ডার্ক মোড
Monday, 20 May 2024
ePaper   
Logo
নিয়ম না মেনে বালু উত্তোলন হুমকির মুখে ঝুঁকিপূর্ণ মনু সেতু

নিয়ম না মেনে বালু উত্তোলন হুমকির মুখে ঝুঁকিপূর্ণ মনু সেতু

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় নিয়ম ভেঙ্গে মনু নদী থেকে ইজারাদাররা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। ফলে সীমান্তবর্তী শরীফপুর ইউনিয়নে সড়ক ও জনপথ বিভাগের চাতলাপুর চেকপোস্ট-শমসেরনগর সড়কে মনু নদীর ওপর নির্মিত ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যরে চাতলা মনু সেতুটি হুমকির মুখে পড়েছে। এই সেতু দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি রফতানিকারী যানবাহন চলাচল করে। এই ব্রিজটি ক্ষতিগ্রস্থ হলে চাতলাপুর চেকপোস্ট হয়ে ভারতের সাথে দেশের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এদিকে গত বছরের ২২ জুলাই মনু নদীর বেড়িবাঁধ ও মানুষ চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ মনু ব্রিজ রক্ষার দাবিতে স্থানীয় লালারচক গ্রামের ভুক্তভোগী মানুষ এক বিশাল মানববন্ধন করে।

সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা যায়, মনু নদীর বালুমহাল প্রতি বছর মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ইজারা দেয়া হয়। নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর মালিকানাধীন প্লাটিনাম বিজনেস কনর্সটিয়াম নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে শরীফপুর ইউনিয়নে অবস্থিত মনু নদীর চাতলাঘাটটি এক বছরের জন্য শর্ত সাপেক্ষে ১ কোটি ৮ লাখ টাকা দিয়ে ইজারা নেয়। কিন্তু ইজারাদার সেতুর এক কিলোমিটারের অনেক ভেতর থেকে ৪-৫টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন।

অথচ মনু নদীর বালু উত্তোলনের জন্য নীতিমালায় উল্লেখ ছিলো, নদীর উপর নির্মিত ব্রিজের উভয় পাশে প্রায় ১ কিলোমিটারের মধ্যে কোন বালু উত্তোলন করা যাবে না। কিন্তু ইজারাদাররা সেই শর্ত ভঙ্গ করে একের পর এক ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে ঘাটে মজুদ করে রাখেন। এমনকি অবাধে ১০ চাকার ডাম্প ওভারলোড ট্রাক দিয়ে প্রতিদিন এই ঘাট থেকে বালু পরিবহন করে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। এতে নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধসহ সড়ক বিভাগের জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মেহেদী হাসান গত বছরের জুলাই মাসে কয়েকবার অভিযান চালিয়ে ব্রিজের পাশ থেকে অবৈধ ড্রেজার মেশিনগুলো সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন।

স্থানীয়রা জানান, মনু নদী উপরের ব্রিজ দিয়ে লালারচক গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ ও গাড়ী প্রতিদিন চলাচল করেন। এই নদীর ব্রিজের পাশ থেকে প্রতিদিন ৪-৫ টি মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করায় ব্রিজ ও বেড়িবাঁধ ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে।

বালু ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের সহযোগী মোঃ জুয়েল মিয়া বলেন, আমরা নিয়ম মেনে বালু উত্তোলন করছি। জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে চাতলাঘাটে মোট ৩৭ একর জায়গায় বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। ওই ব্রিজটিও এই জায়গার মধ্যে পড়েছে। কিন্ত আমরা ব্রিজ রক্ষা করে ব্রিজের ৫০০ মিটার দূর থেকে বালু তুলতেছি।

স্থানীয় শরিফপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, গত জুলাই মাসে ব্রিজের নিচ থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অভিযোগ দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে কুলাউড়া উপজেলা প্রশাসন সরেজমিনে এসে ইজারাদারদের অবৈধ ড্রেজার মেশিন সরানোর নির্দেশনা দেন। ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ রক্ষায় ইজারাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।

কুলাউড়া উপজেলা সহকারী (ভূমি) মোঃ মেহেদী হাসান জানান, স্থানীয় এলাকাবাসীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর দুই বার সরেজমিনে পরিদর্শন করে তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রেরণ করি। তখন ওই ইজারাদারকে নির্দেশনা দেয়ার পর অবৈধ ড্রেজার মেশিন তারা সরিয়েছিল। এখন যদি আবার বালু উত্তোলন করতে দেখা যায় তাহলে প্রশাসনিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কায়ছার হামিদ বলেন, আমাদের সড়ক বিভাগের ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজটি সরেজমিনে দেখে পরবর্তী প্রদক্ষেপ নেয়া হবে।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান মামুন বলেন, কমপক্ষে ব্রিজের ৫০০ মিটার দূর থেকে বালু উত্তোলন করতে হবে। এখন যদি নিয়ম না মেনে বালু উত্তোলন করা হয় তাহলে ইজারাদারের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন