ডার্ক মোড
Tuesday, 14 January 2025
ePaper   
Logo
ইন্টারনেট প্রযুক্তির গুরুত্ব

ইন্টারনেট প্রযুক্তির গুরুত্ব

মোঃ জাহিদুল ইসলাম

ইন্টারনেটের পুরো নাম – Inter Connected Network (ইন্টার কানেক্ট নেটওয়ার্ক)। ইন্টারনেট বা আন্তৰ্জাল হলো সারা পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত, পরস্পরের সাথে সংযুক্ত অনেকগুলো কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সমষ্টি যা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এবং যেখানে আইপি বা ইন্টারনেট প্রটোকল নামের এক ব্যবস্থার মাধ্যমে ডেটা আদান-প্রদান করা যায়। ইন্টারনেটের সঠিকভাবে কাজ করার জন্য একে নিজস্ব গ্লোবাল নেটওয়ার্কের তার কিংবা বেতার যেকোনো একটির মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে থাকতে হয়। এরপর গ্লোবাল নেটওয়ার্কে জড়িত থাকা বিভিন্ন কম্পিউটারের সাথে নিজেদের কম্পিউটার, রাউটার এবং সার্ভারের মাধ্যমে কানেক্ট হয়ে বিভিন্ন ডাটা এবং ইনফর্মেশন সংগ্রহ করে নেয়।

এভাবেই কাজ পরিচালনা করে থাকে ইন্টারনেট। এই ইন্টারনেট সেবা প্রযুক্তিতে ব্রাউজার (Browser) হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার। এই সফটওয়্যারই ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেটে তথ্য সন্ধান এবং অ্যাক্সেস করার সুযোগ করে দেয়। এটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের দ্রুত এবং নিরাপদ ব্রাউজিং অভিজ্ঞতা প্রদান করে থাকে। ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্রাউজার রয়েছে যেমন গুগল ক্রোম, মোজিলা ফায়ারফক্স, মাইক্রোসফট এজ, এবং সাফারি। ব্রাউজার প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তথ্য সহজেই ব্যবহার এবং শেয়ার করতে পারেন। এই ব্রাউজার একটি URL (Uniform Resource Locator) দিয়ে ইন্টারনেটে পৃষ্ঠা লোড করে এবং তা প্রদর্শন করে।

ব্যবহারকারী ব্রাউজারের মাধ্যমে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারেন। ইন্টারনেটর আবিষ্কার ছিল নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থার এক অত্যাধুনিক এবং অবিস্মরণীয় মাধ্যম। আবিষ্কারের পর থেকে এই যোগাযোগ মাধ্যমটি মানুষকে আরও কার্যকরভাবে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছিল। এই মাধ্যমের অবাধ তথ্যভাণ্ডার ব্যবহারের জন্য মানুষকে কোন ভৌগলিক সীমারেখা মানতে হয় না। মানুষের সঙ্গে বিশ্বকে এভাবে সংযুক্ত করার এমন মাধ্যম এর আগে কখনও সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির নতুন এই জগত যেভাবে মানুষের জীবনকে বদলে দিয়েছে যা একসময় ছিল মানুষের কল্পনাতীত। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির ফলে বিশ্বের যেসব দেশ এগিয়ে রয়েছেন তারা সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট যোগাযোগ ছাড়া একটি মুহূর্তও চলতে পারে না। সারাবিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেটের ব্যবহারের কোনো শেষ নেই। আমাদের বর্তমান জীবনের নানা সমস্যা সমাধানের প্রথম এবং প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে তথ্য। ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এবং সেটি ব্যবহার করে অনেক সমস্যার সমাধান করা যায়। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব বা www ছিল আবিষ্কারের ইতিহাসে যুগান্তকারী এক উদ্ভাবন। যার ফলে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের ক্ষেত্রে ও মানুষের বর্তমান জীবনধারায় এসেছিল বৈপ্লবিক পরিবর্তন। ব্রিটেনের এক তরুণ কম্পিউটার বিজ্ঞানী টিম বার্নাস-লি ১৯৮৯ সালে তৈরি করেন যোগাযোগের এই ইতিহাস সৃষ্টিকারী জগত। মূলত টিম বার্নাস লি চেয়েছিলেন এমন একটা মাধ্যম সৃষ্টি করতে যা বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষকে সংযুক্ত করবে। বিশ্বের জনপ্রিয় তথ্য খোঁজার সাইট বা সার্চ ইঞ্জিনের অন্যতম হলো গুগল (www.google.com)।

সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা চালু করার ঘোষণা দিয়েছে চীন। যদি এই পদ্ধতিতে ইন্টারনেট চালু করা হয় তবে বর্তমান নেটওয়ার্কের চেয়ে কয়েক গুণ দ্রুত হবে তাদের এই ইন্টারনেটর গতি। সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে- তাদের এই ইন্টারনেটের গতি দিয়ে সেকেন্ডে ১ দশমিক ২ টেরাবাইট অর্থাৎ এক সেকেন্ডে ১৫০টি সিনেমার সমপরিমাণ ফাইল স্থানান্তর করা সম্ভব হবে। গ্রাহকেরা সেকেন্ডে ১ দশমিক ২ টেরাবাইট গতি না পেলেও বর্তমান নেটওয়ার্কের চেয়ে উচ্চগতির ইন্টারনেটের সুবিধা মানুষ ভোগ করবে।

বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য, স্টক ব্যবসা—এসব ক্ষেত্রে উচ্চগতির ইন্টারনেটের অনেক তাৎপর্য আছে। তবে ইন্টারনেটের এই গতি যেন কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তবে গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছানো যায় সেজন্য তারা আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি চীনের কোম্পানি হুয়াওয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন। ইন্টারনেটের ব্যবহার আমাদের জীবনে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। প্রতিনিয়ত দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন মানুষ যেকোনো মুহূর্তে ইন্টারনেটের কারণে লাখ লাখ বইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, ইমেইল, ভিডিও কল— এসবের মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রিয়জনদের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারি। ইন্টারনেটের সাহায্যে আমরা বিশ্বের যে কোন প্রান্তের মানুষের সাথে সহজেই যোগাযোগ করতে পারি।

শিক্ষা, গবেষণা, বিনোদন, সামাজিক যোগাযোগ, ব্যবসা— সব ক্ষেত্রেই ইন্টারনেট আমাদের জ্ঞান বাড়াতে সাহায্য করে। জীবনকে আনন্দময় করার জন্য বিনোদনের একটি ভূমিকা থাকে। ইন্টারনেট বিনোদনের ক্ষেত্রে এক বিরাট ভূমিকা রাখছে। এখন ঘরে বসেই অনেক লেখকের বই, ই-বুক হিসেবে ইন্টারনেট থেকে পড়া যায়। শুধু বই নয়, খেলা, গান, চলচ্চিত্রসহ অনেক বিনোদনের উপাদান এখন ইন্টারনেটের কারণে অনেক বেশি সহজলভ্য হয়েছে। ইন্টারনেটের আবিষ্কার বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের পাশাপাশি মহাবিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানাতে খুবই ইতিবাচক একটি মাধ্যম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

ইন্টারনেটের সাহায্যে যখন কোনও ওয়েবসাইট থেকে ক্লায়েন্টের (ব্যবহারকারীর) কম্পিউটারে কোনও ডেটা ট্রান্সফার করা হয় তখন সেই প্রক্রিয়াটিকে ডাউনলোড বলা হয়। আবার যখন কোনও ডেটা ক্লায়েন্ট থেকে ওয়েবসাইটের সার্ভারে ট্রান্সফার করা হয় তখন সেই প্রক্রিয়াটিকে আপলোডিং বলা হয়। এই ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যেই আমরা বিশ্বের যে কোনো জায়গায় বড় ছবি, অডিও, ভিডিও বা মাল্টিমিডিয়া ফাইল অতি সহজে এবং দ্রুত পাঠাতে পারি। বছর দশেক আগেও যা ছিল আমাদের নিকট নিছক কল্পনার মতো। কিন্তু আজ ইনফরমেশন এবং টেকনোলজি প্রযুক্তি এটিকে বাস্তবে পরিণত করেছে এবং ইন্টারনেটের কারণে এই সব কিছু সম্ভব হয়েছে।

ইন্টারনেট একটি বিপ্লব হয়ে আমাদের জীবনধারাকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দিয়েছে। এটি আমাদের যোগাযোগ, ব্যবসা করার, তথ্য পাওয়ার পাশাপাশি বিনোদনের উপায়কে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করেছে। আমরা প্রযুক্তি দ্বারা চালিত একটি যুগে বসবাস করছি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রযুক্তির হল ইন্টারনেট। দৈনন্দিন কাজকর্ম, অফিসিয়াল কাজ, সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন নিউজ রিপোর্ট, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, অনলাইন ব্যবসা, কেনাকাটা, অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা বিষয়ে আমরা প্রযুক্তির ওপর নির্ভশীল। শিশু, তরুণ, যুবক, প্রাপ্তবয়স্ক, বৃদ্ধ সকলে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। প্রত্যেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল।

ইন্টারনেট আমাদের জীবনযাপন, কাজ এবং যোগাযোগের পদ্ধতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের জন্য ইন্টারনেট আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে আমাদের ব্যক্তিগত এবং পেশাদার জগতের অনেক কিছুই ডিজিটাল প্রযুক্তির সঙ্গে জড়িত। প্রযুক্তি একই সঙ্গে শেখার, বিনোদন এবং বিভ্রান্তির একটি বড় উৎস। প্রযুক্তির প্রভাব সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে কীভাবে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে। ইন্টারনেট নিঃসন্দেহে মানবজাতির জন্য একটি আশীর্বাদ। বর্তমানে ইন্টারনেটের ব্যবহার মানুষের জীবনে এতোটাই বেড়ে গিয়েছে যে ইন্টারনেট বন্ধ থাকাকে অনেকে নিজেদের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে থাকার সাথেও তুলনা করেন।

ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে মেসেজিং, ভিডিও ও অডিও কলিং ফিচারযুক্ত প্ল্যাটফর্মের বদৌলতে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সাথে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়াও শক্তিশালী সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে যেকোনো তথ্য থাকে এখন হাতের নাগালেই। ইন্টারনেটের যেমন ইতিবাচক দিক রয়েছে অপরদিকে এর নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। ইন্টারনেটের অপব্যবহার ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ইন্টারনেটের এই অপব্যবহারকে অনেক ক্ষেত্রে রীতিমতো মানবাধিকার লংঘন হিসেবেও গণ্য করা হয়ে থাকে। তাই ইন্টারনেট ব্যবহারের ইতিবাচক দিকগুলো বিবেচনায় আনার পাশাপাশি সচেতন হতে হবে এর অপব্যবহার গুলো পরিহার করার বিষয়ে।

লেখক, নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান (আইসিটি সেল) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন