ডার্ক মোড
Thursday, 23 January 2025
ePaper   
Logo
মুন্সীগঞ্জে মেধাবী ছেলে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় চা দোকানীর ঘরে এখন খুশির জোয়ার

মুন্সীগঞ্জে মেধাবী ছেলে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় চা দোকানীর ঘরে এখন খুশির জোয়ার

মো. মাসুদ খান,মুন্সীগঞ্জ

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের চা দোকানীর ছেলে মো. রিফাত বেপারী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়ে অনন্দে আত্মহারা। তার পরিবারের মধ্যে এখন খুশির জোয়ার বইছে। অভাবের মধ্যে পড়ালেখা করে এমন সুযোগ রিফাতের ঘরে আলোর ঝলক তৈরী করেছে। রিফাত মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবার সুযোগ পেয়েছে। সে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়নের মজিদপর এলাকার চা দোকানদার মো. ইউনুস বেপারীর ছেলে। মো. ইউনুস বেপারী কেয়াইন কাউয়ামারা বাজারের চা বিক্রেতা। অদম্য মেধাবী রিফাতও বাবার সাথে দোকানে চা বিক্রি করেছেন। পড়া-লেখার ফাকে ফাকে তিনি বাবাে এ চা বিক্রিতে সহযোগিতা করতেন। তারা বসবাস করছেন ভাঙ্গা একটি টিনের ঘরে।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক অনন্ত চক্রবর্তী বলেন, রিফাত বেপারী অদ্যম মেধাবী। মেডিকেলে ভর্তির জন্য অনেক পরিশ্রম করেছে। নানা প্রতিক‚লতার মধ্যেও সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। তার বাবা একজন চা ও ভাজাুড়ি দোকানদার। আরেক শিক্ষক অধির রঞ্জন মন্ডল বলেন, ইচ্ছা থাকলে যে নিজেকে কোথায় প্রতিষ্ঠিত করা যায় তার জলন্ত প্রমাণ রিফাত। এলাকায় তারা খবই সাদাসিধে জীবন যাপন করেন। রিফাত পরিবারে ছোট ছেলে। তার আরও এক ভাই রয়েছে। তাদের পরিবারে খুব অস্বচ্ছলতা বিরাজ করছে।

শুলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি নিখিল চক্রবর্তী বলেন, রিফাত উপজেলার শুলপর উচ্ছ বিদ্যালয় থেকে থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। অভাবের কারণে রিফাত স্কুলেও কখনো প্রাইভেট পরতে পারেনি। রিফাত এখন পুরো এলাকার গর্ব। দরিদ্র ঘরের সন্তান রিফাত মেডিকেলে সুযোগ পাওয়ার খবরে পুরো এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। রিফাত ভবিষ্যতে কার্ডিওলজি নিয়ে পড়তে চান। অসহায় ও দুস্থ্য মানুষের জন্য কিছু করতে চান।

রিফাত বেপারী বলেন, ছোট সময় থেকে পড়া অবস্থায় সহপাঠীদের সঙ্গে খেলাধুলা কম করে পড়াশোনায় মনোযোগ ছিল আমার। পড়াশোনার পাশাপাশি বাবাকে সহযোগিতা করতাম, দোকানে বাবার সঙ্গে কাজ করতাম। এতে আমার খারাপ লাগত না, ভালো লাগত।

রিফাত আরোও জানান, শুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণিতে টেলেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছি। অভাবের কারণে নিজ গ্রামের শুলপুর উচ্চ বিদ্যালয়েই পড়াশোনা করেন রিফাত। ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেন। এরপর সরকারি বিজ্ঞান কলেজে থেকে ২০২৪ সালে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পান। অর্থের অভাবে অন্য সহপাঠীদের মতো কোচিং করতে পারেননি। তবে পড়াশোনা করেছেন, সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। তার লক্ষ্য ছিল মেডিকেলে ভর্তি।

রিফাতের বাবা ইউনুস বেপারী বলেন, ছোট টিনের ঘর ও ভিটা ছাড়া কিছুই নেই তার। অভাবের সংসার। জীবনে কোনো দিন কোনো কিছুর জন্য বায়না করেনি আমার রিফাত। ছোটবেলা থেকেই ছেলেটা খুবই ভালো, পড়তে বলা লাগেনি। চায়ের দোকানে এসে কাজ করেছে আবার পড়াশোনাও করেছে। দোকানে বসে পড়েছে ও সমচা বানিয়েছে, বিক্রিও করেছে। রিফাত সরকারি মেডিকেল কলেজে ডাক্তারিতে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় তিনি ও তার পরিবারের ঁ সবাই গর্বিত। তিনি ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।

রিফাতের মা ঝর্ণা বেগম বলেন, আমার বড় ছেলেকে অভাবের কারণে পড়াতে পাড়ি নাই, ছোট ছেলে অভাবের মধ্যেই পড়ালেখা করেছে। ছেলে বড় ডাক্তার হউক। মানুষের সেবা দিক এটাই এখন আমার চাওয়া।

সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা আক্তার বলেন, রিফাত বেপারী হচ্ছে সাধারণ মেধাবী শিক্ষার্থীদের মডেল, আইকন ও অনুপ্রেরণা। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হিসেবে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পাওয়ায় রিফাতকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। এছাড়াও তার মেডিকেলে পড়তে সব সময় উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা থাকবে।

উল্লেখ্য রিফাত এবারের মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় ৩২৩তম স্থান অর্জন করেন।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন