
সুনামগঞ্জ -জামালগঞ্জ রাস্তার বেহাল দশা,ভোগান্তিতে লক্ষাধিক মানুষ
মোঃ এমরান হোসেন, সুনামগঞ্জ
জামালগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ সড়কের নোয়াগাঁও বাজার পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার সড়ক এখন পথযাত্রীদের জন্য মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় প্রতিদিন দুর্ঘটনায় পড়েছে পথচারী ও যানবাহন। এ সড়ক দিয়ে যান চলাচল তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে যাওয়া ও কষ্টসাধ্য। তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে হাজারো মানুষ। জেলার ধর্মপাশা, মধ্যনগর ও জামালগঞ্জ উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের লোকজনের সুনামগঞ্জ ও সিলেট যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি। সড়ক সংস্কার না হওয়ায় পণ্য পরিবহন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগী, স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও বয়স্কদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবির মুখে জনপ্রতিনিধিদের বারবার প্রতিশ্রতি পাওয়ার পরও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এই সড়কটিতে। বর্ষাকালে পানিতে ডুবে থাকায় বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক জায়গায় সড়কের দুইপাশ ভেঙে যাওয়া সহ বড় বড় খানাখন্দ হয়েছে। একারণে দুর্ঘটনার ভয়ে যাত্রীরা নেমে হেঁটে যান ।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সড়কে কোন কাজ না হওয়ায় বর্তমানে স্থানে স্থানে ভেঙে এতো বেশী পরিমাণ গর্তের সৃষ্টি হয়েছে যেখানে চলাচলকারী যানবাহনের বডি সড়কে লেগে ক্ষতি হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার মানুষকে উপজেলা, সুনামগঞ্জ জেলা ও সিলেট বিভাগীয় শহরের সাথে যাতায়াত করতে জীবনের ঝুঁকি নিতে হচ্ছে। সড়ক দিয়ে গর্ভবর্তী নারী, অসুস্থ্য ও বয়স্ক লোকজনের যাতায়াত অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এমন কি উপজেলা প্রশাসন থানা পুলিশ ও সরকারি অ্যাম্বুলেন্স খানাখন্দের কারণে সুরমা নদীর ওপর পাড় সাচনাবাজারে রেখে, ওখান থেকেই যাতায়াত করছে। একারণে প্রশাসনের গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স সাচনা বাজারে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।
জামালগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী খাদিজা বেগম জানান, প্রতিদিন নোয়াগাঁও থেকে এই সড়ক দিয়ে কলেজে আসা যাওয়া করতে হয়। আটোতে উঠলে ঝাঁকুনির কারণে ভয়ে কাঁপুনি উঠে যায়, কখন জানি অটো উল্টে যায়। সড়ক সংস্কারের জন্য বার বার বলার পরও কোন উদ্যোগ নেওয়া হয় নি। নোয়াগাঁও বাজার থেকে আসা জামালগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী এমরান হোসাইন বলেন, জামালগঞ্জ থেকে নোয়াগাঁও পর্যন্ত সড়কে খানখন্দের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। আমরা অটোতে উঠলে ভয়ে থাকি- কখন যে অটো উল্টে যায়। অনেক সময় খানখন্দের পানিতে স্কুল ড্রেস নষ্ট হয়ে যায়। এই সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স এমনকি জামালগঞ্জ থানার পিকআপ নদীর ওপাড় সাচনা বাজারে পার করে নিয়ে যায়। উনারা যদি এই রাস্তায় চলাচল করতেন তাহলে বুঝতেন আমাদের কি দুর্গতি। তাই প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি, সড়কটি দ্রæত সংস্কার করে দিন।
লেগুনা চালক জাদিস মিয়া বলেন, আমি প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে সিলেট আসা যাওয়া করি। সড়ক খানখন্দ ও বেহাল দশার কারণে যাত্রীরা সব সাচনা বাজার দিয়ে চলে যায়। যদিও দুই-একজন যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করি, রাস্তায় খানাখন্দের কারণে প্রতিদিনই গাড়ি মেরামত করতে হয়।
জাল্লাবাজ ভীমখালী ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আব্দুল ওয়াকিব বলেন, কিছুদিন আগে রাস্তার বেহাল দশার কারণে নোয়াগাঁও বাজার থেকে জামালগঞ্জগামী একটি অটোরিক্সা জাল্লাবাজ গ্রামের শেষ প্রান্তে উল্টে যায়। এসময় একজন যাত্রী ঘটনাস্থলে মারাত্মক জখম হয়, পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়। নোয়াগাঁও বাজারে বেশ কয়েকটি গর্তে অল্প বৃষ্টিতে পানি জমে থাকার কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছোট ছোট শিশুরা ও তাদের অভিভাবকসহ পথচারীরা গাড়ি চলাচলের পানি ছিটকে বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হন, যা খুবই দু:খজনক।
নোয়াগাঁও বাজারের অংশটি আরসিসি ঢালাইয়ের আওতায় নিয়ে মজবুত ও টেকসই রাস্তা করার দাবি জানিয়ে আসছি আমরা, কেউ তা আমলে নিচ্ছে না।
ভীমখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান তালুকদার জানান, বারবার প্রশাসনকে অবহিত করার পরও কোন অদৃশ্য শক্তির কারণে সড়ক বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। ভীমখালী ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি দ্রæত সড়কটি সংস্কার করার জন্য।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. ছানোয়ার হুসেন জানান, জামালগঞ্জ সুনামগঞ্জ সড়কের ব্যাপারে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে হেমলিপ প্রকল্পের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। বিগত ১৪ বছর কাজ না হওয়ার কারণে খানখন্দ ভরা সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে। প্রতিদিনই কোন না কোন দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। দ্রæততম সময়ের মধ্যে সড়কটি সংস্কার করার জন্য সিলেট বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী এবং সিলেট অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলীকে অনুরোধ করেছেন তিনি।
সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, ২৫ হাজার পিকেট রমজানের ঈদের পূর্ব মুহূর্তে সড়কের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, তারা কাজ করেছেন। এসময় ৪ কি:মি: কাজ হলেও ৭ কি: মি: সড়কে খানখন্দই থেকে যায়। বুধবার সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) দেবজিৎ সিংহ মহোদয়কে বিষয়টি অবহিত করা হয়। তিনি নোট করে নিয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন
আপনি ও পছন্দ করতে পারেন
সর্বশেষ
জনপ্রিয়
আর্কাইভ!
অনুগ্রহ করে একটি তারিখ নির্বাচন করুন!
দাখিল করুন