ডার্ক মোড
Friday, 03 January 2025
ePaper   
Logo
শিক্ষা ও গবেষণায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের গুরুত্ব

শিক্ষা ও গবেষণায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের গুরুত্ব

মোঃ জাহিদুল ইসলাম

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের চারপাশেই প্রযুক্তি ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া সমাজে চলাফেরা করা অনেকটা দুর্বিষহ বলা যায়। দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। এখন প্রতিটা মানুষই ইন্টারনেটের উপরে নির্ভরশীল। ইন্টারনেট ছাড়া কোন দিন মানুষের চলে না। বর্তমানে আমরা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ছাড়া এক মুহূর্তও চিন্তা করতে পারি না। শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ভূমিকা ও গুরুত্ব অনেক। শিক্ষায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। একটি সময় ছিল যখন যেকোন শিক্ষার্থীর কোনো বিষয় জানার প্রয়োজন হলে তখন ব্যক্তি বা বইয়ের ওপর পুরোপুরি ভাবে নির্ভর করতে হতো।

এজন্য অনেক ক্ষেত্রে জানার বিষয়গুলো হয়তো আজীবনই অমিমাংশিতই থেকে যেতো। যদি কোন বিষয়ে জানা যেতো তাও ছিল অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তির আশীর্বাদের ফলে সকল অনিশ্চয়তা কাটিয়ে কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের জ্ঞানভান্ডার শিক্ষার্থীদের শিক্ষাক্রমে নিয়ে এসেছে সহজলভ্যতা। সেই সাথে তৈরি করেছে অপার সম্ভাবনা। প্রযুক্তি ভিত্তিক পড়াশোনা মূলত সামাজিক জীবনে শিক্ষার্থীদেরকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে রাখে। শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার মূলত শিক্ষা কার্যক্রমকেও আরোও আকর্ষণীয় ও কার্যকর করার এক অভূতপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তি বিদ্যার অন্যতম ভূমিকা হল এর ফলে শিক্ষার্থীরা খুব সহজে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারে। বর্তমান দিনের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত শিক্ষা ব্যবস্থা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আধুনিক এই বিশ্বে প্রযুক্তি বিদ্যায় শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একজন দক্ষ প্রযুক্তিবিদে পরিণত হতে পারে যার ফলে সামাজিক মর্যাদাও পেয়ে থাকে।

শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তিকে ব্যবহারের ফলে মূলত ব্যক্তি জীবন ও সমাজ জীবনে গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রযুক্তিবিদ্যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনে স্বনির্ভর ও আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এই আত্ম সক্রিয়তার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে আত্মনির্ভরশীল করে তার বলিষ্ঠ জীবন আদর্শ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিবিদ্যার যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। সুতরাং একথা অনস্বীকার্য যে শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তি বিদ্যার ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে সমাজে সুস্থ ও সুন্দর ভাবে বাঁচতে হলে প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যথেষ্ট প্রয়োজন। যে কোন বিষয়ে একঘেয়ে পাঠদান শিক্ষার্থীদের কাছেও অতৃপ্তিকর হয়ে ওঠে। সভ্যতা আজ অনেক এগিয়েছে।

এটি সম্ভব হয়েছে মানুষের নতুন নতুন কিছু বের করা বা গবেষণা করার ক্ষমতার মাধ্যমে। বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত গবেষণা করে তার সামনে থাকা সব সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেছে। এভাবেই তারা ধীরে ধীরে তাদের গবেষণার সফলতার মাধ্যমে গৌরভ উজ্জ্বল সভ্যতা গড়ে তুলেছেন। এই গবেষণার জগতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া সেই গবেষণার কথা চিন্তাই করা যায় না। গবেষণা করতে হলেই নানা ধরনের তথ্য উপাত্ত নিয়ে কাজ করতে হয়। গবেষণার জন্য প্রথমেই তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে হয়।

পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত সমূহকে প্রক্রিয়া করতে হয়। এরপর সেগুলোকে বিশ্লেষণ করার পরে গবেষণা শেষে তথ্যকে সুন্দর করে প্রদর্শন করতে হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি দিন দিন শিক্ষা বিষয়ক গবেষণাকে সহজ করে তুলছে এবং এর মান বাড়িয়ে তুলছে। এসব ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আধুনিক সব ধরনের গবেষণায় তথ্যপ্রযুক্তির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা এবং গবেষণার প্রতিটি ধাপেই তথ্য প্রযুক্তি ব্যবাহর করা হচ্ছে। যে কোন ইস্যু বা সমস্যা সম্পর্কে বিদ্যমান জ্ঞান বা গবেষণা ফল জানার জন্য তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা অত্যন্ত অত্যাবশ্যকীয়। গবেষণা করতে হলেই নানা ধরনের তথ্য নিয়ে কাজ করতে হয়। গবেষণার কাজটুকু ঠিকভাবে অগ্রসর হচ্ছে কি না সেটা দেখার জন্য গবেষকদের তথ্যের সাথে মিলিয়ে দেখতে হয়।

