ডার্ক মোড
Tuesday, 17 September 2024
ePaper   
Logo
তথ্য ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ক্যাশ সার্ভারের ভূমিকা

তথ্য ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ক্যাশ সার্ভারের ভূমিকা

মোঃ জাহিদুল ইসলাম

ক্যাশ সার্ভার হল গুগল, ফেসবুক কিংবা ইউটিউবের মতো সাইটগুলোর প্রধান সার্ভারের সঙ্গে সংযুক্ত সহযোগী নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা বা স্থানীয় ডেটা সংরক্ষণ ব্যবস্থা। উদাহরণ স্বরূপ-কোন এক দেশ হতে একজন ইন্টারনেট ব্যাবহারকারী ইউটিউবে একটি ভিডিও দেখলো।

ভিডিওটি দেখার ফলে এই ভিডিওর বিপরীতে ব্যান্ডউইডথ এল আমেরিকা অথবা ইউরোপ থেকে। একবার দেখার পর ভিডিওটির বিপরীতে ব্যান্ডউইডথ ইন্টারনেট ব্যাবহারকারীর ইন্টারনেট সেবাদাতার সার্ভারে জমা হবে। এরপর যতবার সেই দেশের গ্রাহক ওই ভিডিও দেখবেন সেক্ষেত্রে তা ওই সার্ভার থেকে দেখানো হবে।

তখন আবার নতুন করে সেই ভিডিওর বিপরীতে ব্যান্ডউইডথ আমেরিকা অথবা ইউরোপ থেকে আনতে হবে না। এই ক্যাশ সার্ভার বসানোর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো মানুষের কাছে জনপ্রিয় কনটেন্টয়ের বিপরীতে বেশি গতিতে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া যায়। এর মূল কারণ হলো কনটেন্টয়ের বিপরীতে ব্যান্ডউইডথ স্থানীয় ক্যাশ সার্ভারে জমা থাকে। বারবার ব্যান্ডউইডথ পরিবহন করতে হয় না বলে ইন্টারনেট সেবাদাতার খরচও কম লাগে।

এক কথায় ক্যাশ সার্ভার যতো কাছাকাছি থাকবে গ্রাহকরা ততো দ্রুত সার্ভিস পাবে। ক্যাশ সার্ভার মূলত মূল সার্ভার ও ব্যবহারকারীদের মধ্যে দূরত্ব কমানোর কাজ করে। সেইসাথে সার্ভার ও ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের চাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। অনেক ভিজিটর আছেন যাদের প্রায় সময় একটি ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে হয়। তখন তাদের জন্য বার বার বেশি সময় ধরে কোন ওয়েবসাইট লোডিং হওয়া অনেক সময় বিরক্তির কারন হয়ে দাঁড়ায়। কোন ওয়েবসাইট এর লোডিং টাইম (সময়) কমাতে ক্যাশ সিস্টেমের ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।

ক্যাশ সার্ভারে স্থানীয়ভাবে ব্যবহৃত ওয়েবপেজ ও অন্যান্য ইন্টারনেট কনটেন্ট সেভ করা থাকে। অস্থায়ী স্টোরেজ বা ক্যাশ থেকে আগের ব্যবহৃত তথ্য প্রদানের নির্দেশ দিয়ে ক্যাশ সার্ভার ইন্টারনেট ডেটার গতি বাড়াতে এবং একই সঙ্গে ব্যান্ডউইথের চাহিদা কমাতে ভূমিকা রাখে। বর্তমানে গ্রাহকরা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন গুগল, ইউটিউব কিংবা ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো।

এগুলোর মূল সার্ভার রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। তাই কোন স্থানের ক্যাশ সার্ভার বন্ধ থাকলে গুগল, ইউটিউব, ফেসবুক ব্যবহার করার সময় সরাসরি আমেরিকার সেই সার্ভার থেকে ডেটা পেতে হয়। এর ফলে সেটার গতি অনেক কমে যায়।এই সমস্যা সমাধানে ইউটিউব, ফেসবুকসহ অধিকাংশ প্ল্যাটফর্মই ক্যাশিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসছে।এজন্য ইন্টারনেটের ওই প্ল্যাটফর্মগুলো বিভিন্ন আইএসপি অর্থাৎ ইন্টারনেট সেবা দানকারী সংস্থাগুলোকে ক্যাশ সার্ভার দিয়ে থাকে। এই ক্যাশ সার্ভারের কাজ হল প্রধান সার্ভারের সাথে সার্বক্ষণিক যুক্ত থেকে প্রধান সার্ভারের তথ্য ক্যাশ সার্ভারে নিয়ে আসা।

যখন কোন ইউজার ইউটিউব কিংবা ফেসবুকের মতো সেবা ব্যবহার করবে তখন সেটি আর আমেরিকার সার্ভার খুঁজবে না। বরং কাছাকাছি যে স্থানীয় সার্ভার আছে সেটা থেকেই ডেটা নিয়ে গ্রাহককে প্রদর্শন করবে। কারণ ওই কন্টেন্ট স্থানীয় ইন্টারনেট সেবাদাতার ক্যাশ সার্ভারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা আছে।পরবর্তীতে একই কনটেন্ট যদি ওই স্থানটির কোন গ্রাহক সার্চ করে তখন স্থানীয় সার্ভার থেকে অল্প ডেটা খরচ করে ওই তথ্য খুব দ্রুত পাওয়া যাবে।

ফলে নতুন করে আমেরিকা বা ইউরোপ থেকে পুনরায় পুরো নেটওয়ার্ক ব্যবহারের প্রয়োজন হবে না। ক্যাশ সার্ভার মূলত মূল সার্ভার ও ব্যবহারকারীদের মধ্যে দূরত্ব কমানোর কাজ করে। সেইসাথে সার্ভার ও ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের চাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আমাদের দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা যে পরিমাণ ইন্টারনেট ট্রাফিক তৈরি করেন তার শতকরা ৮০-৮৫% পূরণ করে স্থানীয় ক্যাশ সার্ভারগুলো। কয়েক দশক আগে ইন্টারনেট খুব ধীরগতির ছিল।

কারণ তখন স্থানীয় পর্যায়ে ক্যাশ সার্ভার ছিল না। সব ধরনের ট্রাফিক আসত যুক্তরাষ্ট্র থেকে।পরবর্তীতে গুগল, ইউটিউব, ফেসবুকের মতো টেক জায়ান্টগুলো গ্রাহকদের দ্রুত গতির সেবা দেয়ার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্যাশ সার্ভার বসাতে থাকে। পরবর্তীতে তা স্থানীয় আইএসপির কাছে চলে আসে। ফলে ব্যান্ডউইথের খরচও অনেকটা কমে যায় এবং এর পাশাপাশি ইন্টারনেটের গতিও বেড়ে যায়। যখন কোন স্থানের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যা যদি অনেক বেশি হয় তখন অল্প সময়ের মধ্যে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়।

এক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে ক্যাশ সার্ভার ব্যবস্থার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে অধিক পরিমাণ ব্যবহারকারীদের অর্থাৎ ইউজারদের নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসা যায়। এছাড়াও ক্যাশ ব্যবহার করে ইউজারের এক্টিভিটি ট্র্যাক করা সম্ভব। ক্যাশ সার্ভার হলো তথ্য সংরক্ষণ বা ধারণ করার নির্দিষ্ট নেটওয়ার্ক সার্ভার বা সেবা। ক্যাশ সার্ভার কাজ না করলে সম্পূর্ণ ইন্টারনেট ট্রাফিক আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পরে। ক্যাশ সার্ভার থেকে ডাটা ব্যাবহারে যেমন সুবিধা আছে ঠিক তেমনি অসুবিধাও আছে। তবে সব দিক বিবেচনা করলে ক্যাশ ডাটা আমাদের অনলাইন কাজের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

যা আমাদের প্রতিনিয়ত কাজ সমুহকে আরো বেশি সহজ করে। ক্যাশ ডাটা স্টোর করে রেখে তাকে পুনরায় রিস্টোর করা, ফাস্ট লোডিং করা বা লোডিংয়ের সময়কে কমিয়ে আনে। ক্যাশ যেহেতু অনলাইন সার্ভিসের একটি অংশ তাই এটি মূলত অনলাইন বা ইন্টারনেট এর সাথে মিলিত ভাবে কাজ করে। ক্যাশ ইন্টারনেট ব্যবহার এর পারফর্মেন্সকে আরোও উন্নত করে। ক্যাশ ব্যবহার এর মাধ্যমে যেকোনো ওয়েবসাইটের লোডিং সময় কমানো যায়।

এছাড়াও ভিজিটর সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সঞ্চয় করা যায়।ক্যাশ ব্যাবহারের ফলে ইন্টারনেট বা হোস্টিং এর ব্যান্ডউইথ সাশ্রয় হয়।ক্যাশ ব্যাবহার করে ইউজারের সকল এক্টিভিটি ট্র্যাক করা যায়। এতে পরবর্তীতে ইউজারের কাজ আরো সহজতর করা সম্ভব হয়। অপরদিকে ক্যাশ ব্যবহারের ফলে ওয়েবসাইটের লাইভ আপডেট পাওয়া যায় না। কিছু কিছু সময় ওয়েবসাইট ক্যাশ ডাটা থেকে ব্রাউজ হবার কারনে আপডেট করা বিষয় গুলো ইনস্ট্যান্ট ওয়েবসাইট এ দেখা যায় না। এছাড়াও ক্যাশ ব্যবহারের ফলে হার্ড ড্রাইভ এর ফ্রি স্পেস পূর্ণ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

লেখক, নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান (আইসিটি সেল) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন