মাইনরিটি রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ এর ১০ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তন, ২২/১ তোপখানা রোড, সেগুনবাগিচা, ঢাকায় মাইনরিটি রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের ১০ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে শনিবার (৩১ আগস্ট ২০২৪) সকাল ১০টায় এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় বাংলাদেশের জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সংখ্যালঘুদের অধিকার আন্দোলনের ৮ দফা পর্যালোচনা করে বক্তব্য প্রদান করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন কার্যফকরি সভাপতি অ্যাড. মিন্টু কুমার মন্ডল।
মাইনরিটি রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশের জাতিগত ও ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক অধিকার আদায়ে কর্মরত সংগঠনসমূহ যেমন আদিবাসী ও সমতলের সংগঠন, মতুয়া সংগঠন, দলিত ও হরিজন সংগঠন, রবিদাস সংগঠন, চা জনগোষ্ঠী সংগঠনসহ বিভিন্ন পিঁছিয়েপড়া সংগঠনসমূহের সমন্বয় প্লাটফরম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। দশম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন এবং দেশের বর্তমান বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নিজেদের করণীয় বিষয়ে আলোচনা রাখেন।
স্বাগত বক্তা স্বপন কুমার বেপারী বলেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের স্থায়ীভাবে নির্বিঘ্নে বসবাসের জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপ নেবার জন্য সরকারের নিকট দাবিঃ
★ সংখ্যালঘু সুরক্ষা নিশ্চিতে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন করতে হবে।
★ জাতিসংঘ প্রণীত সর্বজনীন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বাস্তব দৃশ্যমান ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
★ অতীত সহ সাম্প্রতিক হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, খুন ধর্ষণের বিচার বিভাগীয় / জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তদন্ত কমিশন গঠন করে দোষীদের শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
★ বাংলাদেশের সরকারি বেসরকারি সামরিক বেসামরিক চাকুরি সহ ব্যবসা বানিজ্যে ১০% সংরক্ষণ করতে হবে।
★ দলিত বঞ্চিত তপশিলি হরিজন পাহাড়ি ও সমতলের আদিবাসী চা শ্রমিক সহ সকল পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী সমান অবস্থানে না আসা পর্যন্ত বিশেষ সুযোগ সুবিধা দিতে হবে।
★ রাজনৈতিক ভাবে আমাদের নিরপেক্ষ ও স্বতন্ত্র অবস্থান গ্রহণে সার্বিক সহযোগিতা দিতে হবে।
তিনি বলেন বাংলাদেশ আমাদের নিজের দেশ। আমরা ভারতের দয়া চাই না। আমরা পাকিস্তানের খবরদারীও চাই না।
সম্প্রতি সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন বিষয়ে জনগণ ও রাষ্ট্রের সামনে সংখ্যালঘুদের অধিকার, নিরাপত্তা ও মর্যাদা বাস্তবায়নের জন্য নিম্নোক্ত ৮ দফা পেশ করার হয়। যার উপর সকলে মন্তব্য করেন।
সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন প্লা সমটফরম থেকে ৫ আগস্টের সরকারের পতনপরবর্তী দেশব্যাপী সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর ঘটে যাওয়া নিযাতন এর প্রতিবাদে দেশব্যাপী প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে ওঠে। এক পর্ায়ে সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন প্লাটফরম। ৮ দফা নিয়ে তারা বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁর নিকট পেশ করেন।
সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের পক্ষ থেকে আলোচনা সভায় ৮ দফা উপস্থাপন করেন অর্থী দে। ৮ দফাসমূহঃ
১। সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল গঠন করে দোষীদের দ্রতুতম সময়ে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথপোযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
২। অনতিবিলম্বে ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করতে হবে।
৩। ‘সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে।
৪। হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ধর্মীয় ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে।
৫। দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।
৬। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনা কক্ষ বরাদ্দ করতে হবে।
৭। সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড আধুনিকায়ন করতে হবে।
৮। শারদীয় দুর্গাপূজায় ৫ দিন ছুটি দিতে হবে।
এরপর অন্যান্য সমন্বয়ক সুকান্ত বর্মন, সুস্মিতা কর ও অন্তু রায় ৮ দফাকে সমর্থন করে ও এর যৌক্তিকতা তুলে ধরে মতামত ব্যক্ত করেনঃ
পথিক বাদল, প্রেসিডিয়াম মেম্বার, এমআরএফবি বলেন, ৮ দফা দাবি সকলের নিকট সমর্থনযোগ্য। বৈষম্য বিরোধী কমিশন বিষয়টিও আমাদের দাবীর সাথে সংযুক্ত করার আহ্বান জানান।
রণজিৎ দত্ত (সাধারণ সম্পাদক, বরিশাল জেলা, এমআরএফবি) বলেন, আমরা বরিশাল বিভাগে এই আন্দোলন বাস্তবায়নে সা্র্বকভাবে সহযোগিতা করবো।
অ্যাড. গৌরাঙ্গ বসু, সাংবাদিক ও শিক্ষক, মাদারীপুর বলেন, ৮ দফা আমি সমর্থন করি। ধর্মীয় স্বাধীনতা ও জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব বিষয়টি সংযোজন করতে হবে।
অতুল চন্দ্র মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক, অনুভব বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ বলেন, আমরা ছাত্রদের পাশে আছি থাকবো অভিভাবক হয়ে। যতদিন ও যত সময় দরকার আমরা এই আন্দোলনকে বাস্তবায়ন রূপদান করবো।
কৃষ্ণ লাল, সভাপতি, হরিজন ঐক্য পরিষদ বলেন, বর্তমান সরকারের পতনের পর দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘুরা অধিকার আন্দোলনে নেমেছে। আমরা সমর্থন করি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পরেশন এর মিরনজিল্লা পল্লীতে হরিজন জনগোষ্ঠী সদ্য সাবেক মেয়র এর এক নির্দেশ এ এক নিদারুণ নিজ ভূমি েথেকে উৎখাতের শিকার হয়। আমাদের অধিকার বিষয়ে সকলে সচেতন থাকবো।
নিরদ বরণ মজুমদার, আহ্ববায়ক, ১০ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন পরিষদ, বলেন, আমাদের সন্তানতুল্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্টুডেন্টস ধন্যবাদ জানাই স্বল্প সময়ে একটি ভালো আন্দোলন পরিবেশ তৈরি করা ও ৮ দফা তুলে ধরার জন্য। আমরা এই ৮ দফা সমর্থন করি ও সেই সাথে সকলের মতামত মোতাবেক আরো কিছু বিষয় সংযোজন হয়তো করা লাগতে পারে। তবে দেশব্যাপী তীব্য আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে দাবী বাস্তবায়নে কাজ করে যাবো।
ভীমপল্লী ডেভিড রাজু (সদস্য সচিব, সাউথ এসিয়ান দলিত ফোরাম) বলেন, আমাদের সংগঠন এই ৮ দফার সাথে আছি। এটি বাস্তবায়ন চাই।
নৃপেন্দ্রনাথ হীরা (সাধারণ সম্পাদক, হরিচাঁদ মন্দির, রমনা ঢাকা) বলেন, মতুয়া সমাজ এই আন্দোলনের সাথে আছে। একযোগে আমরা কাজ করবো।
সুনন্দা সমদ্দার (প্রেসিডিয়াম মেম্বার , হিবৌখ্রিঐপ, পিরোজপুর জেলা) বলেন, আমরা সকল সংখ্যালঘু মানুষ আন্দোলন ও দাবীকে বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।
চান মোহন রবিদাস, সভাপতি, বাংলাদেশ রবিদাস ফোরাম বলেন, আমরা অনেক সময় নিজেদের দ্বারাও নির্যারতিত হয়ে থাকি। আমরা অবিলম্বে আমাদের অধিকার রক্ষায় রাজপথে একযোগে থাকবো।
অ্যাড. পবিত্র মিস্ত্রী, সদস্য সচিব, ১০ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন পরিষদ বলেন, বিগত কোন সরকার আমাদের সংখ্যালঘুদের কোন যৌক্তিক দাবি পূরণ করেনি। তাই আমরা না দেখে পর্যেন্ত বিশ্বাস করতে পারছি না যে কোন সরকার, কে আমাদের দাবি সমর্থন বা পূরণ করবে। তবে সকলে মিলে দাবী আদায়ে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হবে।
বলরাম পন্ডিত, সভাপতি, বাংলাদেশ ভূমিবল সমাজ পারটি বলেন, জাতীয় নির্বাচন ব্যবস্থায় আমাদের জন্য রিজারভেশন দরকার সংখ্যানুপাতে।
প্রশান্ত কুমার হালদার, সভাপতি, বাংলাদেশ মতুয়া মহাসংঘ বলেন, অধিকার ভিক্ষায় মেলে না, অধিকার আদায় করতে হয়। ৮ দফার সাথে একমত আমরা । পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা দরকার আমাদের জন্য।
৮ দফাকে সমর্থন করে মতামত প্রদান করে বক্তব্য রাখেন, পার্থ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র; উজ্জল বিশ্বাস, শিক্ষক, সাধারণ সম্পাদক, বীরেন্দ্র সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, গোপালগঞ্জ; হৃদয় হেলা, সাধারণ সম্পাদক, হরিজন ছাত্র ঐক্য পরিষদ, অ্যাড. শতাব্দী বোস; নয়ন কুমার, সাংগঠনিক সম্পাদক, শ্রী হরিচাঁদ শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদ, ঢা. বি; নিলয় কুমার বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; কৈলাস রবিদাস, বাংলাদেশ রবিদাস পরিষদ; মিঠুন ভট্টাচার্য, সাধারণ ছাত্র;, প্রদীপ বিশ্বাস, মাদারীপুর।
মাইনরিটি রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ আগামীতে সকল জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সংগঠনের সমন্বয়ে ঢাকায় একটি ‘জাতীয় মাইনরিটি কনভেনশন’ ও ‘জাত-পাত বিলোপ কনভেনশন’ আয়োজন করবে যেখানে আমাদের ভবিষ্যত করণীয় বিষয়ে গুরুত্বপূর্ন কর্মসূচি আসবে।