নাটোর মহাশ্মশানে হত্যাকান্ডের শিকার তরুণ দাস
নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরে মহাশ্মশান কমিটির সভাপতি সুবল চন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক সত্য নারায়ন রায় টিপু বলেছেন মহাশ্মশানে গত শনিবারে নিহত তরুণ দাস মানসিক ভারসাম্যহীন, তিনি ভবঘুরে জীবন যাপন করতেন। নাটোর পৌরসভার অর্থায়নে শ্মশানে চারজন কর্মচারী নিয়োজিত থাকলেও তরুণ দাস শ্মশানে কর্মরত কেউ ছিলেন না।
হত্যাকান্ডের পর তাকে ঘিরে কিছু গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণকে শ্মশানের পাহারাদার, আবার কেউ কেউ সেবায়েত, আবার পুরোহিত হিসেবে উল্লেখ করে সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দিচ্ছেন। এটি দুঃখজনক। দেশে তারা দাঙ্গা ফ্যাসাদ তৈরী করার অপচেষ্টা করছে।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, শনিবার রাতে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা মহাশ্মশানে ঢুকে ভবঘুরে তরুণ দাসকে হাত-পা বেঁধে হত্যা করে ভান্ডার কক্ষ থেকে কাঁসার পাতিল, গামলাসহ কাঁসা এবং পিতলের কিছু মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবার সকালে নাটোরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানে তরুণ কুমার দাস (৫৮) নামে মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে ব্যক্তির হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত তরুণ কুমার দাস শহরের আলাইপুর ধোপাপাড়া এলাকার কালীপদ দাসের ছেলে। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তরুণ দাসকে অনেক বার শ্মশানে রাত্রিযাপন না করার জন্য অনুরোধ জানায় পরিবারের লোকজন, কিন্তু তিনি শোনেননি, তিনি নিজের মত করে জীবন যাপন করতেন। নিহতের ভাই প্রদীপ দাস জানান, তরুণ মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলো। তার ছেলে তপু কুমার দাস বলেন, বাড়িতে বাবা আসতেন, অনেকদিন দুপুরের খাবার খেতেন, তার প্রিয় নাতনি ছোট্ট তিন্নির সাথে খেলতেন, চলে যেতেন। ঠান্ডা শীতের রাতে শ্মশানের বারান্দায় রাত কাটানোর ব্যাপারে বাবা বলতেন, তার শীত লাগে না। তিনি ছিলেন সংসার ত্যাগী। নাটোর পৌরসভার প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণ দা’কে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আবোল তাবোল বক্তৃতা দিতে দেখেছি এবং মাঝে মধ্যেই কুকুরের সাথে খাবার ভাগাভাগি করে খাওয়ার ঘটনাও আমরা দেখেছি। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নাটোর জেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট খগেন্দ্র নাথ রায় বলেছেন, বিভিন্ন ব্যক্তি, মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিহত তরুণের পরিচয়কে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, কাশিমপুর মহাশ্মশানটি এতটা নির্জন এলাকায় নাইটগার্ড থাকলেও চুরি বা ডাকাতির উদ্দেশ্যে কেউ আসলে তার ভাগ্যেও তরুণের মত ঘটনাই ঘটতো।
রবিবার বিকেলে নাটোর সদর থানার ওসি মো. মাহাবুর রহমান জানান, হত্যাকান্ডের বিষয়টি তদন্তের জন্য রাজশাহী থেকে সিআইডি এবং ক্রাইমসিন ইউনিট এসেছে। জেলা পুলিশও কাজ করছে।
নাটোরের পুলিশ সুপার মোঃ মারুফাত হুসাইন বলেছেন, পুলিশ মহাশ্মশানে হত্যাকান্ডের শিকার মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে তরুণ কুমার দাসের হত্যা রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে । আসামীদের চিহ্নিত করে খুব দ্রæত আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি ।