বেতাগীতে অনিশ্চয়তায় ১৫ আগস্ট পালন
বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি
ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার এমনিতেই বরগুনার বেতাগীতে ভয়ে ও আতঙ্কে আত্মগোপনে রয়েছে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা, জনপ্রতিনিধি ও কর্মিরা।
সোমবার (১২ আগস্ট) শেখ হাসিনার সঙ্গে ফোনে কথা বলায় আলোচিত বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর কবিরকে বুধবার (১৪ আগস্ট) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সকাল থেকে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে নতুনভাবে আরও একধরনের ভয় ও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সেখানে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের উপস্থিত আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ও জনপ্রতিনিধিরাও তাঁরা এখন পুলিশের হাতে আটকের ভয়ে রয়েছেন। তাছাড়া ১৫ আগষ্ট সামনে রেখেও কোন কর্মসূচি ও নেতাকর্মীদের মাঝে সাড়া পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। ফলে এ দিবস পালন নিয়েও নেতা-কর্মিরা অনিশ্চয়তায় রয়েছে।
জানা গেছে, কোন কর্মসূচি পালনতো দুরের কথা হঠাৎ করে তৈরি হওয়া এমন পরিস্থিতিতে আরও চরম অসহায় হয়ে পড়েছেন দলের সর্বস্তরের কর্মীরা। এতে নেতাদের পাশাপাশি তাঁদের কাছের অনুসারীরাও মোবাইল বন্ধ রেখেছেন। আতঙ্কে গা ঢাকা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও সদ্য পতন হওয়া সরকারের জনপ্রতিনিধিরাও।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে আসা পুলিশের একটি দল জাহাঙ্গীর কবিরকে গ্রেপ্তার করে। ধারণা করা হচ্ছে, শেখ হাসিনার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলার পর বিশৃঙ্খলা এবং প্রতিবিপ্লবের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে, সোমবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ৩ মিনিটের ফোনালাপে শেখ হাসিনা জাহাঙ্গীর কবিরকে বলেন, আপনারা শৃঙ্খলা মেনে দলীয় কার্যক্রম চালাবেন। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস যথাযথভাবে পালন করবেন।
সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ও জনপ্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা এখন পুলিশের হাতে আটকের ভয়ে আছেন। আরও আগে গত ১০ আগস্ট বরগুনা শহরে জাহাঙ্গীর কবিরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্বাস হোসেন বলেন, ‘ফোনালাপের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের ধারণা, এ কারণেই পুলিশ তাঁকে আটক করেছে।’
এ ফোনালাপের সময় মো. জাহাঙ্গীর কবির শেখ হাসিনাকে বলেন, আপা আপনি (ঘাবড়াবেন না) অর্থাৎ মনোবল হারাবেন না। আপনি ঘাবড়ালে আমরা দুর্বল হয়ে যাই। আমরা শক্ত আছি। শেখ হাসিনা বলেন, আমি ঘাবড়াবো কেন, আমি ভয় পাইনি। আপনারা দেখছেন, আমাদের পুলিশ বাহিনীকে মেরে কিভাবে ঝুলিয়ে রেখেছে। আমাদের কর্মীদের মেরেছে, বোরকা পরে মেরেছে। এ দেশটা রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে। আপনারা যেভাবে আছেন থাকেন।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের দলের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর কবির পুলিশের হাতে আটকের হঠাৎ তৈরি হওয়া এ পরিস্থিতিকে দলের জন্য আরও বড় দুর্যোগ বলে দাবি করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। দলের মধ্যম সারির এক নেতা বলেন, ‘গত ১২ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফোনে নেতাদের বড় গলার কথা শুনে আমাদের মধ্যে বিশ্বাস ছিল, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা ঘুরে দাঁড়াতে এবং আগামীতে যেকোনো মূল্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিতে পারব। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বিপরীত অবস্থা দেখে আমরা চরম হতাশ ও এ ফোনালাপে দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছি। তবুও এখন জবাব দেওয়ার সময় নয়।
বেতাগী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র হাদীসুর রহমান পান্না বলেন, দেখা যাক কী হয়। পর্যবেক্ষন ও সামনের দিকে তাকিয়ে আছি। ১৫ আগষ্ট পালনের বিষয়ে এখনো কেন্দ্রীয় কোন নিদের্শনা পাইনি।
তাছাড়া গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বেতাগী পৌর শহরে অবস্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় বন্ধ ও অপ্রস্তুুত দেখা গেছে। শেখ হাসিনার ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগের খবর প্রচারের সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষোভের আগুনে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাংচুর করা হয়। তবে ভেতরের ভাংচুরকৃত আসবাবপত্র এখনো আপসারণ করা হয়নি।
নাম না প্রকাশের শর্তে এ বিষয়ে দলের একাধিক নেতারা বলেন, যতটা না ভাংচুর হয়েছে তার চেয়ে এখন হামলার ভয়ে এবং নতুন করে সৃষ্টি হওয়া ঘটনায় আতঙ্ক এড়ানোর জন্যই কার্যালয়ে কেউ আসতে চাইছেন না।