ডার্ক মোড
Sunday, 28 April 2024
ePaper   
Logo
জামিন পেয়েই বাদীকে হুমকি অ্যাসরোটেক্সের এমডির

জামিন পেয়েই বাদীকে হুমকি অ্যাসরোটেক্সের এমডির

আদালত প্রতিবেদক

জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় অ্যাসরোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুল ইসলাম ও পরিচালক আমির হোসাইন ঢাকার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন।

গত ১৯ মার্চ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রেজাউল করিম ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। সেই সঙ্গে আসামিরা যেন বাদীকে ভয়ভীতি না দেখায় সে বিষয়ে আদেশ দেন।

শনিবার (২৩ মার্চ) এ মামলার বাদী আমিনুল ইসলাম জানান, জামিন পাওয়ার পর আসামিরা বিভিন্নভাবে চলাফেরার পথে বাধা সৃষ্টি করছে এবং মামলা তুল নিতে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া আসামিদের জামিনের ৫ দিন পার হলেও তিনি এখনও জামিন আদেশের কাগজ হাতে পাননি বলে জানান।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ‘মেসার্স ভাই ভাই ট্রেডার্সের কর্ণধার আমিনুল ইসলাম একজন পাথর ব্যবসায়ী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বেশকিছু মেগা প্রকল্পে পাথর সরবরাহ করে আসছেন। আর আসাদুল ইসলাম ও আমির হোসাইন দুজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। ২০১৮ সালের জুন মাসে তিনজন যৌথভাবে বিদেশ থেকে পাথর আমদানির ব্যবসা শুরু করেন। চুক্তি অনুযায়ী কে কতটুকু লভ্যাংশ পাবেন সেটাও লিখিত করা হয়। ব্যবসা শুরু করতে ভুক্তভোগী আমিনুল ইসলাম প্রথমে ১২ কোটি তিন লাখ এবং পরবর্তী সময়ে আরো দুই কোটি পৃথক দুটি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন। এ সময় আরো সাতটি চেকের পাতা তার কাছ থেকে নেওয়া হয়। দীর্ঘদিন পাথর আমদানি না করা হলে আমিনুল ইসলাম তাদের কাছে টাকা ও চেক ফেরত চান।

কিন্তু অ্যাসরোটেক্স গ্রুপের দুই কর্মকর্তা তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। তাদের আচরণে সন্দেহ হলে আমিনুল ইসলাম ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, যৌথ অ্যাকাউন্ট হলেও তার অজান্তেই ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে নেওয়া হয়েছে। পরে ভুক্তভোগী আমিনুল ইসলাম দীর্ঘদিন তাদের কাছে ধরনা দিলেও টাকা ফেরত পাননি। সবশেষ তিনি আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালত মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিকে। দীর্ঘ তদন্তের পর গত বছরের শেষদিকে সিআইডি প্রতিবেদন দাখিল করে।

এরপর গত বছরের শেষ দিকে মামলার তদন্ত শেষে ‘অ্যাসরোটেক্স গ্রুপে’র এমডি ও পরিচালকের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় সিআইডি। তাতে বলা হয়, পাথর আমদানির ব্যবসায়িক পার্টনার হয়ে ভুক্তভোগী আমিনুল ইসলাম দুই দফায় প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে অ্যাসরোটেক্স গ্রুপের অ্যাকাউন্টে জমা দেন। যা যৌথ অ্যাকাউন্ট হলেও প্রতিষ্ঠানের এমডি ও পরিচালক জালিয়াতি মাধ্যমে টাকাগুলো তুলে আত্মসাৎ করেন; সিআইডির ফরেনসিকে এমন প্রমাণ মিলেছে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী আমিনুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন প্রজেক্টে পাথর সাপ্লাই দিয়ে আসছিলাম। অ্যাসরোটেক্স গ্রুপের এমডি ও পরিচালকের সঙ্গে ব্যবসায় জড়িত হওয়ার পর তারা আমার বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে। বর্তমানে আর্থিক সংকটে পরিবার নিয়ে হতাশায় ভুগছি। আমিনুল বলেন, ‘ওই দুজনের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছি তা প্রত্যাহার করে নিতে আমাকে অনবরত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি গত ২৯ ফেব্রুয়ারি আমি হাইকোর্টে গেলে, সেখানে আমার ওপর হামলা করে আসামি আসাদুল ইসলাম। লোকজন নিয়ে আমার ওপর হামলা করে। মারধরের শিকার হয়ে একজন আইনজীবীর রুমে গিয়ে নিজেকে আত্মরক্ষা করি। পরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি।

এ বিষয়ে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক। আদালত পবিত্র অঙ্গন। এখানে মানুষ বিচার চাইতে আসে। আদালতে এসে যদি মানুষ হেনস্থার শিকার হয় তাহলে খুবই নিন্দনীয়।

উল্লেখ্য, গত ৪ মার্চ হাইকোর্ট তাদের ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। পরে ১০ মার্চ বিচারপতি শেখ জাকির হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাদের আগাম জামিন বাতিল করেন। সেই সঙ্গে আসামিদের ২ সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। এরপর গত ১৯ মার্চ ঢাকার সিএমএম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন তারা।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন