
সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেওয়া ভোটারের নৈতিক দায়িত্ব
এহসান বিন মুজাহির
জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার জন্য নির্বাচন অন্যতম একটি মাধ্যম। নির্বাচনে জনগণের ভোটের মাধ্যমেই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন। জনপ্রতিনিধিরা শুধু ভোটদাতার সঙ্গে নয়, পুরো জাতির সঙ্গেই সম্পৃক্ত। জনগণের ন্যায্য অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করতে আদর্শবান, সৎ ও খোদাভীরুর হাতে ক্ষমতা অর্পণ করার লক্ষ্যে স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা প্রত্যেক ভোটারের নৈতিক দায়িত্ব। কোনো নির্বাচনী এলাকায় ভালো, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি প্রার্থী হলে তাকে ভোট না দিয়ে বিরত থাকা এবং অসৎ ও অযোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করা ধর্মীয় দৃষ্টিতে গুরুতর অপরাধ।
সৎ প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও সৎ ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রার্থীকেই ভোট দেয়া নৈতিক দায়িত্ব। কারো ভোটের কারণে যদি কোনো সৎ প্রার্থী নির্বাচিত হন, এতে পরবর্তীকালে তিনি যা যা ভালো কাজ করবেন তার সাওয়াব ভোটদাতাও পাবেন। আর যদি কারো একটি ভোটের কারণে রাষ্ট্রের ক্ষমতা কোনো পাপীষ্ঠের হাতে চলে যায়, তার কারণে ইসলাম হয় ভূলুণ্ঠিত, জনগণ অধিকার থেকে হয় বঞ্চিত, তাহলে ওই ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করার কারণে পরকালে মহান আল্লাহর কাছে ভোটদাতাকে জবাবদিহি করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, ভোট বিশেষ একটি আমানত। ভোটের ব্যাপারটি শুধুমাত্র পার্থিব নয়; পরকালেও এ ব্যাপারে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
ভোট সাধারণ কোনো ব্যাপার নয়। ভোট দেয়া মানে সাক্ষ্য প্রদান ও সত্যায়ন করা। কাউকে ভোট দেওয়ার অর্থ হলো তার ব্যাপারে এই মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করা যে, তিনি সৎ ও যোগ্য। ইসলাম ও দেশের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা এবং জনগণের অধিকার আদায়ে তিনিই সবচেয়ে উপযুক্ত। প্রার্থী সম্পর্কে জানা-শোনার পরেও অসৎ ব্যক্তিকে ভোট বা সাক্ষ্য দেওয়ার কারণে নির্বাচিত হওয়ার পরবর্তী সময়ে যত অসৎ কর্মকাণ্ড সম্পাদন করবে সেই পাপের অংশে ভোটাররাও শরিক হবে। পবিত্র কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ এরশাদ করেন, ‘যে লোক সৎকাজের জন্য কোনো সাক্ষ্য দেবে, তা থেকে সেও একটি অংশ পাবে। আর যে লোক মন্দ কাজের জন্য সুপারিশ করবে, সে তার পাপের একটি অংশ পাবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত-৮৫)। কোরআনুল কারিমে আরও এরশাদ হয়েছ, ‘হে ঈমানদারগণ!
তোমরা ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকো এবং ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান করো, তাতে তোমাদের নিজের কিংবা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তদাপিও।’ (সুরা নিসা, আয়াত-১৩৫)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরও এরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে ন্যায় সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে অটল থাকবে এবং কোনো সম্প্রদায়ের আক্রোশের কারণে কখনো ন্যায়বিচার পরিত্যাগ করো না।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত-৮)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কালামে পাকে আরো এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে, যাবতীয় আমানত তার উপযুক্ত লোকদের নিকট অর্পণ করো।’ (সুরা নিসা, আয়াত-৫৮৩)। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ!
তোমরা ইনসাফের সঙ্গে আল্লাহর জন্য সাক্ষি হয়ে দাঁড়াও।’ (সুরা নিসা আয়াত-১৩৫)। কোরআনে আরও এরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা জেনেশুনে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সাথে ওয়াদা ভঙ্গ করো না এবং নিজেদের আমানতের খেয়ানত করো না। (সুরা আনফাল, আয়াত-২৭)। যোগ্যতার মানদণ্ডে প্রার্থী হবার যোগ্য নয়, ফাসিক, অসৎ ব্যক্তি যিনি দলীয়ভাবে লবিং অথবা আর্থিকভাবে প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচনে পদপ্রার্থী হয়েছেন এমন প্রতিদ্বন্দ্বিকারী ব্যক্তিকে ভোট দেওয়া ইসলাম সমর্থন করে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান থেকে বিরত থাকো।’ (সুরা হজ্ব, আয়াত- ৩০)। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতকে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করা থেকে সতর্ক করেছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সাবধান! মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া সর্বাপেক্ষা বড় গুনাহ। হজরত আয়মান বিন আকরাম (রা.) বলেন, একদিন নবীজি খুতবায় দাঁড়িয়ে বললেন, ‘হে লোক সকল! মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া আর আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা একই রকম’। (তিরমিযি, হাদিস নং-২২৯৯)। হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একবার কবিরা গোনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি উত্তরে বললেন, ‘আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা, মাতাপিতার অবাধ্য হওয়া, মানুষ হত্যা করা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।’ (বুখারি, হাদিস নং-২৫১০)।
বর্তমানে নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি ও বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে অনেক প্রার্থী ভোট সংগ্রহ করেন, যা ইসলাম সমর্থন করে না। যেসব পদ প্রার্থীরা ভোটারদের আপ্যায়নের নামে বিভিন্নভাবে ঘুষ দিয়ে নিজেদের পক্ষে ভোট সংগ্রহ করে ঘুষতন্ত্র চালু করেছেন সেটা ইসলামের দৃষ্টিতে অপরাধ। আর যেসব ভোটারগণ প্রার্থীদের যোগ্যতা যাচাই-বাছাই না করে স্বজনপ্রীতিমূলক, সাময়িক সম্পর্ক, সস্তা প্রতিশ্রুতি ও ঘুষ খেয়ে ভোট প্রদান করবেন, তারা আমানতের খেয়ানত করার কারণে পরকালে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। তাই সৎ, যোগ্য ও ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রার্থীকে ভোট দেওয়া ভোটারদের নৈতিক দায়িত্ব।
লেখক: সাংবাদিক, লেখক প্রিন্সিপাল, শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, মৌলভীবাজার ও কোষাধ্যক্ষ শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাব, মৌলভীবাজার।
Comment / Reply From
You May Also Like
Latest News
Vote / Poll
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা বন্ধ করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগ যথেষ্ট বলে মনে করেন কি?