এরপর বিশাল ডেটাবেস বা তথ্য ভান্ডারের সাথে যোগাযোগ রেখে তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে হয়। গবেষণায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনেক সহজেই গবেষণার ফলাফল লাভ করা যায়। কারণ পূর্বে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করে যে তথ্য উপাত্ত পাওয়া যেত সেগুলো সংরক্ষণ ও খুঁজে বের করা খুব কঠিন এবং কষ্টসাধ্য ছিল। কিন্তু বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে এখন সেগুলো অত্যন্ত সহজ হয়ে গিয়েছে। প্রযুক্তির সহায়তায় গবেষণার দ্বারা যে কোন পরীক্ষালব্ধ তথ্য-উপাত্ত শুদ্ধভাবে সংরক্ষণ করা যায় ও সহজে খুঁজে বের করা যায়। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে সেগুলোর মাধ্যমে অত্যন্ত সহজ পদ্ধতিতে এবং দ্রুত গতিতে গবেষণা করা সম্ভব।

তরুণদের দক্ষতা বাড়াতে এখন যা প্রয়োজন তা হলো প্রযুক্তির ব্যবহারে তাঁদের সক্ষম করে গড়ে তোলা। এরপর সেই প্রযুক্তি আয়ত্তে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই যুগে কেবল শিল্পের উপরেই নয় মানবজীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই বেড়েছে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা। বিশেষ করে কৃষি, অনলাইন ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিক্ষাক্ষেত্রেও এর ব্যবহার সারা বিশ্বেই বেড়েছে। এদিকে করোনাকালে অনলাইনে পাঠক্রম চালু করা হলেও তার সুবিধা পেয়েছিল মুষ্টিমেয় শিক্ষার্থী। তবে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরাই এ সুবিধার বাইরে ছিল।

এদিকে বর্তমানেও শিক্ষা এবং গবেষণার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারে সবাই সমান সুযোগ-সুবিধা পায় না। তাই শিক্ষা এবং গবেষণা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারে বৈষম্য দূর করতে পারলে প্রযুক্তি ব্যবহারের সুফল সবাই ভোগ করতে পারবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্যে অতি সহজে স্কুল ও ক্লাসের সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা জানতে পারে। বর্তমানে প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেকোনো বড় বড় সমস্যার সমাধান করতে পারে অতি সহজ এবং অল্প সময়ের মধ্যে। আধুনিক বিশ্বের প্রেক্ষাপটে শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত করার কোন বিকল্প নেই। তবে শুধু শিক্ষার মাধ্যমেই কেবল প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব নয়।

শিক্ষার পাশাপাশি প্রয়োজনীয়নে তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে শিক্ষাব্যবস্থার গুণগত মান উন্নত করতে হবে। বিশেষ করে প্রযুক্তি ব্যবহারে কর্মমূখী শিক্ষা দেওয়া উচিত। তাহলে শিক্ষার্থীদের মাঝে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। শিক্ষার প্রাথমিক লক্ষ্যই হলো শিক্ষার্থীদেরকে যুগোপযোগী জ্ঞান ও দক্ষতা প্রদান করে তাদেরকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে কর্মজীবনের জন্য প্রস্তুত করা। প্রযুক্তিগত কৌশলে শিক্ষার্থীদেরকে দক্ষ ভাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার মূলত হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার এবং নেটওয়ার্কিং সম্পর্কিত জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করাকে বোঝায়।

প্রযুক্তি ব্যবহারে শিক্ষা উপকরণ গতানুগতিক শিক্ষা উপরকণের চেয়ে অনেক বেশি সহজ ও কার্যকর। শিক্ষকগণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদেরকে সফলভাবে পাঠদান প্রদান করতে পারেন। আবার শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষ ও বইয়ের সীমানা ছাড়িয়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীর যে কোনো জ্ঞান -বিজ্ঞানের তথ্য সহজেই জানতে পারে। এতে করে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জন আরোও অনেক বেশি সহজ হয়ে উঠেছে। তাছাড়া, প্রযুক্তি নির্ভর পড়াশোনা অনেকটা বাস্তব এবং কর্মমূখী যা শিক্ষার্থীদেরকে ক্যারিয়ার জীবনে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রস্তুত করতে অনুপ্রাণিত করে।

শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অবদান অনস্বীকার্য। জীবন যাপনে সহজলভ্যতা আসার পাশাপাশি মানব সম্পদ উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। শিক্ষায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষার্থীদেরকে সহজেই সমৃদ্ধ করে তোলে। তবে শিক্ষাজীবনে প্রযুক্তির অপব্যবহার শিক্ষার্থীদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। প্রযুক্তির খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো ইন্টারনেট। বর্তমান সময়ে শিক্ষায় ইন্টারনেটের ব্যবহার ও গুরুত্ব অপরসীম।

তবে অধিকাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষার প্রয়োজন বা জ্ঞানার্জনের লক্ষ্য ব্যতীত অধিক সময় বিনা প্রয়োজনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন। কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন ব্যবহার করার ক্ষেতেও তাই ঘটে। প্রযুক্তি ব্যবহারের বিভিন্ন ভালো দিক থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগ হারানোর কারণ হয়ে যায় প্রযুক্তি। এজন্য শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করতে হবে। তাইলেই শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলবে।

লেখক, নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান (আইসিটি সেল) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন