পুলিশ হোক জনগনের প্রকৃত বন্ধু
মো.দুলাল হোসেন রাজু
দলীয়করণমুক্ত পুলিশই জনগনের প্রকৃত বন্ধু। সন্ত্রাসী,দুর্নীতিবাজ ও মাদক ব্যাবসায়ীদের আতংকের অপর নাম পুলিশ।তাহলে পুলিশ জনগনের কেমন বন্ধু? এ নিয়ে সাধারণ লোকজনের মধ্যে রয়েছে নানা জল্পনা কল্পনা।বাস্তব অর্থে পুলিশ জনগনের বন্ধু এটাও সত্য। মানুষের জল্পনা-কল্পনা কি একেবারেই উড়িয়ে দেওয়ার মতো? দলীয়করণ মুক্ত নিরপেক্ষ পুলিশই জনগনের প্রকৃত বন্ধু! যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।
নিজের জীবন বাজী রেখে রাত জেগে জনসাধারণ, এমপি-মন্ত্রী,সরকারী কর্মকর্তা ও আমলাদের বাড়ী পাহারা দেয়,জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষা করে তাদেরকে বলা হয় পুলিশ। আমার প্রশ্ন পুলিশ যদি জনগনের বন্ধুই হয় তাহলে পুলিশকে মানুষ এত ভয় পায় কেন? প্রবাদে আছে চোর পুলিশের গল্প ! ‘পুলিশ দেখলে চোর পালায়’ আর চোর পালালে নাকি বুদ্ধি বাড়ে। অথাৎ দুর্নীতিবাজ লোকগুলো পুলিশকে ভয় পায়। পুলিশকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করে। আমি মনে করি, মাদক ব্যাবসায়ী ,দুর্নীতিবাজ,সন্ত্রাসী এরা দেশের শুত্রু ওরা সামাজের শুত্রু। সামাজের শুত্রæ নির্মূলে পুলিশের ভুমিকা কোন অংশেও কম নয়।আমি মনে করি পুলিশ ছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনা করা মুঠেও সম্ভব নয়।তবে বাস্তব অর্থে দলীয়করণমুক্ত পুলিশই হবে জনগনের প্রকৃত বন্ধু!পুলিশ বাহিনীর ভিতরে-বাইরে কিছু অসৎ দুর্নীতিগ্রস্থ প্রকৃতির লোকের কারণে গুটা বাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্য বাস্ততা কি তাই?
হাতে গুনা দু’এক জন অসৎ পুলিশ কর্মকর্তাদের কারণে গুটা পুলিশ বাহিনী যে অসৎ তা নয়। ভাল মন্দ সব মিলে বিচার বিশ্লেষণ করাটা সকল নাগরিকের দায়িত্ব। ভালোকে ভালো বলা আর খারাপকে খারাপ বলা প্রত্যেক নাগরিকের নৈতিক অধিকার। সুতরাং কারও সর্ম্পকে ভালোভাবে না জেনে মন্তব্য করা আর বোকার স্বর্গে বাস করা সমান। প্রতারক চক্রের টার্গেট থাকে প্রতারণার দিকে আর পুলিশের টার্গেট থাকে প্রতারকচক্র ও সন্ত্রাসীদের দিকে।
তাহলে তো পুলিশকে ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক।সুতরাং দুনীতিবাজ,প্রতারকচক্র ও সন্ত্রাসীদের আতংকের নামই পুলিশ। বিগত সময়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর প্রতি মানুষের আশা-ভরসা বিশ^াস ছিলনা বলেই চলে, উধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দলীয়করণের মাধ্যমে ওই সময় পুলিশ কোন একটি রাজনৈতিক দলের কিংবা কোন একটি গোষ্টির এজন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করেছে। বিনিময়ে প্রমোশনসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছে।দেশের পেক্ষাপট পরিবর্তনের পর পুলিশের পরিনতি এদেশের সাধারণ মানুষ কখনও আশা করেনি।জনগনের বন্ধু,জনতার পুলিশ কিংবা মানবিক পুলিশ কখনও বিশেষ কোন দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করতে পারেনা।
দলীয়করণমুক্ত পুলিশই হবে জনগনের প্রকৃত বন্ধু।বলছিলাম সদ্য যোগদান করা একজন সৎ ও আর্দশবান পুলিশ অফিসার(ওসি) সরকার মোহাম্মদ.তোফায়েল আহমদ গত ৫ আগষ্টের পর সিলেটের গোয়াইনঘাট থানায় যোগদান করেন। আমি একদিন হঠাৎ করে গুরুত্বপূর্ন একটি সংবাদের তথ্য সংক্রান্ত বিষয়ে ওসি’র সাথে দেখা করতে যাই।অন্য কাজের সুবাদে তিনি বাহিরে ছিলেন,আমিও ডিউটি অফিসারের রুমে বসে অপেক্ষায় ছিলাম, প্রায় ঘন্টা খানেক পর ওসি তোফায়েল আহমদ গাড়ী থেকে নামলেন। ক্লান্ত আর বিষন্নতায় ভরা ছিল ওনার মূখ।
এই অবস্থায় কথা বলার পরিস্থিতি ছিলনা।কিছুক্ষণ পরে এক পুলিশ সদস্য ডিউটি অফিসারের রুমে ঢোকে আমাকে বলেন ,রাজু ভাইয়া ওসি স্যার আপনাকে ডাকছেন। ওই সময় আমি অনেকটাই অস্বস্তি অনুভব করলাম। রুমে ঢোকার আগেই বললাম আমি আসবো? ওসি সাহেব উত্তরে বললেন জি¦ হ্যা,আসেন!আমি অপলক দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকালাম,হাসিভরা মূখে আমাকে জিঞ্জেস করলেন কেমন আছেন? আমি উত্তরে বললাম ভালো আপনী? দীর্ঘ সময় কথা হলো বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দলন সহ নানাবিদ বিষয় নিয়ে।
যতক্ষণ আলাপচারিতায় ছিলাম মনে হলো ওসি সরকার তোফায়েল আহমদ সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কথা বলতে অনেকটাই আগ্রহী। তিনি গোয়াইনঘাট থানায় যোগদানের পর গোয়াইনঘাট উপজেলায় দালালমুক্ত করে মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে মাদক বিরোধী অভিযানসহ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।ওসি সরকার মোহাম্মদ.তোফায়েল আহমদ একজন সৎ আর্দশবান পুলিশই নয়,দলীয়করণমুক্ত জনগনের বন্ধু।সত্য ও ন্যায়ের পথ ধরে দলীয়করণমুক্ত সকল পুলিশই যেন হয় জনগনের প্রকৃত বন্ধু।
লেখক, সাধারণ সম্পাদক, বৃহত্তর জৈন্তা ইলেকট্রনিক মিডিয়া সাংবাদিক ইউনিয়ন।