়া ও গোসলের পানিই মিলেনা আবার আগুণ নেভানোর পানি আসবে কিভাবে। এখানে কলকাতার মত পিলার হাইড্রেন্ট বসাতে হবে। অধিকাংশ মার্কেটগুলোতেই পানির রিজার্ভার নেই। নয়ামাটিতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকানো যায় না। ভেতরের রাস্তা অত্যন্ত সরু। মাথার উপরে তাঁরের জঞ্জাল। মিনি ট্রাকও ভেতরে ঢোকানো যায়না।

মহানগরীর আদি অঞ্চল টানবাজার, নিতাইগঞ্জ, নয়ামাটি এলাকা। এক সময়ের ছিমছাম সুপরিকল্পিত অঞ্চলটি এখন ফুটপাতহীন সংকীর্ণ সড়ক, ঘিঞ্জি পরিবেশ, জরাজীর্ণ ভবনে ঠাসা। দুদিক থেকে দুটি মাঝারি ধরনের গাড়ি এলেই বন্ধ হয়ে যায় অধিকাংশ সড়ক।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের এ এলাকার সরু গলির দুপাশ ধরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য রাসায়নিক গোডাউন ও কারখানা। আবাসিক ভবনেও অবাধে চলছে রাসায়নিক ব্যবসা। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা অরক্ষিত এসব গোডাউন যেন একেকটি টাইমবোমা। যা এখন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে আগুন লাগলে তা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যে কোনো সময়ে ঘটে যেতে পারে বড় দুর্ঘটনা।

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসের ঘটনা। ঈদের ছুটিতে নয়ামাটিতে আগুন লেগেছিল। লোকেশন গুলশান সিনেমা হল গলি। আগুণের কথা শুনেই হৈ চৈ পড়ে যায়। সবাই দৌড়ে গিয়ে দেখে দুই বিল্ডিংয়ের চিপায় পরিত্যক্ত ময়লার স্তুপে আগুণ জ্বলছে। কোন ধুমপায়ীর সিগারেটের উচ্ছিষ্ঠাংশ থেকে আগুনের সূত্রপাত। ছোট এই ঘটনাটা অবহেলা করার মত নয়। কেউ না দেখলে ময়লার স্তুপের এই ছোট আগুণের শিখাই পুরো নয়ামাটি এলাকা গ্রাস করতে পারতো বলে আশঙ্কা করছেন নয়ামাটি এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীসমাজের লোকজন।

প্রেস ব্যবসায়ী ফজল হোসেন বলেন, গুলশান সিনেমা, সোনারবাংলা মার্কেট, বর্ষণ সুপার মার্কেট, গ্রীণ সুপার মার্কেট ও ফজর আলী টাওয়ারের পূর্বপাশের গলিপথটি নয়ামাটির গলিপথের সাথে মিশে গেছে। এ পথে হাজার হাজার লোক চলাফেরা করে থাকে। নয়ামাটির ব্যবসায়ীরাও গলিপথটি ব্যবহার করেন। কাজেই এই পথটি গলিপথ হলেও এর গুরুত্ব অনেক বেশী। একেতো গলিপথ। তার উপর একটি বিল্ডিং ও আরেকটি বিল্ডিংয়ের গাঁ ঘেষাঁঘেষি করে তৈরী। কোন দূর্ঘটনা ঘটলে নয়ামাটি এলাকা ম্যাসাকার হবে।

পুরি, সিঙ্গারা, সমুচা ও চা এর দোকানদার ইয়াছিন মিয়া বললেন, গরমকাল মাত্র আসছে। দিনে দিনে গরম বাড়বে। এরমধ্যে অগ্নিকান্ডের ঝুঁকিতো আছেই। প্রায়শ পরিত্যক্ত গলির মধ্যে আগুণ লাগে। অবস্থা বেগতিক দেখলে মার্কেটের লোকজন দৌড়ে বার হয়ে বালতি দিয়ে পানি এনে আগুণ নিভায়। মাসে দু’একবার এমনটা হয়েই থাকে। এখানে কোন দোকানী ফায়ার ইস্টিংগুইসার রাখেনা। আমরা অনেক ভয়ে থাকি। এটাতো নয়ামাটির মূল ব্যবসা কেন্দ্রের বাইরের লোকেশন। ভেতরের অবস্থা আরো ঝুঁকিপূর্ণ।

সূত্রমতে, নয়ামাটি হোসিয়ারী এলাকা অগ্নিকান্ডের রেডজোন। এখানে কোন ধরনের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। অগ্নিঝুঁকিতে ভবনগুলো পরিদর্শন চলছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর পরিদর্শকরা পরিদর্শন শুরু করেছেন। যে সকল ভবনের ফায়ার লাইসেন্স নেই সে সকল ভবন মালিককে জেল জরিমানা হওয়ার কথা। ফায়ার লাইসেন্স না থাকলে এবং ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকলে ভবন মালিককে সর্বোচ্চ ৬ বছরের কারাদন্ড দেয়া হতে পারে। নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অচিরেই নয়ামাটি এলাকায় অভিযান চালাবে। বার বার মার্কেট এর ব্যবসায়ী ও ভবন মালিকদের সতর্ক করা হলেও তারা সে সবে কর্ণপাত করেন না। দিনে দিনে এই এলাকা আরো বেশি মাত্রায় ঘিঞ্জি হয়ে উঠছে। এক সময় তিন/চারতলা বিশিস্ট বিল্ডিং ছিল। বর্তমানে ৭ তলা থেকে ৮ তলা পর্যন্ত ভবনের অভাব নেই।

বাংলাদেশ হোসিয়ারী এসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট আলহাজ¦ বদিউজ্জামান বদু জানান, নয়ামাটি এলাকায় যুগের পর যুগ ধরে ফায়ার সার্ভিস সেবা দিয়েছে বিকল্প পথে। এক করিম মার্কেট পর্যন্ত মিনার গার্মেন্টস এর গলি পর্যন্ত ফায়ারের গাড়ি ঢোকে। সেখান থেকে পাইপ টেনে নিয়ে যাওয়া হয় ভেতরে ঘটনাস্থলে। আরেকটি পথ হচ্ছে লয়েল ট্যাঙ্করোড দিয়ে গাড়ি ঢুকিয়ে নয়ামাটি আখড়ার পেছনে নেয়া হয়। সেখান থেকে পাইপ টেনে নিতে হয়। এভাবেই চলছে অগ্নিনির্বাপণের কাজ। নারায়ণগঞ্জ সদর থানার সামনে দিয়ে লয়েল ট্যাংক রোডে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকিয়ে নিতে হয় আখড়ার পেছনে। সেখান থেকে পানির পাইপ বিভিন্ন মার্কেটের ভেতর দিয়ে অগ্নিকান্ডেরস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। নয়ামটির ভেতরে অধিকাংশ ভবনেই পানির রিজার্ভার নেই। এই এলাকায় নেই কোন জলাধারও। সত্তরের দশকেও থানা পুকুরপাড় নামে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার সামনে একটি বড় পুকুর ছিল। আশির দশকেও পুকুরের অস্তিত্ব ছিল। নব্বইয়ের দশকে এসে পুকুর ভরাট করে ফেলা হয়।

জানাগেছে, নয়ামাটি এলাকায় ব্যস্ত সময় দু’দিক থেকে দু’টি রিক্সা আসলে সাইড দেয়ার যায়গা থাকে না। দুই রিক্সার পেছনের চাকার নাট আড়াআড়ি ভাবে আটকে যায়। এই টক্কর ছাড়াতে ১০ মিনিটের যানজট বেধে যায়। চোখের পলকে এই যানজট বাড়তে থাকে। এরমধ্যে গলির মুখে একটি ঠেলাগাড়ি ঢুকলে আর রক্ষে নেই। যানঝট অবধারিত। নয়ামাটির ভেতরে অধিকাংশ ব্যবসায়ী হেঁটে চলাফেরা করতে অভ্যস্ত। অনেকে নিজের প্রাইভেটকার করিম মার্কেটের সামনে বা গুলশান সিনেমা হল এলাকায় রেখে ভেতরে হেঁটে প্রবেশ করেন। হেঁটে চলাফেরা করতেই তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। নয়ামাটিতে কোন অগ্নিকান্ড ঘটলে এখনো ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভেতরে ঢুকতে পারে না। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি নিয়ে বিকল্প পথ ব্যবহার করতে হয়।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন জানালেন, নারায়ণগঞ্জে শীঘ্রই ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট পরিদর্শন শুরু হবে। অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে এটা খুবই জরুরী। গত ক’দিন ধরে গরমটা বেশি পড়েছে। রোজা রেখে প্রচন্ড গরমে মার্কেট পরিদর্শন করা সম্ভব হয়নি। রোজা শেষ। ঈদ শেষ। গরমটা কমলেই শুরু হবে। এই মহানগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের আগের এ্যাসেসমেন্ট আছে। তবে আমরা এই তালিকা হালনাগাদ করবো। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকেও চিঠি দেয়া হবে। অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট ও বাণিজ্যিক ভবনের বিরুদ্ধে কঠোর এ্যাকশন নেয়া হবে। বঙ্গবাজারের ভয়াবহ ঘটনার পর সবার টনক নড়েছে। আমি এ জেলায় নতুন। আমি যোগদান করেই জেনেছি নয়ামাটি ও টানবাজারের ব্যবসায়ী ও ভবন মালিকেরা ফায়ার সার্ভিসের নোটিশকে অবহেলা করে।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন