গাইবান্ধায় ‘স্বৈরাচার পতন দিবস’ পালিত
আতিকুর রহমান আতিক, গাইবান্ধা
১৯৯০ এর স্বৈরাচার এরশাদ সরকার পতনের ৩২তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গাইবান্ধায় শ্রদ্ধা নিবেদন, শোভাযাত্রা, স্মৃতিচারণ, ১৯৮২ থেকে ৯০ পর্যন্ত ছাত্রনেতাদের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়।
সাবেক ছাত্রনেতাদের গড়া ‘আমরা ৯০ এর যোদ্ধা’ নামে সংগঠন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) সকাল ১১টার দিকে শহরের ডিবি রোডে গাইবান্ধা নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (গানাসাস) চত্বর থেকে সকল রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহনে একটি বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়।
শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পৌর শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সাবেক ছাত্রনেতৃবৃন্দ।
পরে শহীদ মিনার চত্বরে ‘আমরা ৯০ এর যোদ্ধা’র আহ্বায়ক ও ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজের সভাপতিত্বে এবং ‘আমরা ৯০ এর যোদ্ধা’র সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা মোহাম্মদ আমিনের সঞ্চালনায় স্মৃতিচারণ ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় বক্তারা তৎকালীন তিনজোটের রূপরেখা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্বৈরাচার পতনের পর তিনদশক পেরিয়ে গেলেও সেদিন সর্বদলীয়ভাবে গ্রহণ করা তিনজোটের রূপরেখা বাস্তবায়ন না হওয়া খুবই দুঃখজনক। তারা দীর্ঘদিন পর এ ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করায় ‘আমরা ৯০এর যোদ্ধা’কে অভিনন্দন জানান।
স্মৃতিচারণ ও আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, সাবেক ছাত্রনেতা ও জেলা বারের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সিরাজুল ইসলাম বাবু, ‘আমরা ৯০ এর যোদ্ধা’র সদস্য সচিব বাপী দাস, নব্বইয়ের ছাত্রনেতা প্রবীর চক্রবর্তী, কাজী ইব্রাহিম খলিল উলফাত, তানজিমুল ইসলাম পিটার, আলাল আহম্মেদ, মোশারফ হোসেন বাবু, মো. খালেদ হোসেন, নাদিম আহম্মেদ, আবু বক্কর কাজল, আলতাফুজ্জামান খান লোহানী তুহিন,রণজিৎ বর্মন, ডিউক, লাবু, অরুন, টিটু প্রমুখ।
এছাড়াও কর্মসূচির সাথে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন, সিপিবি জেলা সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল, গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবীর তনু।
উল্লেখ্য, গণ-আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন তৎকালীন স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার এই পদত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে দীর্ঘ ৯ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। সেই থেকে প্রতি বছর দেশে এ দিনটি ‘স্বৈরাচার পতন দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।
৬ ডিসেম্বর তিনি অস্থায়ী সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। মুক্তি পায় গণতন্ত্র। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সামরিক আইন জারির মাধ্যমে দেশের ক্ষমতা দখল করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান এইচ এম এরশাদ। এরপর টানা ৯ বছর তিনি একনায়কতন্ত্রের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করেন।
এরপরেই রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ১৯৯০ সালে জোরদার হয়। পরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন দুই জোটসহ বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর টানা আন্দোলনের মুখে এইচএম এরশাদ ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান স্বৈরশাসক ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।