ডার্ক মোড
Wednesday, 22 January 2025
ePaper   
Logo
সাবেক এমপি কালামসহ চারজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

সাবেক এমপি কালামসহ চারজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

রাজশাহী ব্যুরো

রাজশাহীর তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র থাকাকালে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদসহ (৪৫) চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ৩৩ লাখ টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুদকের জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন মামলাটি দায়ের করেন।

অন্য আসামিরা হলেন- পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল কাদের (৫৬), উপসহকারী প্রকৌশলী জাহিদুল হক (৪১) এবং ঠিকাদার খালেদ মোহাম্মদ সেলিম (৫৮)।

দুদক জানায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলার জন্য তাহেরপুর পৌর এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নদীর তীর সংরক্ষণ ও শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না করে কাজ বাস্তবায়ন দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের ৩৩ লাখ ৬৫ হাজার ৬৬১ টাকা আত্মসাৎ করেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, উক্ত কাজের দরপত্র আহ্বানের পর পাঁচটি দরপত্র বিক্রয় হয়। যার মধ্যে চারটি দরপত্র জমা পড়ে। তার প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ৭ জুলাই TEC কমিটির সভায় দরপত্র যাচাই-বাছাই করে জমাকৃত চারটির মধ্যে তিনটি গ্রহণযোগ্য হয়। সর্বনিম্ন দর দাখিলকারী প্রতিষ্ঠান খালেদ মোহাম্মদ সেলিম, ১০৯, নিউমার্কেট রাজশাহীর দর ৪,৯৮,১৪,২৮৪.৭৪ টাকা। সর্বনিম্ন দর দাখিলকারীকে TEC কমিটি NOA প্রদানের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে সুপারিশ করে।

তবে দুদক অনুসন্ধানকালে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঠিকাদার খালেদ মোহাম্মদ সেলিম উক্ত প্রকল্পের সম্পূর্ণ কাজ না করেই ৪,৯৮,২৫০২৫ টাকার বিল দাখিল করেন। তাহেরপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল কাদের এবং উপসহকারী প্রকৌশলী জাহিদুল হক কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে পরিমাপ বইতে স্বাক্ষর করেন। অতঃপর ঠিকাদার মেয়র, তাহেরপুর পৌরসভা বরাবর বিল দাখিল করলে দাখিলকৃত বিল হতে ভ্যাট ও আয়কর কর্তন করে মোট ৪ কোটি ৩৮ লাখ ৪৬ হাজার ২২ টাকা পরিশোধ করা হয়।

অভিযোগ সংশ্লিষ্ট পৌরসভার সাবেক মেয়র আবুল কালাম আজাদ উক্ত প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী কর্তৃক দাখিলকৃত মাপ বই ও প্রকল্পের দৈর্ঘ্য সরেজমিনে পরীক্ষা না করে ব্যক্তিস্বার্থে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিল ও চেকে স্বাক্ষর এবং Certificate of completion প্রদান করেন।

অনুসন্ধানকালে প্রকল্পটি নিরপেক্ষ প্রকৌশলীদের দ্বারা পরিমাপ গ্রহণ করা হয়। পরিমাপকালে উক্ত প্রকল্পের কাজের দৈর্ঘ্য ৪১৫ মিটারের মধ্যে ৪০৫ মিটার পাওয়া যায়। অর্থাৎ প্রকল্পটির ১০ মিটার কাজ ঘাটতি পাওয়া যায়। প্রকল্পের বাস্তবায়িত কাজের মূল্য ৪ কোটি ৪ লাখ ৮০ হাজার ৩৬১ টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু ঠিকাদারকে বিল প্রদান করা হয়েছে ৪ কোটি ৩৮ লাখ ৪৬ হাজার ২২ টাকা। অর্থাৎ বর্ণিত প্রকল্পের কাজে মোট ৩৩ লাখ ৬৫ হাজার ৬৬১ টাকা ঘাটতি পাওয়া যায়। উক্ত প্রকল্পের কাজ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না করে ৩৩ লাখ ৬৫ হাজার ৬৬১ টাকা পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাৎ করেছেন।

আসামি আবুল কালাম আজাদ, খালেদ মোহাম্মদ সেলিম, আব্দুল কাদের ও জাহিদুল হক পরস্পর যোগসাজশে অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলার জন্য তাহেরপুর পৌর এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নদীর তীর সংরক্ষণ ও শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না করে কাজ বাস্তবায়ন দেখিয়ে উক্ত প্রকল্পের ৩৩ লাখ ৬৫ হাজার ৬৬১ টাকা আত্মসাৎ করার অপরাধে উল্লিখিত আসামিরা বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় একটি মামলা (এজাহার) হয়েছে।

এ বিষয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বলেন, চারজনকে আসমি করে একটি মামলা করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আবুল কালাম আজাদ রাজশাহী-৪ আসন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি তাহেরপুর পৌরসভার তিনবারের মেয়র ছিলেন। এমপি হওয়ার পর আবুল কালাম আজাদ উপনির্বাচনে তার স্ত্রী খন্দকার সায়লা পারভিনকে মেয়র বানান।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন