ডার্ক মোড
Friday, 03 May 2024
ePaper   
Logo
জাতীয় সংসদের এক মেয়াদে একই আসনে তিনদফা নির্বাচন দীর্ঘ ৫০ বছর পর নৌকার দখলে বগুড়া সদর

জাতীয় সংসদের এক মেয়াদে একই আসনে তিনদফা নির্বাচন দীর্ঘ ৫০ বছর পর নৌকার দখলে বগুড়া সদর

বগুড়া প্রতিনিধি

বাংলাদেশ সংসদ নির্বাচনের ইতিহাসে বিএনপির রাজনৈতিক অদূরদর্শিতায় এক মেয়াদে একই আসনে তিনবার নির্বাচন ও উপ-নির্বাচনের ঘটনা ঘটে গেল গতকাল। এমন নির্বাচন রাজনেতিক নেতৃবৃন্দের হৃদয়ে গাঁথা থাকবে অনন্তকাল। বিএনপির হাইকমান্ডের এমন ভুলে সরকারকে করতে হলো এমন ঐতিহাসিক নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনে সুদীর্ঘ ৫০ বছর পর বগুড়া সদর আসন থেকে উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনেতিক দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীক পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।

স্বাধীনতার পরে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম সিরাজুল ইসলাম সুরুজের পর ২০২৩ সালের উপ-নির্বাচনে এই দলের প্রার্থী রাগেবুল আহসান রিপু নৌকার বিজয় লাভ করেন। ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চের ওই নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৩ আসনে জয়লাভ করেছিল।

পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে মেজর জিয়া গঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করার পর ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২০৭ আসনে জয়লাভ করে। ওই নির্বাচনে বগুড়ার এই আসন থেকে বিএনপি’র প্রার্থী আইনজীবী ওয়াজেদ হোসেন তরফদার বিজয়ী হন।

১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জেনারেল এরশাদ জাতীয় পার্টি গঠন করলে একই বছরের ৭ মে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করেন। ওই নির্বাচনে ১৫৩ আসন পেয়ে সরকার গঠন করে দলটি। এই নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী আব্দুর রহমান ফকির বগুড়া সদর আসন থেকে জয়লাভ করেন।

১৯৮৮ সালের ৩ মার্চে বেশিরভাগ দলের বয়কটের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যবসায়ী সাইফুর রহমান ভান্ডারী বগুড়ার সদরে জয়লাভ করেন।
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ১৪০ আসনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে।সেই নির্বাচনেও বগুড়া সদর আসন থেকে আইনজীবী মজিবর রহমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৮৮ সালের নির্বাচনের মতো ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনও ছিল বয়কটের নির্বাচন। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি একতরফা নির্বাচন করে ২৭৮ আসনে জয়লাভ করে। সেই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল মাত্র ২১ শতাংশ। এই নির্বাচনেও একই প্রার্থী মজিবর রহমান বগুড়ার এই আসন থেকে জয়লাভ করেন। এরপর ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৪৬ আসনে জয়লাভ করে জোটগতভাবে সরকার গঠন করতে সমর্থ হয়। বগুড়া-৬ আসনে খালেদা জিয়া সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও পরে তিনি আসনটি ছেড়ে দেন।

পরবর্তীতে উপ-নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী এড. জহুরুল ইসলাম জয়লাভ করেন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ১৯৩ আসন পেয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি। ৬২ আসন পেয়ে প্রধান বিরোধী দল হয় আওয়ামী লীগ। বগুড়ার এই আসনে আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ২৩০ আসনসহ মহাজোট ২৬৩ পেয়ে সরকার গঠন করে। আর বিএনপি’র নেতৃত্বে চার দলীয় জোট ৩৩ আসন নিয়ে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে। বগুড়ার এই আসন থেকে খালেদা জিয়া নির্বাচিত হলেও তিনি আসনটি ছেড়ে দেন।

২০০৯ সালের উপ-নির্বাচনে সাবেক স্পিকার বিএনপি’র প্রার্থী পঞ্চগড়ের ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বগুড়া সদরবাসীর কাছ থেকে ধানের শীষ প্রতিকে ভোট নিয়ে নির্বাচিত হয়ে সংসদে যান। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ২৩৪ আসনে জয়লাভ করে আবারও সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি ৩৪ আসন নিয়ে প্রধান বিরোধী দল হলেও বিএনপি এই নির্বাচন বয়কট করে। বগুড়া-৬ আসন থেকে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী নুরুল ইসলাম ওমর বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০২ আসনে নিরঙ্কুশ জয়লাভ করে তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। জাতীয় পার্টি ২৬ আসন পেয়ে প্রধান বিরোধী দল হয়। আর আগের বারের নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি এই নির্বাচনে সাতটি আসনে জয়লাভ করতে সমর্থ হয়, যার একটি বগুড়া-৬। এই নির্বাচনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

তবে তিনি নিজ এলাকা ঠাকুরগাঁও-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রমেশ চন্দ্র সেনের কাছে প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হলেও বগুড়া সদর আসন থেকে ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে জয়লাভ করেন। তবে দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি শপথ না নিলে আসনটি শূণ্য হয়ে যায়। পরে এই আসনের উপ-নির্বাচনে বগুড়ার শেরপুর এলাকার সাবেক বিএনপি দলীয় এমপি জিএম সিরাজ ধানের শীষে জয়ী হয়ে সংসদে যান।

দীর্ঘ চার বছর সংসদে এই এলাকার মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে দলীয় সিদ্ধান্তে বিএনপি’র ছয় সংসদ সদস্য গত বছরের ১১ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন। তাদের পদত্যাগে বগুড়া সদর আসনটিও শূণ্য হয়ে যায়। ফলে একই মেয়াদে তৃতীয়বারের মতো আসনটিতে নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। আর এতেই বাজিমাত করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু। মাত্র ১১ মাসের জন্য তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন