ডার্ক মোড
Friday, 03 May 2024
ePaper   
Logo
ঠাকুরগাঁওয়ে বরাদ্দের আগেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪২টি ঘর বিক্রি

ঠাকুরগাঁওয়ে বরাদ্দের আগেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪২টি ঘর বিক্রি

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁও সদরে গৃহ ও ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪‌২টি ঘর বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী খোক‌নের বিরু‌দ্ধে।

জানা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় চতুর্থ পর্যায়ের সদ‌রের জগন্নাথপুর ইউনিয়নে কালিতলা বাজারের পা‌শে নি‌র্মিত হয় ৫৪‌টি ঘর। প‌রে ‌পর্যায়ক্রমে ১২টি ঘর ভূ‌মিহীন‌দের মা‌ঝে বরাদ্দ দেওয়া হ‌লেও ‌৪২টি ঘর পড়েছিল। নিয়মানুযায়ী এসব ঘর দেখা‌শোনা ও রক্ষণাবেক্ষ‌ণের দা‌য়িত্ব সং‌শ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূ‌মি সহকারীর।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রকৃত ভূমিহীনদের না দিয়ে ও সরকারি নিয়ম তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ঘর বিক্রি করেছেন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী খোক‌ন। তার এই কাজে সহযোগিতা করেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিস সহকারী হালিম ও স্থানীয় সামাদ নামে এক ব্যক্তি।

খোকেনের মাধ্যমে ঘরে উঠেছেন শাহানাজ পারভীন ও তার পরিবার। শাহানাজ বলেন, খোকন স্যার আমাদের ঘরে তুলে দিয়েছেন। আমাদের নামে ঘর বরাদ্দ হয়েছিল না।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বাসিন্দা ঠরিজা বেগম ও তার স্বামী আখতারুল ইসলাম আগে চট্টগ্রামে থাকতেন। কিন্তু সামাদের মাধ্যমে পরিচয় হয়ে তারা ঠাকুরগাঁও গুচ্ছগ্রামে চলে আসেন। গত একমাস আগে একদিন ভোর রাতে তাদেরকে এই গুচ্ছগ্রামের একটি ঘরে তুলে দেন এবং ওই রুমে যে ব্যক্তি ছিলেন তাকে ভোর রাতেই সামাদ এবং তার সহযোগীরা বের করে দেন।

ঠরিজা বেগম বলেন, গত একমাস আগে রাতের আধারে আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের এই ঘরে উঠি। ঘরে উঠিয়ে দেন খোকনের সহযোগী সামাদ। তিনি আরও বলেন, আগে আমরা চট্টগ্রামে থাকতাম। আমার স্বামীকে ঘর দেওয়ার কথা বলে খোকন ও সামাদ এখানে নিয়ে আসে। এখন গুচ্ছ গ্রামে বসবাস করছি।

ওই গুচ্ছগ্রামে পাশের এলাকার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সামাদ আমার কাছে ১০ হাজার টাকা চাইছিল। টাকা দিতে পারিনি বলে ঘর পাইনি। যারা টাকা দিচ্ছে তারাই ঘর পাচ্ছে।

গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা চন্দনা বলেন, সামাদ আমার কাছে টাকা চাইতে আসছিল। আমার কাছে টাকা নেই। তাই দিতে পারিনি। পরে সামাদ আমার ঘরে তালা লাগিয়ে দেই। তবুও আমার কাছ থেকে ১০০০ টাকা নিয়ে গেছে। এই টাকাটা নাকি সে খোকেনকে দেবে। খোকেন নাকি সরাসরি টাকা চায় না।

এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা রিয়াজ উদ্দীন রহমান বলেন, আমি যুবলীগের সেক্রেটারি এবং যুবলীগের নেতাদের নতুন ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলছিলাম। তারা আমাকে ঘরে উঠিয়ে দিয়েছে। ঘরের কোনো কাগজ আমার কাছে নেই।

জগনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা সাইদুল বলেন, মানিক মিয়া নামের এক জন এই গুচ্ছগ্রাম একটি ঘর পায়। তিনি এই ঘরে কখনোই থাকেন না। এই ঘরটি তিনি বিক্রি করবেন। বেশ কিছু মানুষের কাছে বলেছেন। আমার কাছে এসেছিল। ঘরটির ন্যায্য দাম পাইলে তিনি বিক্রি করে দিবেন।

গুচ্ছগ্রামের বাসবাসকারী ত্রিপলী রানী বলেন, সামাদ রাত ২টার দিকে লোকজন নিয়ে এসে বৃষ্টির মধ্যে আমাদের ঘর থেকে বের করে দেয়। তারা নাকি ঘরটা অন্য কারো কাছে বিক্রি করছে। এখন তার লোকজনকে নিয়ে সেই বৃদ্ধ মহিলা এবং তার স্বামীকে ঘর থেকে বের করে দেয়। বর্তমানে তারা গুচ্ছগ্রামের একটি রুমের বারান্দায় বসবাস করতেছেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য দুলাল হোসেন বলেন, এই গুচ্ছ গ্রামে ৫৪টি ঘর আছে। তার মধ্যে ১০ থেকে ১২টি ঘর ভূমিহীনদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাকি ৪২টি ঘর খোকন, সামাদ ও হালিমের নেতৃত্বে বিক্রি করা হচ্ছে। তারা নিজেদের খেয়াল খুশিমতো সরকারি এই ঘরগুলো বিক্রি করে দিচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে জগন্নাথপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী খোকেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে। এটা অনেকদিন আগের কথা। এ বিষয়ে অনেক কিছু হয়েছে। এখন আমি কিছু বলতে চাই না।

ভূমি অফিস সহকারী হালিম বলেন, আমি ঘর বিক্রির সঙ্গে জড়িত নই।

ঘর বিক্রির ঘটনাটি খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন। তিনি বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে জানতাম না। আমাকে কেউ এ বিষয়ে বলেনি। যেহেতু আপনি বলেছেন, আমি এটি খতিয়ে দেখব।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন