
আমি নারায়ণগঞ্জকে ভালবাসি: অংশীজনদের সভায় নাসিক এর প্রশাসক এ,এইচ, এম কামরুজ্জামান
নিজস্ব প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ
অংশীজনদের সভায় নাসিক এর প্রশাসক এ,এইচ, এম কামরুজ্জামান নিজেই শহরে যানজটে আটকা পড়ার কথা স্বীকার করলেন। তিনি বলেন, এত দুর্ভোগের পরেও আমি নারায়ণগঞ্জকে ভালবাসি। আমি নিয়মিত চাষাড়ায় যানজট পাই। নারায়ণগঞ্জের ফুটপাত ও হকার সমস্যা সমাধান করতে গেলে সকলের সম্মিলিত সহযোগীতা প্রয়োজন। ফুটপাত মুক্ত করতে গেলেই একটি পক্ষ বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। ৪টি প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হলে নারায়ণগঞ্জবাসীর উপর কি প্রভাব ফেলবে সে বিষয় নিয়েই আজকের সভা। অংশীজনদের সভায় যে মতামত আমরা পেলাম তা প্রকল্প অনুযায়ী সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। আজকে নারায়ণগঞ্জের সকল মহলের লোক খোলামেলা কথা বলেছেন। এটা সূচনা হল। এরপর আমরা আবারো সবাই ডাকবো। বিভিন্ন সমস্যায় আলোচনা হবে এবং মতামত দেয়া যাবে। যানজট নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কম্বাইন্ড অপারেশন চালালে একঘন্টা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে। এরপর ফের যানজট।
সোমবার (২৭ জানুয়ারী) সকালে নাসিক এর অডিটরিয়ামে নারায়ণগঞ্জ মহানগরীতে বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক গৃহীত চলমান পরিবহন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ বিষয়ে অংশীজন সম্পৃক্তকরণ সভায় গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জের নাগরিকসমাজ, রাজনীতিবিদ, গণমাধ্যমকর্মী, সামাজিক সংগঠন ও সাংস্কৃতিক মহলের অভিজ্ঞজনরা। সভায় সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এর প্রশাসক এ,এইচ,এম কামরুজ্জামান।
সভার শুরুতে নারায়ণগঞ্জে চলমান পাঁচটি প্রকল্প নিয়ে সংক্ষিপ্ত ডকুমেন্টারি প্রদর্শন ও প্রকল্প নিয়ে আলোকপাত করে প্রকল্প সমূহের কর্তা ব্যক্তিরা। প্রকল্পগুলো হচ্ছে, পঞ্চবটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডাবল ট্রেন রাইন, মেট্রো রেল, কদমরসুল সেতু ও খানপুরের কন্টেইনার পোর্ট।
এই পাঁচটি প্রকল্পের কাজ চলমান। অধিকাংশেরই ৫০ ভাগের বেশি কাজ হয়ে গেছে। গতকাল নাসিক কর্তৃপক্ষ চমৎকার একটি সভার আয়োজন করেছিলেন অংশীজনদের নিয়ে। সভার এজেন্ডা ছিল এই পাঁচটি প্রকল্প অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পগুলোর কারণে নারায়ণগঞ্জবাসীর উপর কমবেশি যানজটের দুর্ভোগসহ দীর্ঘ মেয়াদী ভোগান্তি হবে। কেননা প্রকল্পগুলো একটার সাথে আরেকটার সমন্বয় করা হয়নি। এটাই ছিল আলোচনার মূল বিষয়।
সভার শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন নাসিক এর নগর পরিকল্পনাবিদ মোঃ মঈনুল হোসেন। এরপর একে একে পাঁচটি প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত ডকুমেন্টারি ও আলোকপাত করা হয়। সর্বশেষ নগর পরিবহন ব্যবস্থাপনা নিয়ে চমৎকার ডকুমেন্টারিসহ পাঁচটি প্রকল্পের জন্য নারায়ণগঞ্জবাসীর উপর কতটা দুর্ভোগের সৃষ্টি হবে-সে বিষয়টি চমৎকারভাবে উপস্থাপন করা হয়। প্রকৌশলী ফাহাদ ও তার সিনিয়র বিশেষজ্ঞ মাহাবুব সাহেব এর বক্তব্য অত্যন্ত সময়োপযোগী ও হৃদয়গ্রাহি ছিল। তারা দু’জনেই নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রাণের কথা বলেছেন।
পরিবহন পরিকল্পনাবিদ মাহাবুব হোসেন ও মোঃ ফাহাদ অত্যন্ত কম সময়ে বলেছেন, একটি শহরে উন্নয়ন মানে এই নয় যে, পায়ে হাঁটাচলার সুযোগ কমে যাবে। মেট্রোরেল বা ওভারপাস হলে শহরের রাস্তার যায়গা কমে যাবে। যানবাহন চলাচলের সুবিধা বাড়িয়ে লাভ কি ? মানুষের হাঁটাচলার সুবিধা বাড়াতে হবে। খানপুরে কন্টেউনার পোর্ট হলে হাসপাতাল মোড় থেকে চাষাড়া রেললাইন পর্যন্ত ওভারব্রিজ তৈরী করলে কিছু পণ্যবাহী গাড়ী চলাচলের সুযোগ বাড়বে। ওভার ব্রিজের পিলার বসানোর কারণে সড়কের যায়গা কমে যাবে। অতএব, লাভ কি ?
নাসিক আয়োজিত অংশীজন সম্পৃক্তকরণ সভাটি শেষ পর্যন্ত অভিযোগ, মতামত, ব্যাখ্যা, ক্ষোভ প্রকাশ ও সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদানের সভায় পরিণত হয়েছিল কিছু অংশীজনের কারনে। নারায়ণগঞ্জে চলমান ৫টি প্রকল্পের জন্য নারায়ণগঞ্জবাসীর উপর কি ধরনের প্রভাব পড়বে-সেই বিষয়ে কথা না বলে অধিকাংশ বক্তা রাগ ক্ষোভ ও গোস্যা ঝেরে নিজস্ব বক্র দৃষ্টিকোন থেকে বক্তব্য ফোকাস করার কসরত করলেন।
তবে সার্বিক দিক থেকে বরা যায় উপস্থিত ও মতামত প্রদানকারী মিলিয়ে সকল অংশীজন একটি বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, নারায়ণগঞ্জ শহর বর্তমানে কলাপস (অবরুদ্ধ) নগরীতে পরিণত হয়েছে। চাষাড়া মোড়, কালিরবাজার মোড়, গ্রীনলেজ ব্যাংক মোড়, ১ ও ২নং রেলগেইট মোড় দিনমান যানজটে নাস্তানাবুদ হতে হয়। নারায়ণগঞ্জবাসী যানজটে মরে যাচ্ছে। হাঁটতে না পারছেনা। ফুটপাতের প্রতি ইঞ্চি যায়গা দখল হয়েছে।
শহরের বর্তমান অবস্থায় রীতিমত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দৈনিক খবরের পাতা’র সম্পাদক এড. মাহাবুবুর